অভিজিৎ ঘোষ: কুকথা নিয়ে জ্ঞান দিতে বসেছে এক শ্রেণির মিডিয়া। লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস। পড়লে বেশ অবাক লাগে। এই বাংলা দেখেছে এবং শুনেছে ক্ষমতায় থাকাকালীন বাম জমানার কুৎসা-কুকথা-অশালীন মন্তব্য এবং সৌজন্য পেরিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের নিম্নস্তরে নামার পারদটা। সিপিএম এখন বিগত বসন্ত। কাউকে তো তাদের জায়গা নিতে হবে! তাই ইদানীং সিপিএমের ফেলে যাওয়া ব্যাটন ধরেছে বিজেপি শিবির। হিংসায় মদত দেওয়া, উত্তেজনা ছড়ানোর পাশাপাশি কুৎসিততম কুকথার ভাণ্ডার খুলে বসেছে। এবং কী আশ্চর্য মিডিয়ার একাংশের সে সব কথা বোধহয় মহাভারতের কথা, অমৃতসমান মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন-আসানসোলে কারখানার ভিতর চলল গুলি, মৃত নিরাপত্তারক্ষী
এই কুকথার অসভ্যতামি শুরু হয়েছে পেগাসাস অধিকারীর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই। বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রতিকতম বেইমান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। তিনি, তাঁর বাবা এবং ভাইয়েরা তৃণমূলে থেকে রাজনৈতিক পরিচয় পেয়েছেন, মন্ত্রী, সাংসদ, চেয়ারম্যান-সহ অসংখ্য পদ পেয়েছেন, গুরুত্ব পেয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন, সুবিধা পেয়েছেন। এরপর ইডি-সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে সোজা ডিগবাজি। সার্কাসের জোকাররাও এই ডিগবাজি দেখে হাততালি দিয়েছে। বাড়ির সদর দরজায় বেঁধে রাখা সারমেয়রা যেমন নতুন কাউকে দেখলেই চিৎকার শুরু করে, এদের কাজও হল সারাদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে চিল-চিৎকার করে যাওয়া। এটাই এদের ব্র্যান্ড ভ্যালু। এটাই এদের রাজনৈতিক গুরুত্ব। এই জন্যই তো এদের নেওয়া। না করলেই দেখবি তবে রে… হুমকি! এদের ক্লীবতা দেখেও লজ্জা পাবেন সুস্থ মানুষ।
মিডিয়ার বিবেকবাবুরা, যাঁদের কোনও এক সকালে চেতনার জ্ঞানচক্ষু উন্মীলন হয়েছে, তাঁদের সারাজীবন স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করে গিয়েছে। কেন বলছি? বাংলার একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, যিনি টানা তৃতীয়বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁকে এই বিশ্বাসঘাতক পেগাসাসের দল কখনও বলেছে বেগম, কখনও পিসি আবার কখনও তোলামূল! কোন দলকে তোলামূল বলছে! যে দল এই দলবদলুদের চিনিয়েছিল, পরিচয় দিয়েছে, প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, তাকে! শুধু তাই নয়, মুখ-চোখের অঙ্গভঙ্গি দেখলেই বোঝা যায় স্কুলে পড়ার সময় এই কারণে মাস্টারমশাইদের কত চড়-থাপ্পড়-বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয়েছে! এই দৃশ্যগুলো যখন ঘটছিল, তখন জাগ্রত বিবেকবাবুরা সম্ভবত চশমার পাওয়ার বদলাতে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-পুজোয় ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খুলল বিদ্যুৎ দফতর, ছুটি বাতিল কর্মীদের
শ্রদ্ধেয় বিবেকবাবু, ইউটিউব দেখুন। সার্চ করুন না! স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করলে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর বাংলায় প্রচারপর্বটা দেখুন না। প্রধানমন্ত্রী কী বলছিলেন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে? ও ও ও দিদি…। যেন পাড়ার ঠেকে বসে চ্যাঙড়া-ছোঁড়ারা নবঢ়াকে দেখে অসভ্যতামি করছে। তখন কোথায় ছিলেন বিবেকবান মিডিয়ার একাংশ? কারা প্রতিবাদ করেছিলেন? পারলে ক্লিপিংস আর পিডিএফ পাঠাবেন?
বিরোধী দলনেতা। পেগাসাস অধিকারী বা লোডশেডিং অধিকারী বলেই এখন প্রবল পরিচিত। তাঁর মনমতো প্রশ্ন না হলেই প্রকাশ্যে বলছেন চটিচাটা মিডিয়া। সাহস হয় কী করে? এত স্পর্ধা কে দিয়েছে? যাকে কাগজে মুড়িয়ে ক্যামেরার সামনে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে, সারদাকর্তা প্রকাশ্যে যার তোলাবাজির কথা বলেছেন, সেই আহাম্মক মিডিয়াকে বলছে চটিচাটা? বিবেকবাবু, আপনার হাউসকে বলেনি, তাই মরগে যা! প্রতিবাদের সময় চক্ষু-কর্ণ-নাসিকার বিভ্রম হয় বুঝি? ওদের দলের নেতা দিলীপ ঘোষ বলছেন, বাঁশ রাখুন, একদিক ছুলে রাখুন, কাজে লাগবে। একবার ছিঃও বলেননি। এগুলো তো বিদ্যাসাগরীয় বাংলা! তাই না!
