প্রকৃতি-স্থাপত্যের খোঁজে হৃদমাঝারে মধ্যপ্রদেশ…

ভারতের হৃদয়ে অবস্থান করছে মধ্যপ্রদেশ। প্রকৃতি, তীর্থস্থান, ইতিহাস, ভাস্কর্য— কী নেই এই রাজ্যে! রাজ্যটি আয়তনে এত বড় যে একবারে দেখে শেষ করা যায় না। বারবার যেতে হয়। হাতে বেশিদিন সময় না থাকলে কীভাবে মধ্যপ্রদেশের বিশেষ জায়গাগুলি ঘুরবেন তারই গাইডলাইন দিচ্ছেন অনুরাধা রায়

Must read

মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) কয়েকটি পর্যটনস্থান গোটা বিশ্বের মানুষকেই আকৃষ্ট করেছে। এর মধ্যে ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানও রয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। প্রাগৈতিহাসিক গুহা, তীর্থস্থান এবং অভয়ারণ্যের ন্যায্য মিশ্রণে ভরপুর মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) কাউকেই নিরাশ করে না। প্রত্যেক বয়সের মানুষই এখানে এসে সমান আনন্দ উপভোগ করেন। সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে। মধ্যপ্রদেশে আসা পর্যটকেরা বিশেষ করে এই রাজ্যের সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের প্রেমে পড়ে যান। তাই বারবার আকর্ষণ করে এই রাজ্য। তবে একবার গিয়ে পুরো মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) ঘোরা সম্ভব নয়। তাই যাওয়ার আগেই আপনাদের একটি ম্যাপ তৈরি করে নিতে হবে। ঠিক কোন দিকটায় যাবেন। এখানে খাজুরাহো, বান্ধবগড়, কানহা, জবলপুর, পাঁচমাড়ি কীভাবে যাবেন, ঘুরবেন এবং কোথায় থাকবেন তারই খুঁটিনাটি সন্ধান দেওয়া হল।

খাজুরাহো
১৩ বর্গকিমি জুড়ে খাজুরাহোর মন্দিররাজি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত— ওয়েস্টার্ন, ইস্টার্ন ও সাদার্ন। তবে পশ্চিমি গোষ্ঠীরই প্রশস্তি বেশি। পশ্চিম অঞ্চলই খাজুরাহোর প্রাণকেন্দ্র। ১২টি মন্দির নিয়ে পশ্চিমের মন্দিররাজি। সবগুলি না পারলে অবশ্যই দেখবেন কাণ্ডারীয় মহাদেব, লক্ষ্মণ, বিশ্বনাথ, চিত্রগুপ্ত ও দেবী জগদম্বার মন্দির। পশ্চিম গোষ্ঠীর দক্ষিণে শিবসাগর বা লেক। সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে চৌষাট যোগিনী মন্দির। দুলাদেও আর চতুর্ভুজ, এই দুই মন্দির নিয়ে দক্ষিণ গোষ্ঠী। খাজুরাহোর মেন স্কোয়ার থেকে দেড় কিমি দক্ষিণে দুলাদেও মন্দির। আর দুলাদেও থেকে দেড় এবং পশ্চিম থেকে চার কিমি দূরে বিমানবন্দরের পথে শিখরধর্মী চতুর্ভুজ মন্দির। পশ্চিম তথা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিমি পুবে নিনোরা তালের পাড়ে দুটি ভাগে পুবের মন্দিররাজি। ৩টি জৈন মন্দির, একই চত্বরে। আর ৩টি হিন্দু মন্দির গ্রামময় ছড়িয়ে। আদিনাথ, পার্শ্বনাথ ও শান্তিনাথ মন্দির দেখে তার পর দেখে নিন জবারী মন্দির, বামন মন্দির ও ব্রহ্মা মন্দির।

পান্না জাতীয় উদ্যান
সকালেই বেরিয়ে পড়ুন পান্না জাতীয় উদ্যানে। উদ্যানের মাডলা গেট ২৪ কিমি। জাতীয় উদ্যান দেখে আরও ৭ কিমি পশ্চিমে গিয়ে দেখে নিন পাণ্ডব ফল্স। খাজুরাহো ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে ৫ কিমি উত্তরে ১৯ শতকের পাহাড়ি দুর্গ তথা রাজনগর প্রাসাদ এবং আরও ১৯ কিমি উত্তরে রাজা ওয়াটারফলস ঘুরতে পারেন।

আরও পড়ুন-মৃতের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার

বান্ধবগড়
পান্না থেকে পৌঁছে যাবেন বান্ধবগড়, দূরত্ব ২২৭ কিমি। বাসে গেলে সাতনায় বদল করতে হবে। না হলে গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। রাতে বান্ধবগড়ে থেকে পরের দিন সকালে ও বিকেলে জঙ্গল সাফারি করতে পারেন। ওই দিনটাও বান্ধবগড়েই থাকতে হবে। একাধিক হোটেল রয়েছে থাকার জন্য। সবরকম বাজেটের থাকার জায়গা পাওয়া যায়।

কানহা
বান্ধবগড় থেকে পরের দিন সকালে বেরিয়ে পড়ুন। গাড়ি ভাড়া করে কানহার কিসলি বা মুক্কি গেটে যেতে হবে। দূরত্ব কম-বেশি ২৫০ কিমি। সময় থাকলে বিকেলে একটা সাফারি করে নিতে পারেন। রাত্রিবাস কানহা।

