হাত বাড়ালেই হোমিওপ্যাথি

হঠাৎ শরীর খারাপ! নেই ডাক্তার। এমতাবস্থায় হাতের কাছে জরুরি সমাধান হল হোমিওপ্যাথি। চিকিৎসক ছাড়াই অসুখের প্রাথমিক ধাপ সামলে দিতে এর জুড়ি আর নেই। তাই বাড়িতেই রাখুন এমন কিছু ওষুধ যাতে রোগের আশু-নিরাময় সম্ভব। কী কী ওষুধ রাখবেন এবং কেন— জানালেন সিনিয়র সুপার স্পেশ্যালিস্ট হোমিওপ্যাথ ডাঃ প্রকাশ মল্লিক। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

হোমিওপ্যাথি ওষুধ আমাদের নিত্যদিনের বন্ধু সেই প্রাচীনকাল থেকেই। হাঁচি, কাশি, গলা-বুক জ্বালা, বদহজম, পেটব্যথা, বমি, হালকা জ্বর, ছোটদের নানারকম সমস্যা, বড়, বুড়ো সকলের হাতের কাছে ছোট্ট অথচ জরুরি সমাধান হল হোমিওপ্যাথি। রাত-বিরেতে শরীর খারাপের প্রাথমিক ঝড়টা সামলে দিতে এর জুড়ি নেই। এর জন্য ডাক্তার হবার দরকার নেই শুধু সাধারণ কিছু লক্ষণ এবং জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এগোতে পারলেই আসু নিরাময় সম্ভব। তবে রোগের গুরুত্ব ও জটিলতা বুঝে পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল।
বাড়িতে যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ রাখবেন তার পাওয়ার হবে ৩০ এবং ২০০। যদিও শিশুদের জন্য ৬ পাওয়ারই যথেষ্ট। তবে ৩০ পর্যন্ত তাদের দেওয়া যাবে। কন্ডিশন অ্যাকিউট হলে ওই পাওয়ারের ওষুধই একের বেশিবার দেওয়া যেতে পারে তাতে ক্ষতি নেই।

আরও পড়ুন-তৃণমূল কংগ্রেসের ট্যুইটার হ্যাক এবং ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার

আর্নিকা হোমিপ্যাথিতে প্রথমেই যে ওষুধটার কথা মনে আসে তা হল আর্নিকা। যে কোনও আঘাতজনিত ব্যথা, পড়ে গেলে, মচকে গেলে, থেঁতলে গেলে, যে কোনও প্রদাহ উপশমে আর্নিকা দেওয়া যেতে পারে। আর্নিকা তৎক্ষণাৎ যন্ত্রণা কমায় এবং ভবিষ্যতে আঘাতজনিত কারণে কোনও জটিলতা তৈরি হয় না।

ক্যালেন্ডুলা মাদার রাখুন ক্যালেন্ডুলা মাদার। আঘাত লেগে যদি কেটে যায় তাহলে ক্যালেন্ডুলা মাদার লাগালে উপশম হবে।

লিডামপল এবং হাইপেরিকাম পেরেক ফুটে রক্ত বেরলে বা যন্ত্রণা হলে লিডামপল ৩০ আর ছুঁচ ফুটে গেলে অর্থাৎ ছোট পরিসরে যখন আঘাত লাগে সেই ব্যথা আর ফোলা উপশমের জন্য হাইপেরিকাম ৩০। বড়দের জন্য ২০০ পাওয়ার দিতে হবে৷

আরও পড়ুন-কেন্দ্রের বাজেট অসাম্য আরও বাড়াবে

নেট্রামসালফ কোনও শিশু হঠাৎ পড়ে গিয়ে খুব চোট পেয়েছে আর্নিকা দু-তিনবার দেবার পরেও কান্না থামছে না তখন নেট্রামসালফ ৩০ খাওয়ানো যেতে পারে। বড়দের ২০০ পাওয়ার।

ইপিকাক অনেকসময় শিশুর বমি একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে হাতের কাছে রাখুন ইপিকাক ৩০। বড়দের বমি হলে ইপিকাক ২০০।