আরও পড়ুন-আমার মতই বোহেমিয়ান আমার দূর্গা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আক্রমণের আর এক লক্ষ্যবস্তু। পেগাসাসদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে মিডিয়ার একাংশ বলছে, অভিষেক নাকি পুলিশকে কপালে গুলি করতে বলেছেন! বাংলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা বলবেন, অভিষেক সেই আক্রান্ত পুলিশ অফিসারকে স্যালুট করেছেন তাঁর ধৈর্য আর সংযমের জন্য। পাশবিক আক্রমণের পরেও তিনি গুলি চালানো তো দূরের কথা, মার খেয়েছেন। মৃত্যুমুখে পড়েছেন। অভিষেক বলেছেন, এসিপি দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জায়গায় তিনি থাকলে গুলি চালাতেন। আর একশ্রেণির মিডিয়া বলে দিল অভিষেক গুলি চালাতে বলেছেন! গল্পের গরু গাছে উঠে গেল! একেবারে হয় কে নয়! কেন এই মিথ্যাচার? বিবেকবাবুদের বিবেক কি কারওর কাছে বন্ধক দেওয়া আছে? এই মিথ্যাচারটা তো সমানে চালিয়ে গেলেন। লজ্জা হচ্ছে না! ভুলে গেলেন, কেন্দ্রের মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর দিল্লির বিধানসভা ভোটের সময় বলেছিলেন, দেশ কে গদ্দার কো/ গোলি মারো শালোকো। কই বিবেকবাবুরা তখন তো প্রতিবাদ করেননি? ওটা বোধহয় গুলি করতে বলা নয়, ফুল ছুঁড়তে বলা। কিংবা সায়ন্তন বসু? পরিষ্কার ভাষায় ২০১৯-এর ভোটের পর ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বলব বুক লক্ষ্য করে গুলি চালাতে। গভীর রাতে বিবেক জেগে ওঠার সময় এগুলো মনে থাকে না? তথাকথিত বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের সাংবাদিক ন্যায়বিচার করতে বসেছেন। তাঁকে যে কতো কূল রাখতে হচ্ছে!
আরও পড়ুন-যানজট যেন না হয়, সুজিতকে মুখ্যমন্ত্রী
সমস্যা হচ্ছে এই তৃণমূল কংগ্রেসে অনেক শ্রেণির মানুষ আছেন যাঁরা কারসাজি করেন না। হাঁটুর উপর ধুতি পরেন। ফলে তাঁদের বাড়িতে এজেন্সি পাঠিয়ে বদনাম করা সহজ হয়। কিন্তু দলবদলুরা ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে-মুছে সাফ। যে তৃণমূলের রক্তে তাদের রাজনৈতিক জীবনের প্রাণ প্রতিষ্ঠা তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা এবং নোংরামি করতে এতটুকু দ্বিধান্বিত নয়। এদের রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তো সব মহলেই। এদের ব্যক্তিগত রুচি-অভিরুচি নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-পুজোর আগে পুলিশে রদবদল
বিরোধী নেতা বা নেত্রী কেমন হবেন তার উদাহরণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা ভারতবর্ষ তাঁকে একসময় বিরোধী নেত্রী হিসেবে সেলাম করেছেন, এখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেশকে বিকল্প পথ দেখাচ্ছেন। কিন্তু এখনকার বিরোধী দলনেতা? কোনও মানুষ যদি তাঁর ভুল ধরেন তাহলে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করতে পিছপা হন না। তার কারণ, তাঁর সাংস্কৃতিক অভিধান সেটাই বলছে। নবান্ন অভিযানের দিন হাস্যকর নাটক করলেন। লড়াইয়ের বদলে পুলিশের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ। একা একা পুলিশের গাড়িতে উঠে গেলেন। গুটিকয়েক দলীয় কর্মী রাস্তায় পড়ে রইলেন। তিনি লালবাজারে গিয়ে ফেসবুক লাইভ করলেন। স্বাভাবিকভাবেই আক্রমণ হয়েছে। আক্রমণ হয়েছে মহিলা পুলিশ দেখে তাঁর মন্তব্য নিয়েও। এই মন্তব্য কমব্যাট করতে না পেরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সাংসদ এবং যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপরিচয় নিয়ে কাদা মাখামাখি করলেন। সেইসব মিডিয়ার লজ্জা হওয়া উচিত যাঁরা এই নোংরামি দেখার পরেও নীতিজ্ঞানের কথা শুনিয়ে চলেছে। সত্যি বলতে ইচ্ছে করছে, তোদের কাপড় কোথায়?