প্রেগনেন্সি প্ল্যানিং-এর পর
মাসিক সাইকেল মিস করলেই একটা ইউরিন প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে হবে। এখন যে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিটগুলো পাওয়া যায় তা এতটাই সেনসিটিভ যে মাসিক সাইকেল বন্ধের তিনদিনের মধ্যে কোনও মহিলা গর্ভধারণ করেছেন কি না ধরা পড়ে যায়। এই কিটগুলো সমস্ত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে উপলব্ধ। যার নাম ‘নিশ্চয়’ কিট। ওষুধ দোকানেও বিভিন্ন কোম্পানির কিট পাওয়া যায়। প্রেগনেন্সি নিশ্চিত হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক শেষ পিরিয়ডের প্রথম তারিখটা জেনে সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ নির্ধারণ করেন। এই পুরো সময়টা হল ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন। এই ৪০ সপ্তাহকে তিনটে ভাগে ভাগ করা হয় প্রতি তিনমাস অন্তর যাকে ট্রাইমেস্টার বলে।
প্রথম ট্রাইমেস্টার
প্রথম ট্রাইমেস্টার হল প্রথম সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ শেষ হওয়া অবধি।
এই সময় থেকে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। এই ন’মাসের মধ্যে বেশিরভাগ মায়ের দুটো কমপ্লিকেশন আসে সাধারণত একটা হল অ্যানিমিয়া আর একটা হল প্রেগনেন্সি ইনডিউসড হাইপারটেনশন বা হাইপারটেনসিভ ডিজর্ডার ইন প্রেগনেন্সি বা উচ্চরক্তচাপ। কাজেই এগুলো টেস্ট করতে হবে সেই সঙ্গে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে দেখতে হবে রক্তাল্পতা আছে কি না। এর সঙ্গে গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুর বাড়বৃদ্ধি ঠিক হচ্ছে কি না সেটা দেখে নিতে হবে। এই তিনটে উদ্দেশ্যেই গর্ভবতী মাকে নিয়মিত চেক-আপে আসতে হবে। আরও কিছু পরীক্ষা করে ওষুধ শুরু করবেন চিকিৎসক।
শুরুর অসুবিধে
প্রথম বারো সপ্তাহে মায়েদের মধ্যে খেতে না পারা, বমি হওয়া বা গা গুলোনো অর্থাৎ প্রেগনেন্সি ইনডিউসড নশিয়া, ভমিটিং ইত্যাদি দেখা যায়। তাই খাবারের ধরনটা বদল করতে হবে এই পিরিয়ডে। বেশিরভাগ মেয়েকেই বেশি করে খেতে জোর করেন বাড়ির বড়রা যা কখনওই উচিত নয়। কারণ জোর করে খাওয়ালে তার আরও বেশি বমি হবে। যেটুকু খেতে পারছে সেটুকুই খেতে হবে। আর বমির প্রবণতা এড়াতে অল্প খাবার বারে বারে খাবে যাকে বলে স্মল ফ্রিকোয়েন্ট মিল এবং ডিনারের সময় অনেকটা এগিয়ে আনতে হবে। খাওয়ার পর যাতে হজম করার সময় থাকে। ডিনার হবে হালকা। সাড়ে আটটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিলে ভাল। এরপরেও বমি হলে কিছু ওষুধ রয়েছে যা খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে।
এই সময় সন্ধের দিকে অ্যাসিডিটি হয়, গলা-বুক জ্বালা করে। সেক্ষেত্রে লিক্যুইড অ্যান্টাসিড খাওয়া যেতে পারে তাতে কাজ না হলে কিছু ওষুধ আছে যা সুরক্ষিত। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে খেতে হবে।
কনস্টিপেশন এই পর্বে খুব কমন সিম্পটম। কারণ প্রজেস্টেরণ হরমোন শরীরে বেড়ে যায় এই হরমোনের আর একটা কাজ হল আমাদের ইনটেস্টাইনের সংকোচন-প্রসারণের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া। ফলে খাবারটা এক জায়গায় জমে যায় এবং কনস্টিপেশন হয়। কাজেই স্টুল সফনার খেলে ভাল। ইসবগুল জাতীয় কিছু খাওয়া যেতেই পারে তাতে কোনও সমস্যা নেই। কারণ বাওয়েল ক্লিয়ার না হলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
একটা ওষুধ নিয়মিত হবু মা নেবেন, তা হল ফলিক অ্যাসিড। সম্ভব হলে এটা গর্ভধারণেরও মাস তিনেক আগে থেকে খেলেই ভাল হয়। কারণ এটাই একমাত্র ভিটামিন যেটা গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি দূর করে।
