প্রতিবেদন : কেন্দ্রের বাজেটে আয়কর ছাড়ের যে ঘোষণা করা হয়েছে তা আসলে যে মানুষের চোখে ধুলো দেওয়া, একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে। বিপুল করের বোঝা ইতিমধ্যেই আমজনতার মাথায়। তার মাঝে আয়কর ছাড়ের গল্প অর্থহীন এবং ছেলে ভোলানো খেলা।
আরও পড়ুন-আরও লগ্নি, আরও কর্মসংস্থান, কাল শুরু বিজিবিএস, প্রস্তুতি তুঙ্গে
কর বা ট্যাক্সের বোঝার চাপে দেশের ১৪০ কোটির বেশি মানুষ কার্যত ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। মাথায় রাখতে হবে দেশের প্রত্যেকটি পণ্যের উপর জিএসটি চাপিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার। এই জিএসটির আক্ষরিক অর্থ ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স’ হলেও আসলে মানুষ এখন এটিকে বলছেন ‘গভর্নমেন্ট স্পেশাল ট্যাক্স’! গরিব থেকে উচ্চবিত্ত, কৃষক থেকে শ্রমিককে আলপিন থেকে মেডিসিন, মুদির দোকান থেকে চায়ের দোকান, শাড়ি থেকে সোনার দোকান, চিঁড়ে থেকে জিরে-মুড়ি কিনতে গেলে জিএসটি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে জিএসটি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে মানুষকে। নাভিশ্বাস ১০০% জনসংখ্যার উপর। জীবনযাত্রার প্রত্যেকটি পর্বে এই ট্যাক্স। হাইওয়ে দিয়ে যেতে গেলেও ট্যাক্স, হোটেলে মাথা গোঁজার জন্য রাত কাটাতে গেলেও ট্যাক্সের বোঝা। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট অবস্থান, আমি এবং আমার দল সাধারণ মানুষের উপর কর চাপানোর বিরোধী। এই পরিস্থিতিতে আয়কর ছাড় নিয়ে মিথ্যাচারের বিজ্ঞাপন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। প্রথম বিষয়ই হল, আয়কর দেন দেশের মধ্যে মাত্র ৮ কোটি মানুষ। এই ৮ কোটি মানুষের মধ্যে আবার ৪ কোটি মানুষ ট্যাক্স ফাইল করলেও আয়কর দিতে হয় না। যাঁরা ছাড় পাচ্ছেন তাঁদেরকেও জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে জিএসটি দিতে হচ্ছে। এই ছাড় দেশের জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে কোনও গুনতিতেই আসে না। যেটা কমানো হয়েছে তার থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা তোলা হচ্ছে কিছু কিনতে গেলে, রেস্টুরেন্টে গেলে। এলআইসি বা জীবনবিমা, স্বাস্থ্যবিমায় ১৮% জিএসটি। বারবার সরকারের কাছে জিএসটি কমানোর দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। কেন্দ্রের এই আয়কর ছাড়ের গল্প এক শ্রেণির মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। দেশের মানুষের মাজা অনেক আগেই জিএসটির মাধ্যমে ভেঙে দিয়েছে বিজেপি সরকার।
আরও পড়ুন-যাত্রার মঞ্চেও মমতাস্পর্শ
রাজ্যের ডিএ প্রসঙ্গ নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানা কথা শোনা যায়। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই সরকারি কর্মচারীদের অবসরের পর পেনশন দেওয়া হয়। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এ-ব্যবস্থা নেই। পেনশনের অর্থ যদি সরকারকে না দিতে হত, তাহলে সেই টাকায় ঋণ শোধ থেকে শুরু করে প্রতি মাসে আরও অনেক সামাজিক কাজ করা যেত। যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁরা মাথায় রাখবেন কেন্দ্র প্রত্যেকটি রাজ্য থেকে টাকা তুলে নিয়ে গিয়ে নিজেদের মতো দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের সেই উপায় নেই। রাজ্যকে কেন্দ্রের উপর ভরসা করতে হয়। কিন্তু কেন্দ্র ভুলে যায় রাজ্য থেকে টাকা না গেলে কেন্দ্রের সরকার অচল।