প্রতিবেদন: তিনি শীঘ্রই বাংলাদেশে ফিরবেন। দিল্লির ‘অজ্ঞাতবাস’ থেকে এই বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের প্রতি তাঁর সতর্কবার্তা, মৌলবাদের দ্বারা চালিত হবেন না। পদত্যাগ করে ভারতে এসে যে বার্তা তিনি কয়েকদিন আগে দিয়েছিলেন, একান্ত কথাবার্তায় তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, যাবতীয় গোলমালে নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার ৩ দিন পরেও এখনও কাজে যোগ দেননি বাংলাদেশের অধিকাংশ পুলিশকর্মীই। বাংলাদেশ কার্যত পুলিশশূন্য। কাজে যেতে চাইছেন না তাঁদের প্রায় কেউই। নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে অনড় তাঁরা। কর্তাব্যক্তিদের হাজারো আশ্বাস-নির্দেশ-অনুরোধ সত্ত্বেও কোনও কাজ হচ্ছে না। অগত্যা তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখোয়াত হোসেন রবিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যাঁরা এখনও কাজে যোগ দেননি তাঁদের জন্য শেষ সময় সামনের বৃহস্পতিবার। সেদিনের মধ্যে যাঁরা কাজে যোগ দেবেন না, ধরে নেওয়া হবে তাঁরা চাকরি করতে ইচ্ছুক নন। দায়িত্ব নেওয়ার পরে এদিনই প্রথম সচিবালয়ে এলেন সাখোয়াত। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহঃ ইউনুস তীব্র নিন্দা করেছেন সংখ্যালঘুদের উপর হামলার। তাঁর মন্তব্য, এটা জঘন্য অপরাধ। তাঁর প্রশ্ন, সংখ্যালঘু হিন্দুরা কি আমাদের ভাই নয়? বিক্ষোভ এবং হিংসাত্মক কার্যকলাপের ক্ষতি থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য তরুণ সমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। লক্ষণীয়, সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্র ও শনিবার দু’দিনই উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার শাহবাগ। বিভিন্ন জেলাতেও পথে নামে হাজারো জনতা। আওয়ামি লিগের কর্মী-সমর্থকরাও দেশেজুড়ে প্রতিবাদ-মিছিল করেন।
আরও পড়ুন-লক্ষ্য সংসদের শীতকালীন অধিবেশন, ধনকড়কে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব, প্রস্তুতি এগিয়ে রাখছেন এককাট্টা বিরোধীরা
অন্যদিকে আন্দোলনের সময় নিহতদের মধ্যে অনেকেরই দেহ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র ঢাকার দুটি হাসপাতালেই এখনও পড়ে রয়েছে ২০টি অশনাক্ত দেহ। ফলে বিপাকে প্রশাসন।
অন্তর্বর্তী সরকারের আরও ২ উপদেষ্টা এদিন শপথ নেন। তাঁর মন্তব্য,পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। পুলিশ চলবে কমিশনের অধীনে। রবিবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে কোটা-বিরোধী আন্দোলনে জখম পুলিশকর্মীদের দেখতে গিয়ে সাখোয়াত স্বীকার করেন, ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তাতে ভেঙে পড়েছে পুলিশের মনোবল। পুলিশকর্মীরা কাজে না ফেরায় বেড়ে গিয়েছে ডাকাতির ঘটনা। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের মুখে। লক্ষণীয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে বিভিন্ন থানায় হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩৪ জন পুলিশকর্মী। ৮ অগাস্ট খুলে গিয়েছে ঢাকায় পুলিশের সদর দফতর এবং ডিএমপির কার্যালয়। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। শনিবার পর্যন্ত খুলেছে ৬৩৯টির মধ্যে ৫৩৮ থানা। কিন্তু সেখানেও একই ছবি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পুলিশ।
সদ্যপ্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ও আওয়ামি লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হাছান মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই নির্দেশ সব ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে হাছান মাহমুদকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে প্রথমে খবর প্রচারিত হলেও, এই মুহূর্তে তিনি কোথায় তা অজানা।
আরও পড়ুন-চাকরির লোভ দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে গিয়ে প্রতারণা ভারতীয়দের
বিএফআইইউর নির্দেশ বলা হয়েছে, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী নুরুন ফাতেমা এবং মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়ী হিসাব জব্দ করতে হবে। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের এই নির্দেশনার ফলে ওই তিনজনের ব্যক্তিগত কিংবা ব্যবসায়ী ব্যাঙ্ক হিসাব থেকে কোনও টাকা তুলতে পারবেন না।