কীভাবে সামাল দেবেন মৃগী

বিশ্বে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মানুষের মৃগীরোগ রয়েছে। মৃগী নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। রোগটির সঙ্গে যোঝা সহজ কাজ নয়। বংশগত ছাড়াও এই রোগের রয়েছে আরও অনেক কারণ। রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিবছর নভেম্বরে পালিত হয় জাতীয় মৃগীদিবস। কীভাবে সামাল দেবেন মৃগীরোগ। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

বিশ্বে প্রথমবার এমন যন্ত্র তৈরি হয়েছে, যা মস্তিষ্কে বসিয়েই নাকি মৃগীরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। সম্প্রতি মৃগীরোগে আক্রান্ত এক কিশোর ওরান নোলসনের মস্তিষ্কে সেই যন্ত্র বসালেন ব্রিটেনের চিকিৎসকেরা। এই যন্ত্রের নাম ‘নিউরোস্টিমুলেটর’। গবেষকেরা বলেছেন, এই যন্ত্র বসানোর পরেই ওরানের খিঁচুনি প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে। খবরটা আশার হলেও এখনও বহু গবেষণা বাকি। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশে এখনও মৃগীরোগী নিয়ে দিশেহারা মানুষ। তাই এই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিবছর নভেম্বরে পালিত হয় জাতীয় মৃগীদিবস।
কী হয় মৃগী হলে
মৃগী একটা স্নায়বিক রোগ। যাতে প্রাপ্তবয়স্ক হন বা শিশু উভয়েরই কনভালশন বা খিঁচুনি হতে থাকে। জন্ম থেকে এই রোগের লক্ষণ সবার থাকে না হঠাৎ হানা দেয়। ফলে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয় আর এতেই ভয়ের শুরু। কারণ সময় যত গড়ায় পরিস্থিতি তত জটিল হয়। বিশেষ করে পরিবারে কারও এই অসুখ থাকলে আরও বেশি সচেতন থাকতে হয়। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে সবসময়ই যে তা মৃগী, তা নয়। তবে এদের একটা অংশ মৃগীরোগের শিকার হয়। তাই তেমনটা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে কারণ
জিনগত এপিলেপসি বা মৃগীরোগ ছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণে কোন শিশু মৃগীতে আক্রান্ত হতে পারে যেমন, জন্মের সময় শিশুর যদি কোনও সমস্যা থাকে তাহলে ভবিষ্যতে মৃগী হানা দিতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর বাড়বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ, কথা বলতে শেখা, বসতে শেখা, দাঁড়ানো— প্রায় সবই দেরিতে হচ্ছে, তখনই কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমন এপিলেপসির আশঙ্কা থাকে।
শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন পূর্ণতা না পেলে বা কোনও জখম থাকলে এই অসুখ হানা দেয়।
শিশু-মস্তিষ্কে আঘাত পেলে বা মস্তিষ্কে কোনও জটিল অস্ত্রোপচার হলে এই অসুখের শিকার হতে পারে।

