বাংলায় এখন স্বাস্থ্যবিপ্লব, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে চিকিৎসায় ঢালাও উন্নতি

বাংলার চিকিৎসা পরিকাঠামোয় বিপ্লব এসেছে বিগত এক দশকে। হাসপাতাল, শয্যা, আধুনিক চিকিৎসায় বদলে গিয়েছে পরিকাঠামো।

Must read

প্রতিবেদন : বাংলার চিকিৎসা পরিকাঠামোয় বিপ্লব এসেছে বিগত এক দশকে। হাসপাতাল, শয্যা, আধুনিক চিকিৎসায় বদলে গিয়েছে পরিকাঠামো। স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সেই সাফল্য একনজরে—
বাজেট বরাদ্দ সাড়ে ৫ গুণের বেশি বৃদ্ধি
২০১০-১১ সালে ৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা
২০২৪-২৫ সালে ২০ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন
মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ১১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৭ (২৪টি সরকারি)৷ এমবিবিএস সিটের সংখ্যা ১,৩৫৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট (এমডি/এমএস) সিটের সংখ্যা ৯০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৮৪৮। পোস্ট ডক্টরাল সুপার স্পেশালিটি (ডিএম/এমসিএইচ) সিটের সংখ্যা ৯৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ২১৮।
বেলুড়ে যোগা অ্যান্ড নেচারোপ্যাথি ডিগ্রি কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল চালু।
৪২টি নতুন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু।
১৩ হাজার ৩৯২টি সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ১৪ হাজার ৭৪১টি সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হবে।
সরকারি হাসপাতালে ৪০ হাজার বেড বাড়ানো হয়েছে। এখন বেডের সংখ্যা প্রায় ৯৭ হাজার।
ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৫৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৯। ৪৭টি ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু। এসএসকেএম হাসপাতালে লেভেল-১ ট্রমা কেয়ার ফেসিলিটি চালু।
১১৭টি ন্যায্যমূল্যের ঔষধের দোকান ও ১৭৮টি ন্যায্যমূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু – ৪৮% থেকে ৮০% পর্যন্ত ছাড়।
রাজ্য জুড়ে ৭১টি এসএনসিইউ, ২৮৬টি এসএনএসইউ, ৭৬টি সিসিইউ, ৩টি এইচডিইউ, ১৪টি মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব এবং ১৩টি মাদারস ওয়েটিং হাট চালু৷
মাতৃমা পোর্টালের মাধ্যমে সন্তানসম্ভবা ও প্রসূতি মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের মনিটরিং।
এসএসকেএম হাসপাতালে কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং ‘মধুর স্নেহ’ নামে হিউম্যান মিল্ক ব্যাঙ্ক স্থাপন৷
রাজ্যে ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো বাড়ানোর জন্য আইপিজিইআর, কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, শিলিগুড়িতে দুটি স্টেট অফ আর্ট ক্যানসার হাব স্থাপন করার জন্য মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের সাথে মউ চুক্তি স্বাক্ষর।
ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকেল কর্মী নিয়োগ
প্রায় ১৪ হাজার ডাক্তার নিয়োগ।
নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৫৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫১।
নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলিতে মোট আসন সংখ্যা ২,৫৪৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮,৪৬৭। সরকারি হাসপাতালগুলিতে অনুমোদিত মোট নার্সিং স্টাফ ৩৩,৮৩১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৯,১১৩।
প্যারামেডিকেল স্টাফ ৩ হাজার ৪৮৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ৩৩০।
আশাকর্মীর সংখ্যা গত ৩ বছরে প্রায় ১১ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এখন আছে প্রায় ৬৪ হাজার আশাকর্মী। ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এই সংখ্যা আরও প্রায় ১০ হাজার বাড়িয়ে ৭৪ হাজার করা হবে।
রাজ্য জুড়ে ডাক্তার, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-মেদিনীপুর মেডিক্যালে শুরু তদন্ত

কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে রোগনির্ণয়, চিকিৎসা ও ওষুধপত্র৷
‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’ টেলিমেডিসিন প্রকল্পে ১০ হাজার ২৪৩টি কেন্দ্র থেকে প্রত্যহ গড়ে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষকে টেলি কনসাল্টেশন পরিষেবা। এখনও পর্যন্ত মোট ৪ কোটি ৮২ লক্ষ টেলি কনসাল্টেশন পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ইঙ্গিত প্রকল্পে বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস থেকে ‘টেলি নিউরো ব্রেন স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট পরিষেবা’ এবং এসএসকেএম–সহ আরও কয়েকটি মেডিকেল কলেজ থেকে ‘টেলি কার্ডিওলজি পরিষেবা’ চালু।
‘চোখের আলো’ প্রকল্পে ২ কোটি ৩৩ লক্ষের বেশি মানুষের বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা। ২০ লক্ষ ৩৬ হাজারের বেশি ছানি অপারেশন, বয়স্ক মানুষদের ২৮ লক্ষ ৪৩ হাজারের বেশি চশমা প্রদান।
‘শিশুসাথী’ প্রকল্পে ৩২ হাজারের বেশি বাচ্চার বিনামূল্যে কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ, ক্লাব ফুট, ক্লেফট লিপস ইত্যাদির চিকিৎসা এবং অপারেশন। ৭ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসার ব্যবস্থা, মাভৈ প্রকল্পের আওতায় সাংবাদিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা৷
উত্তরবঙ্গের চা–বাগানগুলিতে বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স এবং ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল ইউনিট চালু, সুন্দরবনের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সন্তানসম্ভবা মায়েদের জন্য ওয়েটিং হাট নির্মাণ৷
এক নজরে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প
বিনামূল্যে প্রাইভেট নার্সিংহোমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ।
এখন এই প্রকল্প সর্বজনীন। আগে থেকে অন্য কোনও স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত আছেন এমন মানুষদের বাদ দিয়ে রাজ্যের সকল মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপক।
রাজ্যের ২ কোটি ৪৪ লক্ষ পরিবারের ৮ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত।
বাড়ির মায়েদের নামে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের স্মার্ট কার্ড।
প্রায় ২ হাজার ৯০০–র বেশি হাসপাতাল/নার্সিংহোমে চিকিৎসার সুযোগ৷
৮৭ লক্ষের বেশি সংখ্যক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। খরচ হয়েছে ১১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার বেশি৷

