বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস

বাংলা রস-সাহিত্যের ভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। বহু কবি-সাহিত্যিক উপহার দিয়েছেন উইট-হিউমার-পান-সমৃদ্ধ গল্প-উপন্যাস, ছড়া-কবিতা, রম্যরচনা। এইসব কালজয়ী রচনার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ ঘটেছে তাঁদের রসিক মনের। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

মুড়ি-মুড়কির মতো
হাসি হল মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। হাসতে ভালবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। কেউ কেউ কৃত্রিম গাম্ভীর্য নিয়ে চলেন। তবে তাঁরাও যে হাসেন না, তা নয়। কেউ হাসেন প্রাণখুলে, কেউ মুখ টিপে। যাকে বলে মুচকি হাসি। বহু মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেরা হয়তো গম্ভীর থাকেন, অথচ হাসিয়ে মারেন অন্যদের। পরকে হাসিয়েই তাঁদের আনন্দ। যে কোনও আড্ডার আসর জমে ওঠে, যেখানে মজার মজার কথাবার্তা হয়। তার ফলে ওঠে হাসির ফুলঝুরি। হাসির সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন বহু মানুষ। কেউ কেউ হাসির গান শোনেন। বহু মানুষ পছন্দ করেন হাসির বই পড়তে। তা সে গল্প-উপন্যাস বা রম্য রচনা হতে পারে, অথবা ছড়া-কবিতা, জোকস্। এখন হাসির বইয়ের তুমুল চাহিদা। বইমেলায় বিক্রি হচ্ছে মুড়ি-মুড়কির মতো। লেখকদের একক বইয়ের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন লেখকের হাসির গল্প নিয়ে তৈরি সংকলন। পাঠকদের পাশাপাশি হাসি ফুটেছে ছোট, বড়, মাঝারি প্রকাশকদের মুখে।


ঠাট্টা-তামাশা
কোনও কোনও সাহিত্যিক হাসির রচনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। কেউ কেউ অন্য বিষয়ের লেখার পাশাপাশি লিখেছেন হাসির রচনা। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথাই ধরা যাক। বহু সিরিয়াস লেখার পাশাপাশি তিনি লিখেছেন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। এই গ্রন্থে তিনি হাস্য পরিহাস, ঠাট্টাতামাশার মাধ্যমে সমাজের ক্ষতগুলিকে ব্যঙ্গ করেছেন। নিজেও ছিলেন দারুণ রসিক। উদাহরণ দেওয়া যাক। বঙ্কিমচন্দ্রের বাড়িতে একদিন এক বিলাত ফেরত বাঙালি সাহেব এসেছেন। তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের বাড়ির একটি লোকের মাধ্যমে একটি ছোট কাগজে ‘মিস্টার বি চ্যাটার্জি, এস্কোয়ার-এর সাথে দেখা করতে চাই’ লিখে পাঠান। বঙ্কিমচন্দ্র সেটি পড়ে চিরকুট বাহক-কে বললেন, ‘‘ভদ্রলোককে বল, মিঃ বি চ্যাটার্জি নামের কোনও লোক এখানে থাকে না, আপনি ভুল করছেন। এখানে থাকেন শ্রীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।’’ দামোদর মুখোপাধ্যায় বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের উপসংহার হিসাবে ‘মৃন্ময়ী’ নামের একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। উপন্যাসটি রচনাশৈলীর দিক দিয়ে ছিল অতি নিম্নমানের। ‘মৃন্ময়ী’ উপন্যাসটি পড়ে বঙ্কিমচন্দ্র দামোদর মুখোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, ‘‘মশাই, আপনি আমার কপালকুণ্ডলাকে একেবারে সংহার করেছেন দেখছি।’’
মূলত প্রহসনে
‘মেঘনাদবধ কাব্য’র স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্তর রসিক মনের প্রকাশ ঘটেছে মূলত প্রহসনে। ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’য় ফুটে উঠেছে হাস্যরস ও কৌতুক। এর মাধ্যমে সমাজের দোষত্রুটি তুলে ধরেছেন। ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন রসিক। একদিন মধুসূদন পথ চলতে চলতে হঠাৎ খেয়াল করলেন, একজন পাঠক মনোযোগ দিয়ে ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ পড়ছেন। তিনি কৌতূহলী ভাব নিয়ে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কী পড়ছেন?’’ পাঠক উত্তর দিলেন, ‘‘একটি কাব্য।’’ মধুসূদন ইচ্ছা করেই একটু ঠেস দিয়ে বললেন, ‘‘বাংলা ভাষায় আবার কাব্য!’’ পাঠক বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলেন, ‘‘এই কাব্য একটি জাতির ভাষাকে গৌরবময় করতে পারে। ও আপনি বুঝবেন না!’’ এটা শুনে মনে মনে খুশিই হয়েছিলেন মধুসূদন।

বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা
এবার আসা যাক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়। তাঁর লেখা পড়ে মনে হতে পারে সাহিত্যিকেরা সময়ের সীমা পেরিয়ে আসতে পারেন। ‘ডমরু চরিত’ কতকাল আগের লেখা, অথচ আজও কত আধুনিক। যাঁরা এরিখ রাসপের বিখ্যাত চরিত্র ব্যারন মুনশাউজেনের কথা জানেন, তাঁরা ডমরু চরিত পড়েও সেই স্বাদ পাবেন। ও রকমই নানা অসম্ভব ও উদ্ভট ঘটনা রয়েছে এই বই জুড়ে। গল্পের মধ্যে বিভিন্ন সংস্কারকে নিয়ে তিনি যেভাবে রসিকতা করেছেন, ভাবলেই অবাক হতে হয়। তখন ওইরকম বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা গ্রহণ করার মতো মানুষ ছিলেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বাঙালি পাঠকদের জন্য অতি অবশ্যপাঠ্য একটি বই।

আরও পড়ুন-আজ অনূর্ধ্ব ১৯ ফাইনাল, ভারতের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা

রসিক রবীন্দ্রনাথ
নানা বিষয়ের রচনার পাশাপাশি বেশকিছু হাস্যরসাত্মক রচনা উপহার দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। লিখেছেন মজার গল্প, ছড়া, কবিতা। ‘হাস্যকৌতুক’ তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটিকার বই। এর মধ্যে রয়েছে বেশকিছু মজার নাটিকা। নিয়মিত মঞ্চস্থ হয়। ব্যক্তি জীবনেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তুমুল রসিক। রসিকতা করেছেন অনেকের সঙ্গেই। প্রমাণ পাওয়া যায় বেশকিছু ঘটনায়। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। সাহিত্যিক বনফুল বা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের ভাই বিশ্বভারতীতে পড়াশোনার জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। অতএব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি যখন বললেন, ‘‘কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?’’, তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, ‘‘আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।’’ রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, ‘‘এ যে দেখছি একেবারে সানাই!’’ শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের ছেলেরা ফুটবল খেলছে। শান্তিনিকেতনের ছেলেরা আট-শূন্য গোলে জিতেছে। সবাই দারুণ খুশি। শুধু রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করলেন, ‘‘জিতেছে ভাল, তা বলে আট গোল দিতে হবে?
ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে।’’ রবীন্দ্রনাথ একবার এক ভদ্রলোককে বললেন, ‘‘আপনাকে আমি দণ্ড দেব।’’ ভদ্রলোক তো ভীষণ বিব্রত। না জানি কী অপরাধ হয়েছে তাঁর। বললেন, ‘‘কেন, আমি কী অপরাধ করেছি, গুরুদেব?’’ রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘‘গতকাল আপনার লাঠি মানে দণ্ডটা আমার এখানে ফেলে গিয়েছিলেন। এই নিন আপনার দণ্ড।’’ বলে তাঁর দিকে লাঠিটা বাড়িয়ে ধরলেন।
বিশ্বসাহিত্যে বিরল
এবার আসা যাক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর কথায়। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি। রবীন্দ্রনাথের সুহৃদ। লিখেছেন বহু হাসির গল্প। তাঁর ‘টুনটুনির বই’ না পড়লে পাঠক-জীবনই বৃথা! এই বইয়ের ভূমিকার লেখক আজ থেকে বহু বছর আগে লিখেছিলেন, ‘সন্ধ্যার সময় শিশুরা যখন আহার না করিয়াই ঘুমাইয়া পড়িতে চায়, তখন পূর্ববঙ্গের কোনো কোনো অঞ্চলের স্নেহরূপিণী মহিলাগণ ওই এই গল্পগুলো বলে তাহাদিগকে জাগাইয়া রাখেন।’ টুনটুনির বই-এর রসাল গল্পগুলো একবার পড়লে ভোলা অসম্ভব। ‘টুনটুনি আর রাজার কথা’, ‘পান্তাবুড়ির কথা’, ‘বাঘের উপর টাগ’, ‘বুদ্ধুর বাবা’— এসব গল্পের মতো রসাল গল্প বাংলায় তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যেও বিরল।