ইথুজা অনেক সদ্যোজাত শিশুই দুধ তোলে । দুধ খাবার পরেই আর পেটে রাখতে পারে না বমি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ইথুজা ৩০। বমির সঙ্গে যদি কাশি থাকে তাহলেও ইথুজা ৩০ খুব ভাল কাজ করে।

আরও পড়ুন-আমেরিকাতেও নিষিদ্ধ

ক্যামোমিলা ও কলোসিন্থ শিশুদের হঠাৎ করে পেট ব্যথা, অস্থির হয়ে রয়েছে তখন দিন ক্যামোমিলা ৩০। যদি দেখা যায় এমনি পেটব্যথা করছে কিন্তু পেটে চাপ দিলে আরাম লাগছে তখন কলোসিন্থ ৩০। এক্ষেত্রে বড়দের ২০০ পাওয়ার লাগবে। বড়ি হলে ছোটদের একটি করে দিন তিনবার বড়দের দুটো করে তিনবার, পাঁচদিন৷

মার্কসল নাভির চারপাশে ব্যথা, আমাশার জন্য অব্যর্থ মার্কসল ৩০। এটি বড়-ছোট দুজনের জন্যই খুব কার্যকরী। বড়দের জন্য ২০০ পাওয়ার।

মিলিফোলিয়াম নাক দিয়ে রক্ত পড়লে মিলিফোলিয়াম ৩০। এটি নাকের রক্ত বন্ধ হবার কার্যকরী ওষুধ।

বেলডোনা জ্বর জ্বর ভাব, বা নিরানব্বই জ্বর, মুখ চোখ লাল, জ্বালাভাব বেশ ঠান্ডা লেগেছে তাহলে দিন বেলেডোনা ৩০। বড়দের জন্য ২০০ পাওয়ার। মাথার যন্ত্রণাতেও খুব কাজ দেয় বেলেডোনা।

অ্যাকোনাইট যে জ্বরের কারণ অজানা হঠাৎ জ্বর এসছে। অসহনীয় গা-হাত-পা ব্যথা, শরীরে একটা অস্থিরতা খান তখন অ্যাকোনাইট ৩০। বড়দের যদি জ্বরটা একটু বেশি থাকে তবে ২০০ পাওয়ার দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন-এমবাপেকে টপকে সেরা মেসিই

নাক্সভোমিকা বড়দের হোক বা শিশু চোঁয়া ঢেকুর, অম্বল, পেটে অস্বস্তি, পেটফাঁপা, বদহজম, গ্যাস, মুখ বিস্বাদ, তেতো হয়ে রয়েছে, বিয়ে বাড়িতে গিয়ে খুব বেশি খাওয়া হয়ে গেছে, পেটে অস্বস্তি ইত্যাদির জন্য দারুণ কার্যকরী নাক্সভোম ৩০ এবং বড়দের ২০০ পাওয়ার।

পালসেটিলা বিয়েবাড়ির মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে দেখলেন পেট খারাপ হয়েছে। একটা অস্বস্থি তাহলে খেয়ে নিন পালসেটিলা। ছোটদের জন্য পাওয়ার ৩০ বড়দের ২০০। ৩০ পাওয়ার বড়রা খেলে দিনে পাঁচবার দুটো করে বড়ি খেতে হবে।

ককুলাস ট্রেনে দুলুনিতে, বাসে ঝাঁকুনিতে নৌকার ওঠানামাতে খুব বমি ভাব হয়, মাথা ঘোরে— ককুলাস ৩০। বড়দের জন্য ২০০। এই ওষুধটা বাসে বা ট্রেনে ওঠার পরও খেয়ে নিলে দ্রুত কাজ দেবে।

সাম্বুকাস শিশুদের নাকবন্ধ হয়ে যায়, শ্বাস নিতে পারে না। রাতে ঘুমোতে পারে না। সেক্ষেত্রে সাম্বুকাস ৩০।

আরও পড়ুন-ভাবমূর্তি রক্ষায় দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ, সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা সিসোদিয়ার

কার্বোভেজ সকালে উঠে খালি পেটে হজমের ওষুধ খেয়ে নিন সারাদিন ফিট। হাতের কাছে রাখা থাকুক কার্বোভেজ ২০০।