আরও পড়ুন-রাত দখলের নাটকে ছিল যারা, তারাই অশ্লীল-কাণ্ডে অভিযুক্ত, আটক প্রাক্তন বামনেতার ছেলে

মনিটরিং মেকানিজম
২৪ ঘণ্টা টোল ফ্রি কলসেন্টার পরিষেবা 18003455384
ডেডিকেটেড হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর – 9073313211
ইন্টারেক্টিভ হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ ইন ওয়েবসাইট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাপ
প্রকল্পে দুর্নীতি রোধে ব্যবস্থা
ডিস্ট্রিক্ট সার্ভাইল্যান্স টিম অ্যান্ড স্টেট সার্ভাইল্যান্স টিম
পোস্ট ডিসচার্জ মেডিকেল অডিট (৩০% অফ টোটাল ডিসচার্জ কেসেস)
ভেরিফিকেশন বাই বিসাইড ভিজিটস টু দ্যা পেশেন্টস✓
স্বাস্থ্যসাথী বনাম আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যসাথী
‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু হবার অনেক আগেই ‘স্বাস্থ্যসাথী’ শুরু করা হয়েছে। ‘স্বাস্থ্যসাথী’ ঘোষণা হয় ২০১৬ সালে আর চালু হয় ২০১৭ সালে।
সারা বাংলার সকল মানুষ ‘স্বাস্থ্যসাথী’–তে অন্তর্ভুক্ত হবার যোগ্য। এখানে কোনও বাছবিচার নেই৷ ২০২০ থেকেই আমাদের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ ইউনিভার্সাল স্কিম। বাংলার ২ কোটি ৪৪ লক্ষ পরিবার এতে অন্তর্ভুক্ত।
শুধু যাদের অন্য কোনও সরকারি স্বাস্থ্যবিমা আছে (যেমন সরকারি কর্মচারীদের ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিম), তারা এতে আসতে পারে না।
যে কোনও বয়সের মানুষ এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সিনিয়র সিটিজেনদের বয়স যাই হোক তারা ‘স্বাস্থ্যসাথী’–র জন্য বিবেচ্য৷
আয়ুষ্মান ভারত
‘স্বাস্থ্যসাথী’–র দেখাদেখি ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করা হয় ২০১৮ সালে৷
‘আয়ুষ্মান ভারত’ মোটেও ইউনিভার্সাল স্কিম নয়।
‘আয়ুষ্মান ভারত’ যারা পাবে না তাদের মধ্যে আছে––
১. যাদের মাসিক রোজগার ১০ হাজার টাকার ওপরে।
২. যাদের বাড়িতে গাড়ি (দুই, তিন বা চার চাকার গাড়ি) বা যন্ত্রচালিত মাছ ধরার নৌকা আছে।
৩. যাদের কিষাণ কার্ডে ক্রেডিট লিমিট ৫০ হাজার টাকার ওপরে।
৪. যাদের যন্ত্রচালিত কৃষি সরঞ্জাম আছে।
৫. যাদের বাড়িতে ফ্রিজ বা ল্যান্ডলাইন ফোন আছে।
৬. যাদের ৫ একর বা তার বেশি কৃষি জমি আছে।
তাই ‘স্বাস্থ্যসাথী’ যেখানে রাজ্যের ২ কোটি ৪৪ লক্ষ পরিবার পায়, সেখানে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু হলে তার থেকে ১ কোটি ২০ লক্ষ পরিবার বাদ চলে যাবে। কারণ জিওআই তাদের হিসেব অনুযায়ী বাংলায় মাত্র ১ কোটি ২৪ লক্ষ পরিবারকে ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর আওতাভুক্ত করতে পারে। তার বেশি নয়।
‘আয়ুষ্মান ভারত’-এ আগে ৭০ বছরের ওপরে কাউকে নেওয়া হত না। ইদানীং অনুমোদন করা হয়েছে।

সাফল্যের সঙ্গে কোভিড মোকাবিলা
ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি ২০১১ সালের ৬৮.১% থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৯% এর বেশি৷
মাতৃমৃত্যুর হার ২০১১ সালে ছিল ১১৩ (প্রতি ১ লক্ষ জীবিত শিশুর জন্মের জন্য)––২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১০৩ (প্রতি ১ লক্ষ জীবিত শিশুর জন্মের জন্য)৷
শিশুমৃত্যুর হার ২০১১ সালে ছিল প্রতি হাজারে ৩৪, এখন কমে হয়েছে প্রতি হাজারে ১৯৷
১২-২৩ মাস বয়সী শিশুদের টিকাকরণের হার ২০১১ সালের ৬৫% থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৯৯%৷

Latest article