এই সময় কিছু টেস্ট আবশ্যিক। মায়ের রক্তের গ্রুপ জানতে হয় ‘এ’, ‘বি’, ‘ও’ ব্লাড গ্রুপিং এবং ‘আর এইচ টাইপিং’। এছাড়া হিমোগ্লোবিন টেস্ট, ব্লাড সুগার টেস্ট। সুগার বেশি থাকলে সেই অনুযায়ী খাবারের মডিফিকেশন করবেন চিকিৎসক। একটা থাইরয়েড টেস্টও এই সময় করে নেওয়া ভাল। আর কিছু সংক্রমণজনিত রোগের পরীক্ষা করে নিতে হবে যেমন হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি, বিডিআরএল বা সিফিলিস টেস্ট। সুযোগ থাকলে অ্যান্টি এইচ সিভি টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভাল।
আল্ট্রাসাউন্ড প্রথম ট্রাইমেস্টারেই করা জরুরি কারণ গর্ভস্থ শিশুর হার্টবিট এই সময় এসে যায়। সেটাই ধরা পড়ে আল্ট্রাসাউন্ডে। হার্টবিট এসে যাওয়া মানে বাচ্চা সুস্থ সবল ভাবে প্রসব করা যাবে বলেই ধরে নেওয়া হয়। যিনি চাকরিতা তিনি এই সময় সাবধানে যাতায়াত করবেন। প্রথম সাতটা সপ্তাহ একটু যদি বাড়িতে থেকে কাজ করা যায় খুব ভাল। তারপর আর অসুবিধে থাকে না। পেট খারাপ, ভাইরাল ইনফেকশন যেন না হয়। লক্ষ্য রাখা জরুরি।
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার
দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার হল ১৩ সপ্তাহ থেকে ২৮ সপ্তাহ অবধি। এই পর্যায় ইউটেরাস অনেকটা বেড়ে যায়, পেটটাও ফুলতে শুরু করে। তখন প্রেশার, হিমোগ্লোবিন, ওজন দেখার সঙ্গে চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন জরায়ুর মাপ কতটা বাড়ল অর্থাৎ বাচ্চা গ্রোথ কেমন হচ্ছে। এই পর্যায়ে আয়রন ট্যাবলেট চালু করতে হবে। কারণ আমরা রোজ যে পরিমাণে আয়রন খাই তা গর্ভবতী মায়েদের জন্য যথেষ্ট নয়। আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম রয়েছে। সবসময় দুটো খাবারের মাঝে খেতে হয়। চা বা কফির পরে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত নয়। আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার আগে পরে টক জাতীয় কিছু খেলে তা বেশি অ্যাবজর্বশন হয়। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
হিসেবে কনস্টিপেশন হতে পারে তাই
খাবার বুঝে খেতে হবে।
যদি কারও হিমোগ্লোবিন শুরু থেকেই কম থাকে তাহলে দুটো আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। ক্যালশিয়াম ট্যাবলেট চলবে সঙ্গে। তবে দুটো ওষুধ খাবার সময় আলাদা হবে। খাবারে দুধ, দই, ছানা তো থাকবেই সঙ্গে কম মিষ্টিযুক্ত সন্দেশও খেতে হবে।
এই পর্বে দুটো ইঞ্জেকশন পড়ে। একটা টিটেনাস এবং একটা টিডি অর্থাৎ টিটেনাস ডিপথেরিয়া। যে কোনও সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই দেওয়া হয়। বেসরকারি জায়গায় টিটেনাসের সঙ্গে টিড্যাপট দেওয়া চালু হয়েছে অর্থাৎ টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি। এটা বেশ খরচসাপেক্ষ তাই সরকারি জায়গায় এখনও দেওয়া হয় না। এই ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ওষুধ মার শরীরে দিয়ে বাচ্চার শরীরেও যায় তাই এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এই সময়ের অসুবিধে
দশ সপ্তাহ পর থেকেই ব্রেস্ট সাইজে বাড়ে, পেট অনেকটাই বেড়ে রায়, অ্যাবডোমেনে স্ট্রেচমার্ক আসে। চলাফেরা আরও সাবধানে, রোজ নারকেল তেল মালিশ করুন পেটে, এতে ডেলিভারির পর স্ট্রেচমার্ক পড়বে না। অনেক মায়ের ফ্ল্যাট নিপল বা ইনভার্টেড নিপল থাকে এতে বাচ্চার পরবর্তীতে ব্রেস্ট ফিডিং-এ সমস্যা হয় তাই এমনটা থাকলে আগেভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পেটে একটা টান ধরতে শুরু করে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই ট্রাইমেস্টারে একটা আল্ট্রাসাউন্ড করতে হয় যাকে বলে অ্যানোমালি স্ক্যান। এই স্ক্যানে শিশুর মাথা থেকে পা অবধি