নয়াদিল্লি: মোদি জমানায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে গুরুত্ব হারাল ভারতের মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি জেনেভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি)-এর আন্তর্জাতিক মর্যাদা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিল। গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনস দ্বারা পরিচালিত পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে ভারতের এনএইচআরসি প্যারিস-নীতি অনুসারে স্বায়ত্তশাসন ও কার্যকারিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে এনএইচআরসি -এর তদন্ত প্রক্রিয়াতে পুলিশ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকা, বৈচিত্র্য এবং বহুত্ববাদের অভাব, কমিশনের সদস্যদের অস্বচ্ছ নির্বাচন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া, মহাসচিবের নিয়োগে সীমাবদ্ধতা, অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার সাথে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না করা এবং মানবাধিকার ইস্যুগুলিতে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে না পারা।
আরও পড়ুন-বাংলাদেশের নির্বাচন বয়কটের ডাক হাসিনার
২০১১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্যারিস নীতিগুলি মেনে চলার জন্য প্রতিবারের পর্যালোচনায় ভারতে মানবাধিকার কমিশনের গঠনপ্রক্রিয়া ও কার্যকারিতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে এর সংস্কার করার জন্য লাগাতার চাপ দেওয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এই প্রক্রিয়ার জেরেই উপকমিটি গত দু’বার (একবার ২০২৩ সালে এবং তারপর ২০২৪ সালে) এনএইচআরসি-এর মর্যাদা স্থগিত করে। এক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ হল একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ, যা নির্দেশ করে যে এই সংস্থার ন্যূনতম মান পূরণে বড় ঘাটতি রয়েছে এবং একইসাথে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার হয়নি। পরপর দুবছর সতর্ক করার পরে কোনও কার্যকর পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে স্বীকৃতি সংক্রান্ত উপকমিটি ভারতের এনএইচআরসিকে ‘এ’ স্ট্যাটাস থেকে ‘বি’ স্ট্যাটাসে নামিয়ে আনার চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। এই অবনমনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল বিচারপতি অরুণ মিশ্রের চেয়ারপার্সন থাকাকালীন। বর্তমান চেয়ারপার্সন বিচারপতি ভি. রামাসুব্রহ্মণ্যমের ১০ মাসের মেয়াদের মধ্যেই চূড়ান্ত সুপারিশটি এসেছে। তবে এই সুপারিশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনস ব্যুরোতে আপিল বা পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে জেনেভায় যা উত্থাপন করা যাবে। বর্তমানে গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনস ব্যুরোর সদস্য ১৫টি দেশ। ভারতও এর সদস্য। গত কয়েক বছরের ক্রমাগত ঘাটতিগুলি দূর করার জন্য যে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এখন তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ভারতকে পেশ করতে হবে। আশ্চর্যের বিষয়, তথ্য জানার অধিকার আইন -এর সক্রিয় প্রকাশের ম্যান্ডেট থাকা সত্ত্বেও এনএইচআরসি-এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই অবনমন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। মূল্যায়নের ফলাফল যাই হোক না কেন, বর্তমান বিজেপি জমানায় সারা দেশের মানবাধিকার কর্মীরা এনএইচআরসি-এর ভূমিকা নিয়ে হতাশ। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু ও নির্যাতিতদের সঠিক সুরক্ষা দেওয়ার বদলে মোদি জমানায় অন্য সংস্থাগুলির মত এটিও রাজনৈতিক ব্যবহারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

