প্রতিবেদন : বিতর্কিত আইন ইউএপিএ–র অপব্যবহারের বিরুদ্ধে দেশজোড়া জনমত তীব্র৷ অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার অপছন্দের ব্যক্তিদের শায়েস্তা করার জন্য হামেশাই এই আইনি ধারা প্রয়োগ করে থাকে৷ সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টও একাধিক মামলার সূত্রে ইউএপিএ–র অপব্যবহার নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করে আইন প্রয়োগের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে বলেছে কেন্দ্রকে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে খোদ সংসদের প্রশ্নের জবাবে মোদি সরকার স্বীকার করে নিল, পশ্চিমবঙ্গে ইউএপিএ প্রয়োগ অনেক কম৷ অর্থাৎ, তৃণমূল শাসিত এই রাজ্যে জঙ্গি মোকাবিলা আইনের যত্রতত্র অপব্যবহার করে নাগরিকদের উপর দমনপীড়ন চলে না৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জবাবেই এই তথ্য প্রকাশ্যে৷
লোকসভায় ইউএপিএ নিয়ে লিখিত প্রশ্নে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মালা রায়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে তাঁর প্রশ্ন ছিল, শেষ তিন বছরে গোটা দেশে ইউএপিএ আইনে ২৫ বছরের নিচে ছাত্র-সহ কতজন গ্রেফতার হয়েছে? কতজন জামিনে মুক্তি পেয়েছে এবং কতজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে? বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, এই আইনে বহু নিরীহ মানুষকে অযথাই হেনস্তা করা হয়। অকারণে গ্রেফতার করার পর বহুক্ষেত্রেই প্রমাণের অভাবে বেশিরভাগ অভিযুক্তই মুক্তি পায়। তাই এই আইন যাতে সঠিকভাবে রূপায়িত করা যায় তার জন্য সরকার কি ইউএপিএ আইন সংশোধনের চিন্তাভাবনা করছে? ইউএপিএ আইনে ধৃতদের মধ্যে বন্দি অবস্থায় কি কারও মৃত্যু ঘটেছে?
আরও পড়ুন : ডোমজুড়ে জুয়েলারি হাব গড়ছে রাজ্য
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের এই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগেই ইউএপিএ আইন সংশোধন করা হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে নতুন করে আর কোনও সংশোধনী আনার কথা ভাবছে না সরকার। ইউএপিএ আইনে ধৃত কোনও বন্দির হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনা এনসিআরবির নজরে নেই। ইউএপিএ আইনে কাউকে গ্রেফতার, তার বিচার ও জামিন সবকিছুই নির্ভর করে পরিস্থিতির নিরিখে। এই সাফাই দেওয়ার পাশাপাশি ইউএপিএ আইনে বিভিন্ন রাজ্যে কতজন গ্রেফতার হয়েছে, জামিন পেয়েছে এবং দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তার পরিসংখ্যানও পেশ করেন মন্ত্রী। ওই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ইউএপিএ আইনে কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। তবে ২০২০ সালে এই আইনে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বভারতীয় পরিসংখ্যানের নিরিখে বাংলায় যে ইউএপিএ অব্যবহারের নজির নেই তা স্বীকার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷
কেন্দ্রের পেশ করা ২০২০ সালের তালিকা অনুযায়ী, বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশে ইউএপিএ প্রয়োগে গ্রেফতার ৩৬১, সংখ্যার বিচারে যা দেশের শীর্ষে৷ এরপরেই রয়েছে জম্মু–কাশ্মীর ও মণিপুর, ধৃত যথাক্রমে ৩৪৬ ও ২২৫৷ তালিকার উপরের দিকেই রয়েছে তামিলনাড়ু, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্য৷ আর এই সময়কালে বাংলায় ইউএপিএ প্রয়োগ করে গ্রেফতারের সংখ্যা মাত্র ৫৷