বড়দিনকে কেন্দ্র করে বিজেপি রাজ্যগুলিতে গুন্ডামি-ভাঙচুর-অসভ্যতা, এখানে উৎসব, ওখানে হামলা

এ কোন ভারতবর্ষের ছবি তুলে ধরছে ভারতীয় জনতা পার্টি! কেন্দ্রে শাসনে থাকার সুযোগ নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করার চক্রান্ত৷

Must read

প্রতিবেদন : এ কোন ভারতবর্ষের ছবি তুলে ধরছে ভারতীয় জনতা পার্টি! কেন্দ্রে শাসনে থাকার সুযোগ নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে ধর্মের নামে সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করার চক্রান্ত৷ দেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে মুছে দেওয়ার জন্য সুকৌশলে বিজেপি নামিয়ে দিয়েছে বজরং দল বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মতো শাখা সংগঠনগুলোকে৷ এদের লক্ষ্যই হল সংখ্যালঘুদের উৎসব, পার্বণের সময় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা৷ গুন্ডামি করা৷ মারধর করা৷ হামলা-ভাঙচুর-তছনছ করা৷ বড়দিনে বিজেপি রাজ্যগুলিতে এই ঘটনার চিত্রই উঠে এসেছে৷ লজ্জার এই দৃশ্যগুলি মানুষ দেখছেন আর ভাবছেন, এ কোন ভারতবর্ষ! আর ঠিক তখনই বাংলার বুকে বড়দিনকে সামনে রেখে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের জনস্রোত দেখে আশ্বস্ত হচ্ছেন বাংলার মানুষ ও শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা৷ বাংলাই বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা সংস্কৃতির পরিবেশ তৈরি করেছে৷ দেশের মানুষ দেখছেন, বুঝছেন, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছেন৷

আরও পড়ুন-ওড়িশায় বাঙালিকে খুন, উন্নাও কাণ্ডের পান্ডা কুলদীপকে জামিন

অসমের নলবাড়ি জেলার পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরি স্কুলে বজরং দল ঢুকে পড়ে৷ ভাঙচুর চালায়৷ স্কুলের কাছে দোকানে বড়দিনের নানা উপহারসামগ্রী টেনে বের করে তছনছ করে৷ রাস্তায় কাউকে সান্তাক্লজের টুপি পরতে দেখলেই হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ অসমের স্কুলে যখন এই অবস্থা, তখন যোগীরাজ্যে ২৫ ডিসেম্বরের জাতীয় ছুটি বাতিল করেছে৷ তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বাম রাজ্য কেরলও৷ বড়দিনের ছুটি বাতিল করে সুশাসন দিবস পালন করেছে৷ রাম আর বামকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে তা আরও একবার প্রমাণিত হল৷
হরিয়ানার হিসারে হনুমানভক্তদের আবদার আবার অন্যরকম৷ এলাকার ১৬০ বছরের পুরনো চার্চে গিয়ে তারা হনুমান চল্লিশা পড়বে— এমন দাবি জানিয়েছিল! পুলিশি ব্যবস্থাও ছিল৷ কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি৷ চার্চের সামনে বজরং দলের হুজ্জতি আটকাতে বিজেপি পুলিশের একটু কষ্টই হয়েছে৷ উত্তাল হয়েছে এলাকা৷
বড়দিনের ঠিক আগেই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি-শাসিত ছত্তিশগড়ে ধর্মান্তকরণের ধুয়ো তুলে ছত্তিশগড় বনধের ডাক দেওয়া হয়। বুধবার সেই বনধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয়নি ছত্তিশগড়ের মানুষ। যদিও ভাঙচুরের ভয়ে বন্ধ রাখা হয়েছিল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এই পরিস্থিতিতে রাজধানী রায়পুরে একটি শপিংমলে ভাঙচুর চালায় বজরং দলের লোকজন। শপিং মলটিকে বড়দিনের আগে কেন সাজানো হয়েছিল সেই অজুহাতে চলে ভাঙচুর৷ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার জিনিস নষ্ট হয় বলে দাবি মল কর্তৃপক্ষের।
বড়দিনের উৎসবের মাঝেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কর্নাটকের মাইসূরুর অম্বাবিলাস প্যালেস। মৃত্যু হল কমপক্ষে একজনের। গুরুতর জখম হয়েছেন ২মহিলা সহ অন্তত ৭জন। পুলিশ বলছে,সম্ভবত গ্যাসবেলুনের নাইট্রোজেন সিলিন্ডার ফেটেই এই দুর্ঘটনা।

আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে হাঁটতে বেরিয়ে খুন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

বিজেপির এই ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধে উদাহরণ তৈরি করেছে বাংলা৷ বাংলায় পার্ক স্ট্রিট থেকে পানাগড়, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ বড়দিনের আনন্দে মেতেছে৷ জনস্রোত পর্যটন এলাকাগুলিতে৷ পার্ক স্ট্রিটে মানুষের ঢল নামে৷ গভীর রাত পর্যন্ত ছিল জনসুনামি৷ দিঘার জগন্নাথধাম এলাকা জুড়েও আলোর রোশনাই, মানুষের ভিড়৷ চিড়িয়াখানা, ইকোপার্ক, নিকোপার্ক, ভিক্টোরিয়া, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, ব্যান্ডেল চার্চে সর্পিল লাইন দেখা গিয়েছে৷ বাংলার উৎসবের চরিত্র– ধর্ম যার যার, উৎসব সবার–প্রমাণিত হয়েছে৷ বিজেপির ধ্বংসের রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলার সম্প্রীতির সংস্কৃতি দেশ জুড়ে উদাহরণ করল বড়দিনে৷

Latest article