দেখা হয় যে কোনও জন্মগত ত্রুটি আছে কি না। প্রেশার ঠিক আছে কি না? ওজন বাড়ছে কি না, বাচ্চার বাড়বৃদ্ধি ঠিক আছে কি না দেখে নেওয়া হয়। এই সময় অনেক জায়গায় জেনেটিক স্ক্যান করানো হয়। তবে সরকারি হাসপাতালে এটা করা হয় না। কারণ খুবই খরচসাপেক্ষ। রক্ত পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড দুটো মিলিয়ে একে বলে কম্বাইন স্ক্রিনিং। এটা করলে ট্রাইসোমি অসুখ অর্থাৎ ডাউন সিনড্রোম, এডওয়ার্ড এবং পাটাও সিনড্রোমের সম্ভাবনা থাকলে ধরা পড়ে। যদি রিপোর্টে হাইরিস্ক আসে তখন আরও কিছু বিশেষ পরীক্ষা করতে হয়। এই ট্রাইমেস্টারের শেষে আবার কিছু রক্তপরীক্ষা করা হয় সঙ্গে সুগার টেস্ট রিপিট করতে হয়। এই সময় খাবরের একটু ক্যালরি বাড়াতে হবে। যতটা শরীর দেবে ততটাই কাজ করবে তার বেশি নয়। শোয়ার সময় বাম অথবা ডানপাশ ফিরে শুতে হবে। এতে জরায়ুতে রক্তসঞ্চালন নির্ঝঞ্ঝাট হয়। বাচ্চার বৃদ্ধি ভাল হয়। প্রেশার বেশি থাকলে দু’সপ্তাহ অন্তর আসতে হবে। যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে তাহলে তার ওষুধও বাড়াতে হবে। এইচপিএলসি টেস্ট এই সময় জরুরি। এর থেকে গর্ভবতী মা থ্যালাসেমিয়ার কেরিয়ার কি না বোঝা যাবে। ডেলিভারির যাবতীয় প্ল্যান এই সময় করে ফেলতে হবে।
তৃতীয় ট্রাইমেস্টার
তৃতীয় ট্রাইমেস্টার হল ২৮-এর পর থেকে ৪০ সপ্তাহ অবধি। এই ন’মাসে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনওভাবে রক্তপাত না হয়। বিশেষ করে এই ট্রাইমেস্টারে। একে অ্যান্টি পার্টাম হেমারেজ বলে। এমনটা হলে খুব হাই রিস্ক তখন দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। এটা দুটো কারণে হয় এক প্লাসেন্টা নিচের দিকে থাকলে আর অন্যটা আব্রাপশিওপ্লাসেন্টি। এটা আরও বিপজ্জনক। তখন বড় হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে যেতে হবে। এক্ষেত্রে মাকে রক্ত দিতে হতে পারে, প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি করতে হতে পারে।
শেষের দিকের অসুবিধে
এই সময় পেট অনেকটাই বড় হয়ে যায় ফলে মা হাঁসফাঁস করে। একেবারেই খেতে পারে না। একটা অস্বস্তি থাকে শরীরে। যেগুলো চলে গিয়েছিল আবার ফিরে আসতে পারে যেমন অ্যাসিডিটি, গলা-বুক জ্বালা, বমি। এই পর্যায়ে একসপ্তাহ অন্তর চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ এই সময় গর্ভে বাচ্চার অবস্থান, পেলভিসের রাস্তাটা ঠিক আছে কি না, কোন সময় ডেলিভারি হবে এগুলো জানতে হয়। একটা হিমোগ্লোবিন, সুগার দেখে নেওয়া জরুরি সেই সঙ্গে একটা গ্রোথ স্ক্যান করতে হয় কারণ বাচ্চার ওজন কত, পজিশন কী, জল কতটা আছে, গলায় কোনও কর্ড জড়িয়ে আছে কি না একে বলে ‘কর্ড রাউন্ড দ্য নেক’ এগুলো দেখা জরুরি। ৩৭ সপ্তাহে গর্ভস্থ শিশুর বাড়বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়। এবার প্রসবের জন্য অপেক্ষা। যদি প্রসবের নির্ধারিত ডেট পেরিয়ে যায় লেবার পেন না ওঠে তাহলে এক সপ্তাহের বেশি অপেক্ষা করেন না কোনও চিকিৎসকই। ডেলিভারি করে দেন। না হলে বাচ্চার ক্ষেত্রে রিস্ক হয়ে যেতে পারে। এই সময় বাচ্চার হার্ট রেটেরও একটা টেস্ট করে নেওয়া হয়।
মায়ের কাউন্সেলিং
প্রথমা গুহ (মনোবিদ)
সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে গর্ভধারণ এবং শিশুর জন্মের পর ছ’মাস পর্যন্ত সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ যখন হবু মা’র কাউন্সেলিং খুব জরুরি। কারণ হবু মা মনের দিক থেকে প্রস্তুত কি না সেটা সবার আগে দেখা দরকার।