আরও পড়ুন-বন্ধ করা হল না রেলগেট, ঝাড়খণ্ডে চলন্ত ট্রেনে ধাক্কা মেরে চুরমার ট্রাক

প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে কারণ
বংশগত কারণে মৃগীরোগ হয়
মস্তিষ্কে টিউমারের মতো যদি কোনও সেকেন্ডারি ডিজিজ থাকে তা হলে হতে পারে।
মস্তিষ্কে মেনিনজাইটিস হলে হতে পারে।
ব্রেন ইনজুরি সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব।
জন্মগত ত্রুটি থাকলেও মৃগী হতে পারে।
অতিরিক্ত জ্বর হলে সেই জ্বরের প্রকোপে মৃগী হতে পারে।
উপসর্গ
এপিলেপসি বা মৃগীর ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি একটা বড় লক্ষণ।
খিঁচুনি যদি ১০-১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, ঘন ঘন হয় ও শরীরের কোনও একটি পাশে খিঁচুনি হতে থাকে, তা হলে সচেতন হোন।
দীর্ঘদিন যাবৎ মৃগীরোগে ভুগলে ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে স্বভাব-আচার-আচরণে পরিবর্তন আসে।
মানসিক অবসাদ আসে এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়।
মৃগীরোগীর ব্যক্তিত্ব
ঝগড়া করার প্রবণতা বেশি হয়
আত্মকেন্দ্রিক স্বভাব।
মেজাজ খিটখিটে হয়।
যে-কোনও বিষয়ে খুব দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা দেখা দেয়।
ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়, বুদ্ধির জোর কমতে শুরু করে।
সতর্কতা
শিশু হোক বা বড় খিঁচুনি হওয়ার সময় যদি দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে তবে শুইয়ে দিন।
শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক রোগী কাউকেই জোর করে চেপে ধরে থাকবেন না। জিভের ওপর দাঁত পড়ে গেলে জোরাজুরি করবেন না। আলগা করে শুধু মাথাটা ধরে থাকুন।
খিঁচুনি শেষ হলে পাশ ফিরিয়ে দিন। জামাকাপড় ঢিলে করে দিন। রোগী ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে কি না দেখুন।
মুখের তরল যেন কোনও ভাবেই শ্বাসনালিতে না পৌঁছে যায় সে-দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
খিঁচুনি যদি দশমিনিট স্থায়ী হয় তবে রোগীর জ্ঞান ফিরলে দ্রুত অভিজ্ঞ কোনও নিউরোসার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

আরও পড়ুন-দূষণ রুখতে কৃত্রিম বৃষ্টি চায় দিল্লি সরকার, নীরব কেন্দ্র

পরীক্ষানিরীক্ষা
লংটার্ম ভিডিও ইইজি। এই টেস্ট করলেই বোঝা যায় রোগীর মস্তিষ্কের কোন অংশ থেকে মৃগী রোগটির উৎপত্তি।
এ-ছাড়া এমআরআই, স্পেক্ট স্ক্যান, পিইটি স্ক্যান এগুলো করলেও সহজে দেখে নেওয়া যায় কোথা থেকে রোগের উৎপত্তি। এবার রোগের গুরুত্ব অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। প্রয়োজনে সার্জারি করে সেই জায়গাটা কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
চিকিৎসা
প্রথমেই এটা জানা জরুরি যে রোগীর মৃগীর কারণ বংশগত না সেটা প্রাইমারি এপিলেপ্সি অথবা এর অন্য কোনও কারণ রয়েছে।
কিছু মৃগী বা এপিলেপ্সির চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করেন চিকিৎসক। কিন্তু যদি দেখা যায় নিয়মিত উচ্চমাত্রার ওষুধ খেয়েও খিঁচুনি কমছে না তাহলে অবশ্যই সার্জারি করতে হবে যাকে বলা হয় এপিলেপটিক সার্জারি।
কিন্তু মস্তিষ্কের এপিলেপ্সি সেন্টার যদি এমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয় যা বাদ চলে গেলে শরীরের কিছু ক্রিয়াশীলতা নষ্ট হতে পারে যেমন এমন একটা অংশ যা হাত-পা নাড়ানো, কথা-বলা— এই জায়গাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সেই অংশ কেটে বাদ দেওয়া যাবে না। একে বলা হয় ইলোকোয়েন্ট এরিয়া এপিলেপ্টিক জোন। সেক্ষেত্রে অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেমন ডিপ ভেন স্টিমুলেশন, ভেগাল নার্ভ স্টিমুলেশন ইত্যাদি পদ্ধতিগুলোর ক্ষেত্রে পেসমেকারের মতো যন্ত্র বসিয়ে মৃগীরোগীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এসব ক্ষেত্রে অপারেশনের দরকার পড়ে না।
নানা ধরনের সার্জারি রয়েছে মৃগীরোগে যেমন রিসেকশন, ডিসকানেকশন, মাল্টিপল সাবপায়াল, করপাস ক্যালজোটমি ইত্যাদি মৃগী রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসক নির্ধারণ করেন কোনটা জরুরি তাঁর ক্ষেত্রে।

Latest article