মণীশ কীর্তনিয়া, নয়াদিল্লি : প্রতিবাদ, দাবি, আমন্ত্রণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন আদর্শ প্রশাসক। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাউথ ব্লকে ৩০ মিনিটের বৈঠকে বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সেই সিদ্ধান্ত যেমন তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে ত্রিপুরায় এখনই সন্ত্রাস বন্ধের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। অন্যদিকে রাজ্যের দাবির কথা জানাতে গিয়ে প্রাপ্য বকেয়ার কথা প্রথমেই উঠে এসেছে। চটকলগুলির জন্য সুষ্ঠু কেন্দ্রীয় নীতি চেয়েছেন। ভ্যাকসিন চেয়েছেন। আবার দক্ষ প্রশাসকের ভঙ্গিতে রাজ্যে বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিগত ৪৮ ঘণ্টায় রাজধানীর সব রাজনৈতিক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-ওঁদের জমিতেই বিমানবন্দর অথচ ওঁরাই এখন বাস্তুচ্যুত!
প্রাপ্য ও বকেয়া দাবি
রাজ্য বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। তার জন্য কেন্দ্রীয় সাহায্য কার্যত মেলেইনি। মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রাপ্য অর্থ চেয়েছেন। বিভিন্ন প্রকল্প খাতে রাজ্যের বকেয়া ৯৬ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার দাবি জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রাজ্যের উন্নতি অর্থের কারণে আটকে গেলে কেন্দ্রের উন্নতি হবে কীভাবে?
আরও পড়ুন-পূজারাদের নেটে বোলার দ্রাবিড়
বিষয় বিএসএফ
মুখ্যমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিএসএফের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, জোর করে তাদের এক্তিয়ার বাড়ানো হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী আমাদের শত্রু নয়। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। এই সিদ্ধান্তে তো রাজ্যের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে বিএসএফের গুলিতে কয়েকজনের মৃত্যু হল। প্রায়ই হয়। কেন হবে? প্রয়োজনে আরও বেশি সাহায্য করবে পুলিশ। কিন্তু ফেডারেল স্ট্রাকচারের উপর আস্থা রেখে এখনই এই এক্তিয়ার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের ফিরিয়ে নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন-রাজধানীর দূষণে দেশের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে, মত সুপ্রিম কোর্টের
ভ্যাকসিন দাবি
স্কুল-কলেজ খুলেছে। পড়ুয়ারা স্কুলে আসছে। ফলে ১২-১৮ বছরের পড়ুয়াদের ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়ে এক্সপার্ট কমিটি সিদ্ধান্ত দ্রুত জানাক। রাজ্যে এখন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া জোরকদমে চললেও এ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত হওয়া জরুরি।
চটকল দাবি
দেশের চটকলের অধিকাংশ এই রাজ্যের। কিন্তু চটকলে জট হয়ে রয়েছে। চটকল নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব বারবার জুট কমিশনারের সঙ্গে বসেছেন। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। রাজ্যের দাবি, সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ চটের ব্যবহার চায়। ফের বসা হোক। দ্রুত সমাধান চাই।
উন্নয়নে রাজনীতি নয়
কেন্দ্রের অনেক স্কিম আছে, যেগুলো সেই নামেই না করলে টাকা দেওয়া হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন,কেন এমন হবে? উন্নয়ন নিয়ে কেন রাজনীতি হবে?
আরও পড়ুন-বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তান, বাড়িতেই ওষুধ তৈরি করে সুস্থ করছে বাবা
যোগদান প্রসঙ্গে
তৃণমূল কংগ্রেস কোনও দল ভাঙায় বিশ্বাস করে না। কিন্তু কেউ যদি তৃণমূল কংগ্রেসের কাজ দেখে সঙ্গে আসে, দলে যোগ দেয়, তাহলে করার কী আছে! বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, অন্য দলের তো কী হয়েছে, নানা বিষয় নিয়ে তো আলোচনা হতেই পারে। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কী আছে!
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কোনও অ্যাপয়েন্টমেন্ট তাঁর ছিল না। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা ছিল না।
আরও পড়ুন-বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তান, বাড়িতেই ওষুধ তৈরি করে সুস্থ করছে বাবা
প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট কথা, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো দেশের শক্তি। কেন্দ্র আর রাজ্যে আলাদা মতের সরকার থাকতেই পারে। কিন্তু একে অন্যের পরিপূরক। এপ্রিলে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধন করতে অনুরোধ করেছি। উনি রাজি হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৩০ নভেম্বর শিল্প সম্মেলনে অংশ নিতে মুম্বই যাবেন। সেখানে উদ্ধব ঠাকরে ও শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তৃণমূলনেত্রী
নেত্রী যাবেন উত্তরপ্রদেশেও। তাঁর কথায়, দলের ওখানে ইউনিট রয়েছে। কমলাপতি ত্রিপাঠীর পরিবার আমাদের সঙ্গে এসেছেন। যাব সেখানে।