রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) ফের চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। গত ২০শে সেপ্টেম্বর রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে এবং ডিভিসির উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রকের তরফে চিঠির জবাব এসেছিল। জল শক্তি মন্ত্রী সিআর পাতিল জানান রাজ্যের সম্মতি নিয়ে ডিভিসি জল ছাড়ে মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে। কিন্তু কেন্দ্রের বক্তব্য যে সঠিক নয় সেই কথাই জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেক সময়ে রাজ্যের সম্মতি ছাড়া জল ছাড়া হয় বলেই তিনি লেখেন।
আরও পড়ুন-দিল্লি-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বেঙ্গালুরুতে, ৩০ খণ্ড তরুণীর দেহ উদ্ধার
এবারের চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘জল শক্তি মন্ত্রকের চিঠির উত্তরে আমি এই চিঠি লিখছি। আপনার মন্ত্রীর দাবি মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি-র মাধ্যমে পরিচালিত। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিও রয়েছেন। যদিও আমি সেটা মানি না। কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং জল শক্তি মন্ত্রক সবরকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে রাজ্যকে না জানিয়েই জল ছাড়া হয়েছে। রাজ্যের অনুরোধও শোনা হয় না। এবার মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার নোটিসে ডিভিসি জল ছেড়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই সময় যথেষ্ট একেবারেই ছিল না।’’
আরও পড়ুন-আন্তর্জাতিক মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রকল্পের প্রশংসা, আনন্দিত মুখ্যমন্ত্রী
এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ডিভিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিনি কথা বলেন ও জল না ছাড়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখা হয়নি। রাজ্য সরকার আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার অনুমোদন দেয়নি। রাজ্যের তরফে জলের পরিমাণ কমিয়ে প্রথমে ২.৩ লক্ষ কিউসেক এবং পরে দু’লক্ষ কিউসেক করার কথা বলা হয়েছিল। অনুরোধ তো মানা হয়ই নি, উল্টে ডিভিসি উত্তর দিতেও অনেকটাই দেরি করে। স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান তিনি মনে করেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলিতে উপযুক্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প প্রয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন এই মুহূর্তে। খুব দ্রুত সব প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন দরকার। কিন্তু এই কর্মকাণ্ডের সব খরচ রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে দেওয়া একেবারেই উচিত নয়।
আরও পড়ুন-কাশ্মীরে খাদে সেনার গাড়ি, মৃত ১, জখম ৬
মুখ্যমন্ত্রী এদিন চিঠিতে বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। এটা না ছাড়লে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হত না। তাই আমি মনে করি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যে বলেছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সবরকম চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটা পুরোপুরি সঠিক নয়। জলাধার নিয়ন্ত্রণকারীরা ঠিক মতো কাজ করতে পারেননি। এই মুহূর্তে মাইথন এবং পাঞ্চেতে সংস্কারের কাজ চলছে। শেষ হয়নি এখনও। আমি ডিভিসির কমিটি থেকে আমার প্রতিনিধি তুলে নিচ্ছি।’’
আরও পড়ুন-অরণ্যের অধিকার
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান (১২৩৮.৯৫ কোটি টাকা) এবং দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার (৪৯৬.৭০ কোটি টাকা) জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদে যে ভূমিধস নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অর্থ বরাদ্দ এখনও বাকি, চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে সেই কথা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, দক্ষিণবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎকৃষ্ট মানের বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োজন। কেন্দ্রের বরাদ্দ বস্তুত অপর্যাপ্ত। এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কাছে একেবারেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। সব শেষে আগের চিঠির সকল দাবি আরও একবার খতিয়ে দেখে বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।