প্রেগনেন্সি যদি আনপ্ল্যানড হয় অর্থাৎ পরিকল্পনা ছাড়াই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন, এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি ছিল না। সদ্য একটা প্রোমোশন হতে চলেছে বা আর্থিক সুস্থিতি নেই যাতে বাচ্চা আনা যায়, পরিবারের চাপ রয়েছে বাচ্চা নিতেই হবে, স্বামী চাইছেন এমন একটা পরিস্থিতিতে সমস্যা এড়াতে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে। সেই কাউন্সেলিংয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিবারের লোকও থাকতে পারেন।
অনেক সময় অন্য কোনও ডিপ্রেশন কাটানোর জন্য অনেকে একটা বাচ্চা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এটা খুব বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত। কারণ মনে রাখতে হবে বাচ্চা হওয়া কখনওই কোনও মনের অসুখের দাওয়াই নয় উপরন্তু এর ফলে ডিপ্রেশন আরও মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে। উৎকণ্ঠার মধ্যে গর্ভধারণ করলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে দেয় যা গর্ভস্থ শিশুরও ক্ষতি করে। মেটারনাল স্ট্রেস থেকে শিশুর বিভিন্ন নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজর্ডার হতে পারে।
গর্ভধারণের পর একটা কাউন্সেলিং নিতে হবে কারণ অধিকাংশ মানসিক রোগই প্রেগনেন্সি পিরিয়ডে বেড়ে যায়। প্রেগনেন্সি একটা ভালনারেবল স্টেজ যখন হরমোনের তারতম্য হতে থাকে। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের সময় বহু মেয়েই প্রি মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিএমএস-এ ভোগেন। যখন তাঁদের মধ্যে নানা মানসিক সমস্যা আসে আর প্রেগনেন্সিতে সেই সাইকেলটাই সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে ন’মাস। তার ফলে হরমোনের এই তারতম্য আরও বেশি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং অ্যান্টি পার্টাম অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন দেখা যায়।
এই সময় হবু মায়ের গায়নোকোলজিস্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্টের মধ্যে একটা সংযোগ বা কো-অর্ডিনেশন খুব জরুরি। তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সবটা করতে হবে।
কাউন্সেলিংয়ে প্রথমে শুধু কথা বলেই চেষ্টা করা হয় মায়ের অবসাদ কাটিয়ে তোলার, যদি সম্ভব না হয় তখন অ্যান্টিডিপ্রেশনন্ট ওষুধ দিতে হয়। যদিও এই ওষুধ একেবারেই সুরক্ষিত।
পোস্ট পার্টাম ব্লুজ বা ডিপ্রেশন বাচ্চার জন্মের পর কমন একটা সমস্যা। নিজের বাচ্চাকেই ভাল লাগে না। সারারাত জেগে ব্রেস্টফিড করানো, বাচ্চার কাঁথা, কাপড় পরিষ্কার করে যাওয়া সারাক্ষণ বাচ্চার পটি পরিষ্কার, ডায়াপার বদল— এই পাল্টে দেওয়া জীবনটা নিতে পারেন না বহু মা। তার সঙ্গে সিজার হলে সেই ব্যথাও থাকে। শারীরিক দুর্বলতা থাকে। এগুলো স্বাভাবিক হলেও কোপ আপ করা মুশকিল হয়। ফলে অবসাদ চরমে ওঠে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের পর হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস। যেটা আরও মারাত্মক। তখন বাচ্চাকে মনে হয় রাগে ছুঁড়ে ফেলে দিই। পাগলের মতো লাগে। সুইসাইডাল রিস্ক বাড়ে, শিশুর জীবন বিপর্যয় হতে পারে। তখন এতটুকু দেরি না করে মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়া। সেক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ের সঙ্গে ওষুধ দেওয়া হয়। ব্রেস্ট ফিড করালেও এই ওষুধ খাওয়া যায়। ছ’মাস পর্যন্ত এই কাউন্সেলিং জরুরি।
প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে যদি পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন হয় তাহলে দ্বিতীয় বাচ্চার সময়ও এই ডিপ্রেশন আসতে পারে। যাঁদের পিএমএস রয়েছে বা ছিল তাদেরও এর সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই প্রেগনেন্সি প্ল্যান করার আগে মনোবিদের পরামর্শ নিন।