সভা বানচালের ছক উড়িয়ে ছক্কা হাঁকালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বললেন, “আবার আসব”

Must read

কুণাল ঘোষ, লন্ডন (মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): আগে থেকেই ষড়যন্ত্রর ছক কষা ছিল। সেইমতো বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করে বাম-অতিবামরা। কিন্তু তাদের সেই ছক বানচাল করে তথ্য দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata banerjee)। বললেন, এটা রাজনীতির মঞ্চ নয়, নাটক করার চেষ্টা করবেন না। কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, “এতে আমি উৎসাহিত হই”।

বৃহস্পতিবার লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হয় অক্ষরের কলেজে। একের পর এক তথ্য দিয়ে বাংলার উন্নয়নের ছবি তুলে ধরছিলেন মুখ্যমন্ত্রী  (CM Mamata banerjee)। হঠাৎই দর্শক আসন থেকে বিরূপ মন্তব্য উড়ে আসে। মমতা আগেই জানিয়েছিলেন, “ওরা যদি বল দেয় আমি ছক্কা হাঁকাবো।” আর ঠিক তাই করলেন। বলে বলে প্রত্যেক অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে সব বল মাঠের বাইরে পাঠালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী যখন রাজ্যের শিল্প উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করছিলেন তখনই একজন দর্শক সেটা চ্যালেঞ্জ করে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ তোলেন। তৎক্ষণাৎ তথ্য দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি মিথ্যে বলছি না, বাংলাতেও টাটা কোম্পানি তাদের একাধিক প্রোজেক্ট করছে।”

এর পরে আর জি কর নিয়ে প্রশ্ন তুললে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। এই নিয়ে এই মঞ্চে কথা বলা ঠিক হবে না। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও জানান, বিষয়টি রাজ্যের হাতে নয় কেন্দ্রের হাতে রয়েছে।

আরও পড়ুন-পড়ুয়ারা তৈরি, কলকাতা থেকেই ভারতে অক্সফোর্ডের ক্যাম্পাস শুরু করার অনুরোধ মুখ্যমন্ত্রীর

এরপর এই শালীন অথচ তীক্ষ্ণ কথায় তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি বলেন, “এই মঞ্চকে রাজনীতির মঞ্চে পরিণত করবেন না। প্রয়োজন হলে বাংলায় এসে দেখে যান, আমি মিথ্যে বলছি না।”

চ্যাঁচামেচি শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে আমাকে অপমান করতে পারেন না। আপনারা তো নিজেদের প্রতিষ্ঠানকেও অসম্মান করছেন। মনে রাখবেন. আমি কিন্তু এখনও বিনম্র রয়েছি। এমন আচরণ করবেন না।’

এর পরেও টানা চার মিনিট ধরে চলে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা চললেও এতটুকু ধৈর্য হারানি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, আমি যেখানে যাব সেখানেই গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হবে। তবে মনে রাখবেন আমি সকলের জন্য। নির্দিষ্ট কোনও সম্প্রদায়ের জন্য নয়।” আগাগোড়া গোলমালকারীদের “ভাই, বোন” সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, “প্লিজ এখানে রাজনীতি করবেন না।” মনে করিয়ে দেন আপনাদের নেতারাও এখানে আসবেন। এক ঘটনা তাঁদের সঙ্গেও ঘটতে পারে। নিজের ফাইল থেকে ট্রাম্প কার্ডটি বের করেন মমতা। দেখান বাম আমলে কীভাবে তাঁর উপর আক্রমণ হয়েছিল। সেই ছবি তুলে ধরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এভাবেই বামেরা তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। বলেন, “এখানে মিথ্যে কথা বলে আমাকে অপমান না করে বাংলায় গিয়ে নিজেদের দলকে শক্তিশালী করুন।”

এরপরের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এবার থেকে আমি চেষ্টা করব প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানে আসতে। আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে জানি। আমি পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নই। আমি খুশি, আমি ফিরে গিয়ে তোমাদের চকলেট পাঠাব- এই ধরনের আদর্শের জন্য। কিছু মানুষ ইচ্ছে করে গোলমাল পাকাচ্ছে।”

এরপরই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। কারণ যাঁরা অশান্তি বাধাচ্ছিলেন তাঁদের সংখ্যা অত্যন্ত কম। বাকিরা সবাই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে চাইছিলেন। বক্তব্যের শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কুৎসার সামনে মাথা নত করব না, মাথা নত করতে হলে মানুষের কাছে করব।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আউড়ে বললেন, “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য…”

Latest article