আরও পড়ুন-সাবিত্রী মিত্রের গাড়িতে হামলা

হাসি ফোটাতে পারে
উপেন্দ্রকিশোরের পুত্র সুকুমার রায়। রস-সাহিত্য এবং সুকুমার যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে ছিলেন। শতবর্ষ উত্তীর্ণ তাঁর ‘আবোল তাবোল’-এর কবিতাগুলো এককথায় অসাধারণ। রামগরুড়ের ছানার মুখেও হাসি ফোটাতে পারে। তাঁর গল্পগুলো না পড়লে সম্পূর্ণ হয় না বাংলা বই পাঠ। কারণ তাঁর হাসির ছড়ার মতো হাসির গল্পের জুড়ি নেই। তাঁর ‘হযবরল’ বইতে পাওয়া যায় এমন এক জায়গার কথা, যেখানে কখনও সাত দু’গুণে হয় তেরো টাকা চৌদ্দ আনা তিন পাই, আবার কখনও চৌদ্দ টাকা এক আনা নয় পাই। তাঁর অবিস্মরণীয় চরিত্র ‘পাগলা দাশু’র মজার মজার কাণ্ড বাধ্য করে হাসতে। ‘চিনে পটকা’ ‘টুকে-মারি আর মুখে মারি’-এই গল্পগুলো পড়তেও মজা লাগে।
নির্মল মজা আর আনন্দ
রায়চৌধুরী পরিবারেরই কন্যা লীলা মজুমদার। তাঁর গল্পগুলোয় হাসিখুশির ধারা সমান বহমান। তাঁর ‘পদিপিসির বর্মিবাক্স’ সেই অর্থে হাসির বই না হলেও, এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে হাসির বিচিত্র উপকরণ। লীলা মজুমদারের ‘সব ভুতুড়ে’ বইটাও পড়া দরকার। ভূতের গল্পের আড়ালে যে নির্মল মজা আর আনন্দ লুকিয়ে থাকতে পারে, তার অনন্য এক উদাহরণ এই বইটি।


