মুম্বই, ৪ জুলাই : চিৎকারে তখন কথাই শোনা যাচ্ছিল না। রোহিতকে অপেক্ষা করতে হল। জনতা থামতেই বলে উঠলেন, সবাইকে ধন্যবাদ। দেশে ফেরার পর থেকে অসাধারণ সংবর্ধনা পাচ্ছি। এই ট্রফি আমার কাছে অনেক। কিন্তু এই ট্রফি গোটা দেশের। সব প্লেয়ারের। সবার।
ওয়াংখেড়েতে বিকেল ৩টে থেকে ভিড় জমেছিল। রাত ৯টা নাগাদ বিশ্বজয়ীরা স্টেডিয়ামে ঢুকতেই জনতা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল। রোহিত বললেন, দারুণ অভিজ্ঞতা। মুম্বই কখনও হতাশ করে না। এতদিন পর ট্রফি এল। সব বিশ্বকাপই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই মাঠে ২০১১-তে ভারত কাপ জিতেছিল। রোহিতের মুখে এদিন ফের শোনা গেল সূর্যর সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচের কথা।
আরও পড়ুন-ড্র করল ডায়মন্ড হারবার
বিরাট বলছিলেন, কাপ জয়ের পর চারটে দিন গেল রোলার কোস্টারে চাপার মতো। যখন বাড়ি ফিরবেন বলে ভাবছিলেন, তখনই হারিকেনে আটকে গেলেন। তারপর দেশে ফিরে অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তাঁর মুখে শোনা গেল জসপ্রীত বুমরার কথাও। বললেন, এবার নতুনদের দায়িত্ব নিতে হবে। একটু আগে রাহুল দ্রাবিড়ও জনতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন। জানালেন, এই দলের সঙ্গে কাজ করা বিরল অভিজ্ঞতা। যা চিরকাল মাথায় থেকে যাবে। বিরাটের মুখেও ২০১১ বিশ্বকাপের কথা শোনা গেল। বললেন, তখন শচীন-পাজি আমাদের ঘাড়ে ভারতীয় ক্রিকেটের দায়িত্ব ছেড়ে গিয়েছিল। আমি আর রোহিতও সেটাই করে গেলাম টি-২০ ফরম্যাটে।
বুমরা পরে বলছিলেন, ছেলের সামনে কাপ জিতে তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। রোহিত-বিরাট-জাদেজাদের তিনি হিরো বলে এটাও জানালেন, তাঁদের মতো তিনিও বিদায়বেলায় এমনই ভালবাসা পাবেন বলে মনে করছেন।
নরিম্যান পয়েন্ট থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে রোহিত শর্মারা যখন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের দিকে এগোচ্ছেন, রাস্তায় জনস্রোত। সবার হাতে ফোন। সবাই চান মুহূর্তটা মুঠোবন্দি করতে। হুডখোলা বাসে ক্রিকেটাররাই কম কী! বিরাটকে দেখা গেল জনতার ছবি তুলছেন।
আরও পড়ুন-প্রতারণার অভিযোগে বিজেপির পঞ্চায়েতে তালা দিলেন মহিলারা
সকালে দিল্লি বিমানবন্দরে নেমে রাজধানীর অনুষ্ঠান সেরে বিকেলে ক্রিকেটাররা মুম্বইয়ে পা রেখেছেন। বৃষ্টিতে একটু দেরি হল। জনতার অবশ্য উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি। ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টসের (এনপিসিএ) সামনে থেকে বাসে উঠেছিলেন রোহিতরা। ভিকট্রি প্যারেড শেষ হল ওয়াংখেড়েতে এসে।
সন্ধ্যার এই বাস যাত্রা মনে করাচ্ছিল ২০১১-র ২ এপ্রিলকে। সেদিন মধ্যরাতে ভারতীয় দলকে ঘিরে এমনই চেহারা হয়েছিল মুম্বইয়ের রাজপথের। কিন্তু মাঝরাতে স্টেডিয়াম থেকে ধোনিরা যখন টিম হোটেলের দিকে রওনা হন, রাস্তায় মানুষের ঢল। ওয়াংখেড়ে থেকে বেরোনোর মুখে ধোনিদের বাস জনসমুদ্রের মুখে পড়ে গিয়েছিল। ২০১১-র সেই দলে সুযোগ হয়নি রোহিতের। সেদিন মুম্বইয়ে থাকলেও তিনি মাঠে আসেননি। ১৩ বছর ধরে পুষে রাখা অব্যক্ত বেদনা যেন বৃহস্পতিবার রাতে আরব সাগরে ভাসিয়ে দিলেন ভারত অধিনায়ক। দিল্লিতে নামার পর তাঁকে ভাংড়া নাচতে দেখা গিয়েছিল। জনতার দাবিতে রোহিত-বিরাটকে একসঙ্গে ট্রফি হাতে দেখা গেল হুডখোলা বাসেও। এই দু’জন আর কখনও টি-২০ বিশ্বকাপ হাতে তুলবেন না। পরে এই ফরম্যাট থেকে বিদায় নেন রবীন্দ্র জাদেজাও।
শাপমোচন হল বোধহয় হার্দিক পাণ্ডিয়ারও। হুডখোলা বাসে সদর্পে ট্রফি ট্রফি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মুম্বই তাঁকে বিদ্রুপ করেছিল। এবারের আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স রোহিতকে সরিয়ে নেতা করেছিল হার্দিককে। যা পছন্দ হয়নি মুম্বইকরদের। ফলে বরোদা অলরাউন্ডার যেখানেই খেলতে নেমেছেন, জনতা তাঁকে আওয়াজ দিয়েছে। মুম্বইয়েও তিনি ছাড় পাননি। কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপে যেন নবজন্ম হয়েছে রোহিতের ডেপুটির। এদিন রোহিত যখন হার্দিকের প্রশংসা করছেন, গোটা স্টেডিয়াম তাঁর জন্য হর্ষধ্বনি করে উঠেছে। শাপমোচন প্রমাণে আর কী লাগে।
মঞ্চের অনুষ্ঠান শেষ হতেই ভিকট্রি ল্যাপ দেন বিরাটরা। ১৩ বছর আগের ছবিটাই আবার যেন সামনে চলে এল। তরুণ বিরাটের কাঁধে চড়ে সেদিন মাঠ ঘুরেছিলেন শচীন। ইতিহাস এভাবেই ফিরে ফিরে আসে!