পাহাড়ি গ্রাম কোলাখাম

নির্জন নিরিবিলি পাহাড়ি গ্রাম, কালিম্পংয়ের কোলাখাম। অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ স্পষ্ট দেখা যায়। আছে বনাঞ্চল, নদী, জলপ্রপাত। কয়েক দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। মন ভাল হয়ে যাবে। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

শহর থেকে দূরে, পাহাড়ি এক গ্রাম কোলাখাম। কালিম্পং জেলার অন্তর্গত। গরমের দিনেও এখানে ছড়িয়ে থাকে শীত-শীত ভাব। দূষণের চিহ্ন নেই। গ্রামটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, নির্জন-নিরিবিলি। খুব বেশি মানুষ জানেন না। তবে যাঁরা একবার গেছেন, বারবার যেতে চাইবেন।

আরও পড়ুন-প্রিমিয়ার লিগে আজ নামছে ডায়মন্ড হারবার, কিবুর দলের সামনে ইউনাইটেড

একটা সময় সুযোগ পেলেই লোকজন তল্পিতল্পা গুটিয়ে দার্জিলিং ছুটত। এখন পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠেছে বেশকিছু অফবিট ট্যুরিস্ট স্পট। কোলাখাম তেমনই একটি জায়গা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক অনন্য স্থান। নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক থেকে জায়গাটা খুব দূরে নয়। তাই এই গ্রামে সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে। মাথা দোলায় নানা রকমের গাছগাছালি।
কোলাখামের বিশেষত্বই হল এর নির্জনতা। অপূর্ব সৌন্দর্যের খোলা খাম নিয়ে গ্রামটি পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরি। নীল আকাশ দেখলে জুড়িয়ে যায় চোখ। কোলাখাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ স্পষ্ট দেখা যায়। এ এক অপরূপ দৃশ্য। একবার দেখলে চিরজীবন মনে থাকবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে অবশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ কম থাকে।
মূলত এখানে নেপালের রাই সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। মাত্র ৬০টি ঘর রয়েছে। স্থানীয় মানুষজন দারুণ সহনশীল, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। পর্যটকদের ভগবানের মতো দেখে। গাড়ি করে আসতে আসতে পাহাড়ি এলাকার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে হয়। জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের কোলে কিছুদিন কাটাতে মন্দ লাগবে না। অনেকেই অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে বাইক ছুটিয়ে আসেন। ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ জায়গা।
সন্ধেবেলা কোলাখাম থেকে দেখা যায় আলো-ঝলমলে রিশপ। ‘রিশপ’ শব্দের অর্থ ‘পাহাড়ের মাথায় একলা গাছ’। মনে হয় অন্ধকার পাহাড়ের গায়ে অজস্র উজ্জ্বল হীরকখণ্ড। প্রায় সাড়ে আট হাজার ফুট উচ্চতায় রিশপ পাহাড়ের ধাপে ধাপে নানা রকমের ফুলে ঢাকা ছোট্ট সাজানো গ্রাম৷

আরও পড়ুন-৩ দিনের সিবিআই হেফাজত আদালতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন কেজরিওয়াল

কোলাখাম থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাভা। পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় একটি জায়গা। চাইলে সহজেই ঘুরে আসা যায়। কুয়াশা ও মেঘে ঢাকা পাইন গাছে ঘেরা লাভার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমন্দির ও প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে ওঠার সূচনাবিন্দু লাভা। উন্নত ও সুব্যাপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপোলি মুকুট এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। মূল শহর ছাড়িয়ে জঙ্গলের নিরিবিলি পথে ঘুরে বেড়ালেও মন তরতাজা হয়ে উঠবে। লাভার খুব কাছেই লোলেগাঁও হওয়ার কারণে খুব সহজেই ওখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোও দেখে আসা যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার জন্য আদর্শ জায়গা লোলেগাঁও। ‘লোলেগাঁও’ শব্দের স্থানীয় অর্থ সুখী গ্রাম। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল ক্যানপি ওয়াক। এছাড়াও আছে মনাস্ট্রি, সানরাইজ পয়েন্ট, সানসেট পয়েন্ট। সারাদিন এদিক-ওদিক ঘুরে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায় কোলাখামে।
কোলাখাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে ছাঙ্গে জলপ্রপাত। এটাকে উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ উচ্চতার জলপ্রপাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যার মোট উচ্চতা ৩০০ মিটার বা ৯৮৪ ফুট। জলপ্রপাতটি ২,২০০ মিটার বা ৭,২১৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। পাহাড় এবং সবুজ বনে ঘেরা। ছাঙ্গে জলপ্রপাত বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণিজগতের আবাসস্থল। চারপাশের ঘন বনাঞ্চলে উড়ে বেড়ায় হোয়াইট ক্যাপড ওয়াটার রেডস্টার্ট, ভার্ডিটার ফ্লাইক্যাচার, নিলতাভা, ব্লু ফ্রন্টেড রেডস্টার্ট, গ্রে ট্রিপি, ইন্ডিয়ান রবিন, ব্লু হুইসলিং থ্রাশের মতো হিমালয়ের পাখি। কোলাখাম থেকে এই জলপ্রপাত দেখতে হলে যেতে হবে গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। দূর থেকে কানে আসবে জলপ্রপাতের শব্দ। এই শব্দের মধ্যে চরম প্রশান্তি অনুভব করতে পারে পর্যটকরা।

আরও পড়ুন-বদলায়নি কিছুই, সংসদে এখনও সেই স্বৈরতন্ত্রের ছায়া

এছাড়াও দেখা যায় চেল নদী। নদীর তীরে বসে সময় কাটানো যায় কিছুক্ষণ। কোলাখাম থেকে যে রাস্তাটি চলে গেছে লাভার দিকে, তার প্রায় সবটাই গিয়েছে নেওড়া ভ্যালি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। বনের ভেতরে ঢোকার ব্যাপারে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। এখানে দেখতে পাওয়া যায় অজস্র পাখি। যেমন ডার্ক সাইডেড ফ্লাই ক্যাচার, রুফাস সিবিয়া, গ্রিন-ব্যাকড টিট ইত্যাদি। ছায়া ঘেরা মায়া মাখা অদ্ভুত এক পরিবেশ। মন শান্ত হয়ে যায়। নতুন করে চেনা যায় সবুজ প্রকৃতিকে। চোখে পড়ে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি নানা রঙের পাহাড়ি ফুল। অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে আপনমনে ফুটে রয়েছে। অজান্তেই শোভা বাড়িয়েছে পাহাড়ি এলাকার। তাকালেই চোখের আরাম। হাতছানি দেয় কোলাখাম? সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি বা নিউ মাল জংশনে নামতে হবে। সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছতে হবে লাভা। লাভা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোলাখাম। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে লাভার দূরত্ব ১১৭ কিলোমিটার। নিউ মাল জংশন থেকে ৫২ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন?
কোলাখামে থাকার জন্য রয়েছে নেওড়াভ্যালি ইকো হাট। এ ছাড়াও রয়েছে কোলাখাম রিট্রিট। ফলে থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না।

Latest article