শ্রেয়া বসু
আজিকার দিন না ফুরাতে
হবে মোর এ আশা পুরাতে–
শুধু এবারের মতো
বসন্তের ফুল যত
যাব মোরা দুজনে কুড়াতে।
রবিগুরুর আমেজ নিয়েই বসন্তের খামখেয়ালি হাওয়ার সাথে মিলেমিশে একাকার রঙ, তা সে মনের হোক বা রাজনীতির। বসন্ত মানেই প্রেম, নতুন কিছুর শুরু, প্রকৃতির রংমিলান্তি পরিবর্তন আর রঙিন উৎসবের আনন্দ। শীতের শেষে যখন গাছে নতুন পাতা আসে, আবহাওয়ার মৃদু উষ্ণতার মধ্যেই বিশ্ব জুড়ে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয় রঙের উৎসবের মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে বসন্ত উদযাপনের ধরনও আলাদা। বাংলাদেশে পহেলা ফাল্গুন, ভারতে দোল বা হোলি, জাপানে হানামি, ইরানে নওরোজ, চিনে চিং মিং, ও খ্রিস্টীয় রীতিতে ইস্টার— সব দেশেই বসন্তের আগমন মানেই আনন্দের ছোঁয়া ভরপুর। লাল পলাশ, শিমুলে সেজে উঠেছে চারদিক। তাঁর মাঝেই ফাগুন হাওয়ায় ভর করে উঁকি দিচ্ছে দোল উৎসব। গৃহবাসীর জন্য দরজা খুলতে শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। দোল উৎসব নিয়ে মেতে উঠেছে আপামর বাঙালি, সেই সময় ঘরে বসতে থাকতে রাজি নন রাজনীতির ময়দানে খেলোয়াড়রা।
রাজনীতির পালাবদলের পর থেকেই প্রতি বছর নতুন মোড়কে দোলের আবেগ, হোলির উচ্ছ্বাস ও সুরের মূর্ছনায় মমতাময়ী স্পর্শে হয় রঙ, সুর ও সংস্কৃতির মহোৎসব। রক্তমাখা লাল রঙ, তাপ, বিপদ, হিংসা অগ্নিকন্যার হালকা ছোঁয়ায় নিমেষেই গায়ে মেখে নিয়েছে স্নিগ্ধ নীল সাদা রং। রাজনীতিগত পরিবর্তনের সঙ্গেই কেমন যেন এই সময়টা এলেই আকাশের রং আপন মনেই বদলে যেতে থাকে। কংক্রিটের দেওয়াল, হোর্ডিংয়ের ফাঁক দিয়ে এখন থাকে শুধুই সতেজ সবুজ পাতা, ফুলের আবিরের উষ্ণতা। নিজেদের অজান্তেই কখন যেন সেই রঙে মিশে যাই আমরা।
বাঙালির দোল বা অবাঙালিদের হোলি, মুখ্যমন্ত্রীর ছায়ায় মূলমন্ত্র হল একটাই ‘আজ সবার রঙে রং মেশাতে হবে।’ দোল বা ‘হোলি’ সবার সঙ্গে একত্রিত হওয়ার উৎসব, সম্প্রীতির উৎসব। ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতির আঙিনায় কালিদাস থেকে কালিকাপ্রসাদ— সবারই ছোঁয়া পেয়েছে এই উৎসব। মিলনগাথাও রচিত হয়েছে বহু, আজও হচ্ছে। আসলে দুরন্ত গতিতে বসন্ত কখন যে আসে আর চলে যায়, ক্রমাগত যান্ত্রিকতা আর উত্তরোত্তর আধুনিকতায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা আমরা বুঝতেই পারি না। অনেক বছর পরে হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজকের বসন্ত উৎসবের মধ্যেই ‘বসন্ত’ কথাটার মানে খুঁজতে হাতড়াবে আগামী প্রজন্ম।