পেটে খিল ধরে
সারাজীবন শুধু হাসির গল্পই লিখে গেছেন শিবরাম চক্রবর্তী। মূলত ছোটদের জন্য। আশ্চর্য এক লেখক। তাঁর এক-একটি গল্প যেন এক-একটি জ্বলজ্বলে হীরে। তাঁর হাসির গল্পগুলোতে কোনও প্যাঁচ নেই, তিক্ততা নেই, অবসাদ নেই, শ্লেষ নেই, ব্যঙ্গ নেই। আছে শুধু পান, নির্মল, নির্ভেজাল আনন্দ। রাবড়ির মতো। দুশোর বেশি গল্প, আর তেরোটি উপন্যাস নিয়ে তাঁর ছোটদের হাসির সাম্রাজ্য। কীসব মজার নাম তাঁর গল্পের— ‘কাণ্ড নয় প্রকাণ্ড’, ‘বাড়ির ওপর বাড়াবাড়ি’, ‘ঠিক ঠিক পিকনিক’। দুই শব্দ মিলিয়ে মজা করার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় শিবরাম অদ্বিতীয়। পান-নির্ভর শিবরামের গল্প এগোয় তরতর করে আর হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে পাঠকের।
তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের ছোঁয়া
পরশুরাম বা রাজশেখর বসু ছিলেন খুব রাশভারী মানুষ। সেইসঙ্গে দারুণ মেধাবী। আইন নিয়ে পড়েছেন। পড়েছেন রসায়ন। বিখ্যাত রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন, অভিধান লিখেছেন। এই মানুষটিই যে আবার রম্যগল্প লিখবেন, সেটা কেউ ভাবেননি। কিন্তু তিনি রম্যগল্প লিখে পাঠকদের মনে বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন। উইট-হিউমারজারিত রম্যগল্পগুলোয় তাঁর গাম্ভীর্য ধরা পড়ে, কিন্তু সেসবে খোঁজ পাওয়া যায় তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের ছোঁয়া। ‘পরশুরামের হাসির গল্প’ শিরোনামে তাঁর অনেক রম্যগল্প একসঙ্গে পাওয়া যায় বইয়ের দোকানে।
মূল্যবান রত্ন
বনফুল বা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটা উপন্যাস রয়েছে, যা বাংলা ভাষার মূল্যবান রত্ন। তবে সাধারণের কাছে তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পের জন্য। গল্পগুলো ব্যঙ্গাত্মক, রসাত্মক এবং বিদ্রূপাত্মক। কিছু গল্পের শেষে চমকাতে হয়, কখনও ভড়কাতেও হয়। আবার হাসতে হয় অজান্তেই। বনফুলের গল্পগুলো ‘বনফুলের গল্প সমগ্র’ নামে পাওয়া যায়।
চিরকাল জ্বলজ্বল করবে
কবি জসীমউদ্দীন যে ভীষণ রসিক ছিলেন, তা তাঁর সংগৃহীত ‘বাঙালির হাসির গল্প’ বইটি পড়লে জানা যায়। গল্পগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন আমাদের দেশের লোকমুখে শোনা নানা গল্প থেকে। তবে তাঁর লেখনীর গুণে তা হয়ে উঠেছে সর্বেসর্বা, অতুলনীয়। গ্রামবাংলার একদম আপন গল্পগুলো এত মধুর করে তিনি তুলে এনেছেন যে বাংলা রম্যসাহিত্যে তাঁর এই কাজটি চিরকাল থেকে যাবে। সৈয়দ মুজতবা আলিও ছিলেন ভীষণ রসিক। তাঁর রসিকতা খুব উঁচু মানের। যতই আস্বাদন করা যাক না কেন, স্বাদ শুধু বেড়েই চলে। তাঁর ‘শ্রেষ্ঠ রম্যরচনা’ বইটি আজও পাঠক মহলে সমাদৃত।
দুই দাদা
বাংলা সাহিত্যের যে দুই দাদার কথা মনে পড়লেই হাসি পায়, মন ভালো হয়ে যায়, সেই দুই চরিত্র হল প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ঘনাদা’ এবং নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টেনিদা’। বনমালি লস্কর লেনের বাসিন্দা ঘনাদার গল্পে টানটান রহস্য আর উত্তেজনা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে গল্প বলবার অনবদ্য এক ধরন। এই কারণে পাঠকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠবেই উঠবে। ‘টেনিদা’র লাইনে লাইনেও মজা। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কালজয়ী চরিত্র পটলডাঙ্গার ‘টেনিদা’ আর তার শাগরেদ হাবুল সেন, প্যালারাম আর ক্যাবলার দুরন্ত সব কীর্তির জুড়ি নেই। এমন রসাল সব লেখা যে, না চাইলেও হাসতে হয়।
রস-সাহিত্যিক হিসেবে বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর ‘বরযাত্রী’ এক কালজয়ী রচনা। চলচ্চিত্র এবং ধারাবাহিকে রূপায়িত এবং সমাদৃত হয়েছে।
হাসির ফুলঝুরি
ভূত-রহস্য-অ্যাডভেঞ্চার গল্পের মোড়কে যে কীভাবে পেট ফাটানো হাসির সব গল্প বলা যায় তার অদ্বিতীয় উদাহরণ হল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের বইগুলো। রসাল, মজারু নানান কাণ্ডকারখানায় ভরপুর তবে ছোট আয়তনের কিশোর উপান্যাসগুলো পড়া চাই-ই চাই। শীর্ষেন্দুর ‘গোঁসাই বাগানের ভূত’, ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’-সহ অন্য সব বইই অবিস্মরণীয়। তাঁর অমর গোয়েন্দা চরিত্র বরদাচরণের গল্পগুলো জোগান দেয় অফুরন্ত হাসির। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় লিখে চলেছেন নানা বিষয়ের রচনা। তবে তাঁর রস &সাহিত্য এক কথায় অতুলনীয়। লেখার পাশাপাশি মুখের কথাতেও ছোটান হাসির ফুলঝুরি। রস সাহিত্যিক হিসেবে সমাদর পেয়েছিলেন হিমানীশ গোস্বামীও। তাঁর বেশকিছু লেখা ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও হাসায়, আনন্দ দেয়। তারাপদ রায়ের কথাও মনে রাখতে হবে। কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন বেশকিছু মজাদার রচনা। ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ। মজার মজার ছড়া লিখে আধুনিক বাংলা ছড়া জগতের সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। তাঁর ‘মজার ছড়া’-সহ বেশকিছু বই পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। গতবছর তিনি চলে গিয়েছেন। তবে তাঁর দম ফাটানো হাসির ছড়াগুলো আজও সব বয়সী পাঠকের আনন্দসঙ্গী হয়ে থেকে গিয়েছে।

Latest article