ক্রিয়োজোট ও স্ট্যাফাইস্যাগ্রিয়া সেনসিটিভ টিথ অর্থাৎ ঠান্ডাজলে দাঁতের কষ্ট বাড়ে, হঠাৎ কারণে- অকারণে দাঁতের যন্ত্রণা কমিয়ে দিতে ক্রিয়োজোট বা কফিয়া ক্রুডা ২০০ খুব কার্যকরী ওষুধ। আর গরম জল বা চা বা অন্য কোনও গরম খাবারে দাঁতের ব্যথা বা শিরশিরানি বাড়লে স্ট্যাফাইস্যাগ্রিয়া ২০০ খুব কার্যকরী।

প্ল্যান্টাগো মাদার
প্ল্যান্টাগো মাদার দাঁতের মাড়িতে লাগালেও যন্ত্রণা উপশমে খুব দ্রুত কাজ দেয়।
ক্যামোমিলা ও মুলেন ওয়েল মাদার ক্যামোমিলা ২০০ খেতে হবে ও মুলেন ওয়েল মাদার দুটো কানে পাঁচ ফোঁটা করে দিনে দু থেকে তিনবার দিলে যন্ত্রণা উপশম হবে, কানের ময়লা পরিষ্কার হবে। শিশুদের ডোজ একটু কম হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন-২২ গজকে মিস করছেন ঋষভ

ম্যাগফস অনেকের পায়ের শিরায় টান ধরে, একটানা চেয়ারে বসে কাজ করতে গিয়ে পায় খিল ধরে এক্ষেত্রে ম্যাগফস ২০০ খেলে দ্রুত খিল-ধরা কমবে।

রাসটস্ক মহিলাদের সারাদিন কাজের পর কোমরে অসম্ভব ব্যথা হয়, পায়ে ব্যথা হয়। একটা কষ্ট থাকে শরীরে। সেক্ষেত্রে রাসটস্ক খুব ভাল ওষুধ। বাতজনিত সমস্যা হলেও এই ওষুধই অব্যর্থ।

অ্যাসিড সালফ খাবার খেলেই জিভ বা মুখ টক হয়ে যায় সেক্ষেত্রে অ্যাসিড সালফ-২০০।

গরমে ফোড়া গরমে ফোড়া হলে তিনটে ধাপে তিনটে ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন। প্রথম ধাপে বেলেডোনা— যখন লালচে হয়ে থাকে, দ্বিতীয় ধাপে লাল ভাব কেটে যখন পেকে যায় তখন হিপারসালফার এবং শেষ ধাপে সাইলেশিয়া খেতে হবে। তাহলে ফোড়া মুক্তি মিলবে। ছোটদের ক্ষেত্রেও একই দাওয়াই শুধু পাওয়ার ৩০ দিতে হবে।

আরও পড়ুন-রাজ্যপাল অধিবেশন বন্ধ রাখতে পারেন না : সুপ্রিম কোর্ট

সাইলেশিয়া ৩০
গলায় মাছের কাটা বিঁধে গেছে, কিছুতেই নামছে না তখন সাইলেশিয়া ৩০ খুব দ্রুত কাজ করে। তবে যাতে পারিবারিক ইতিহাসে টিউবারকুলোসিস রয়েছে তাদের এই ওষুধ খাওয়া যাবে না। যাঁরা চোখের লেন্স ব্যবহার করেন বা পেসমেকার রয়েছে তাঁদের এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। তার পরিবর্তে এনাগেলিস ৩০ খেতে পারে।

শিশু ও বড়দের ডোজ সব ওষুধের পাওয়ার ছোটদের হবে তিরিশ এবং ডোজ হবে গ্লোবিউল বা বড়ি হলে একটি করে দিনে তিনবার আর লিক্যুইড হলে এক ফোঁটা করে দিনে তিনবার। বড়দের ওষুধ হবে ২০০ পাওয়ার। ডোজ হবে দিনে তিনবার৷ বড়ি হলে দুটো করে বা লিক্যুইডের ক্ষেত্রে দু ফোঁটা৷
ওষুধ খাওয়ার আগে এবং পরে দশ মিনিট গ্যাপ রাখুন।

Latest article