জবলপুর
মাঝে একটা দিন কানহাতে কাটিয়ে গাড়ি ভাড়া করে রওনা দিতে হবে জবলপুরের উদ্দেশে। কানহা থেকে দূরত্ব ১৯৭ কিমি। জবলপুরের মূল আকর্ষণ মার্বেল রকস, শহর থেকে ২৩ কিমি পশ্চিমে। নর্মদা নদীর খাতে দুই তীরে শ’খানেক ফুট উঁচু খাড়া পাহাড় ম্যাগনেসিয়াম চুনাপাথরের। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোয় সে এক অপরূপ দৃশ্য। নৌকাবিহার করুন নর্মদার বুকে। পাহাড় যেখানে শেষ হয়েছে তার নাম মানকিস লিপ, ডান হাতে দত্তাত্রেয় মুনির গুহা। মহর্ষি ভৃগুও তপস্যা করেছেন এই পাহাড়ে। এই জায়গার নাম ভেরাঘাট। ভেরাঘাটের কাছেই ১০৮ ধাপ সিঁড়ি উঠে পাহাড়চুড়োয় চৌষাট যোগিনী মন্দির। আছে ধুঁয়াধার জলপ্রপাত— নর্মদা নদী শ’খানেক ফুট নিচে আছড়ে পড়েছে। মার্বেল রকসের পথে ৭ কিমি দূরে গোন্ড রাজাদের এককালের রাজপ্রাসাদ তথা মদলমহল দুর্গ। দুর্গের পাহাড়ি পথে ব্যালান্সিং রক— একের ওপরে আর এক পাথরখণ্ডের অবস্থান মুগ্ধ করে। বাস বা ট্যাক্সিতে পাহাড়তলি পৌঁছে পায়ে হেঁটে দুর্গ। মার্বেল রকসের পথেই পিসান হরি জৈন মন্দির। শহরে দেখুন মতিলাল পার্ক, রানি দুর্গাবতী মিউজিয়াম।

পাঁচমাড়ি
জবলপুর থেকে পিপারিয়া যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। সব থেকে ভাল হয়, সকালে বিন্ধ্যাঞ্চল এক্সপ্রেস বা সংঘমিত্রা এক্সপ্রেস। পিপারিয়া পৌঁছে যাবেন সকাল-সকাল। পিপারিয়া থেকে পাঁচমাড়ি ৫৪ কিমি পথ, ঘণ্টায়-ঘণ্টায় বাস। গাড়িভাড়া করেও যেতে পারেন। অথবা জবলপুর থেকে বাসে এলে গদরওয়ারায় বাস বদল করতে হবে। জবলপুর থেকে সরাসরি গাড়িভাড়া করে আসতে পারেন পাঁচমাড়ি, দূরত্ব ২৫১ কিমি। রাত্রিবাস করবেন পাঁচমাড়িতে। কী কী দেখবেন? পাণ্ডব গুহা, হান্ডি খো, প্রিয়দর্শিনী পয়েন্ট, মহাদেব গুহা, মারাদেও গুহা, পার্বতী গুহা, গুপ্ত মহাদেবের গুহা, চৌরাগড় পাহাড় শিরে শিবমন্দির, রাজেন্দ্রগিরি। ধূপগড়, জটাশংকর গুহা, হার্পারস কেভ, মূল পথের বাঁয়ে অম্বাদেবীর মন্দির, ডাচেস ফলস, সুন্দরকুণ্ড, যমুনা জলপ্রপাত, লিটল ফলস, রজত প্রপাত, বিগ ফলস, আইরিন পু্ল, চার্চ ইত্যাদি-সহ ৫০টিরও বেশি ভিউ পয়েন্ট। পাঁচমাড়ি অবস্থানে অবশ্যই ঘুরে নেবেন সাতপুরা ন্যাশনাল পার্ক। রজত প্রপাত, অপ্সরা বিহার, পাঞ্চালী কুণ্ডের অবস্থান জাতীয় উদ্যানে।

কীভাবে যাবেন?
দমদম বিমানবন্দর থেকে আকাশপথে যাওয়া যায়। নামা যায় ইন্দোর, ভোপাল অথবা গোয়ালিয়র বিমানবন্দরে। ট্রেনে গেলে হাওড়া-গোয়ালিয়র চম্বল এক্সপ্রেস (শুধুমাত্র রবিবার ও বুধবার) এবং হাওড়া-মথুরা চম্বল এক্সপ্রেস (শুধুমাত্র শুক্রবার চলে)। এছাড়া কলকাতা থেকে ভোপাল ও সেখান থেকে ব্রেক জার্নি করে পৌঁছতে পারেন কুনো জাতীয় উদ্যানের নিকটবর্তী কোনও স্টেশনে।

কোথায় থাকবেন?
প্রতিটি বেড়ানোর জায়গায় আছে হোটেল। থাকা ও খাওয়া-সহ খরচ নাগালের মধ্যে। যেকোনও সময় মধ্যপ্রদেশে যাওয়া যায়। এমনই একটি জায়গা যেখানে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত যখনই সময় থাকবে বেরিয়ে পড়তে পারেন।

Latest article