সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: ২২ বছর পার হয়ে গিয়েছে, অথচ আজকের ঘটনাটা (Parliament Attack) মনে করিয়ে দিল সংসদের ভেতরে কতটা অসুরক্ষিত আমরা। সেদিনও আমি পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলাম। সেদিন ছিলাম সংসদের সেন্ট্রাল হলে আর বুধবার অধিবেশন চলাকালীন লোকসভার মধ্যে। তবে সেদিনের সঙ্গে আজকের তফাত অনেকটাই। ২০০১ সালে আজকের দিনে অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের। সেদিন একজন সাংসদেরও ক্ষতি হয়নি, সংসদকে রক্ষা করেছেন নিরাপত্তারক্ষীরাই। আর বুধবারের হামলায় সাংসদদের নিজেদেরই আত্মরক্ষার্থে মাঠে নামতে হল। সেদিন পার্লামেন্টকে রক্ষা করতে প্রাণ গিয়েছিল নিরাপত্তারক্ষীদের। আর বুধবারের ঘটনার পর জানা গেল, মোদির স্বপ্নের সংসদ ভবন রক্ষার জন্য এখনও প্রায় ১৬০ জন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ বাকি। অর্থাৎ এত ঢাকঢোল পিটিয়ে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে সংসদ ভবনে জনপ্রতিনিধিরা যাচ্ছেন, দেশের আইনকানুন এবং সুরক্ষা নিয়ে চর্চা হচ্ছে তা যে কতটা অসুরক্ষিত এদিনের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দিল।
২২ বছর আগের ঘটনা আজও আমার স্মৃতিতে স্পষ্ট। সেদিন এগারোটার সময় সভা শুরু হয়ে ১১:০২ এ ছুটি হয়ে যায় এক সংসদের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করার পর। আমরা সেন্ট্রাল হলে বসে ছিলাম। সেই সময় মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ। এল কে আদবানি তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর নিরাপত্তায় ব্যস্ত হয়ে উঠলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন সেন্ট্রাল হলের দরজা যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে যেন কেউ প্রবেশের সুযোগ না পায়। অর্থাৎ তখনও তিনি সাংসদদের নিরাপত্তার দিকটি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সেদিন এক মিনিটের শোকসভা হয়ে সংসদের (Parliament Attack) কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলেই বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। আর বুধবার ভরা লোকসভায় অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ল। মোদি সরকারের এটা যে কত বড় ব্যর্থতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথম থেকেই যে পার্লামেন্ট তৈরি নিয়ে বিতর্ক বেঁধেছে এদিনের ঘটনা সেই নতুন পার্লামেন্টকে কলঙ্কিত করে দিল। বুধবার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে বৈঠকে এই সমস্ত বিষয়গুলি আমি তুলেছি। সব দলের লিডাররা ছিলেন। স্পিকার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের আশ্বাস দেন। তবে স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এই ধরনের নিরাপত্তার গাফিলতি ঘটেনি। মহুয়া মৈত্র ইস্যুতে লগইন, পাসওয়ার্ড ইত্যাদিকে দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জুড়ে তাঁকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করল মোদি সরকার। আর বিজেপি সাংসদ আজ যে দু’জনকে পাস দিয়েছিল, তারাই এত বড় ঘটনা ঘটাল? সেটা কি নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়? সেক্ষেত্রে কেন্দ্র কী সিদ্ধান্ত নেবে?
আরও পড়ুন- দুই হামলাই বিজেপির জমানায়, ২০০১ সালে সংসদে ভয়ঙ্কর হামলা চলেছিল ৩০ মিনিট ধরে