প্রতিবেদন : ‘যেতে নাহি দিব। হায়, তবু যেতে দিতে হয়…’ প্রাণের উৎসবের শেষলগ্নে রবি ঠাকুরের শব্দ ধার করে এবার চোখের জলে উমাকে বিদায় জানানোর পালা। মেঘাচ্ছন্ন বাংলার আকাশে তাই আজ বিজয়া দশমীর বিষাদের সুর। ষোলোআনা রীতি মেনে দেবীবরণ, সিঁদুরখেলা শেষে দেবীকে নিরঞ্জনের পালা। আবার একটা বছরের অপেক্ষা। শারদোৎসবের অন্তিম সন্ধ্যায় নিম্নচাপের বৃষ্টি-দুর্যোগ উপেক্ষা করে বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে উমাকে বিদায় জানাল বাঙালি। ঘাটে-ঘাটে কড়া নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন ও পরিচালনায় ফুলমার্কস পেল পুলিশ, পুরসভা, প্রশাসন। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জন শেষেও উৎসবের সমাপ্তি হল না। কারণ, বিদায়ের দিনেও কলকাতার বিভিন্ন নামকরা পুজো প্যান্ডেলগুলিতে জনস্রোত অব্যাহত। সকাল ও দুপুরে মাঝারি বৃষ্টির পর দশমীর সন্ধ্যাতেও চেতলা অগ্রণী থেকে রাজডাঙার পুজোমণ্ডপে দেবীদর্শনে জনতার ঢল নামে। শেষ মুহূর্তে দুর্গোৎসবের সবটুকু আনন্দ চেটেপুটে নেওয়ার চেষ্টা আর কী!
আরও পড়ুন-পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ব্যাপক সংঘর্ষ, পাকসেনার গুলিতে মৃত্যু মিছিল
মায়ের বিদায়বেলায় আজ মন খারাপ বাঙালির। কয়েকদিনের নিয়ম-ভাঙা উল্লাস-উচ্ছ্বাস-উৎসবের পরিসমাপ্তি। লক্ষ্মীবারের সকাল থেকে অঝোরে বিষাদ-বৃষ্টি সত্ত্বেও গঙ্গা, ইছামতীর জলে পড়ল শহর-জেলার একাধিক প্রতিমা। বৃহস্পতিবার কলকাতায় আহিরীটোলা থেকে কুমোরটুলি ঘাটে শোভাবাজার রাজবাড়ি কিংবা দাঁ বাড়ির মতো সমস্ত ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির প্রতিমা তাঁদের শতাব্দীপ্রাচীন রীতি মেনে বিসর্জন হয়ে গেল। শহরের একগুচ্ছ বারোয়ারি, আবাসন, ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তারাও এদিনই ঢাকের তালে ধুনুচি নাচের শোভাযাত্রা শেষে প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্যে দিয়ে দেবীকে বিদায় জানান। যদিও শহর ও শহরতলির সেরা পুজোগুলি দেবীবরণ ও সিঁদুরখেলার পর তাদের প্রতিমা বিসর্জন দেয়নি। কারণ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার পর্যন্ত প্রতিমা নিরঞ্জনের পর্ব শেষে ৫ অক্টোবর অর্থাৎ রবিবার রয়েছে পুজো কার্নিভাল। সেই কার্নিভালে শোভাযাত্রার পর সেখান থেকেই প্রতিমাগুলি বিসর্জনের উদ্দেশে রওনা দেবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে দুর্গোৎসব যেমন আজ বিশ্বজনীন, তেমনই রেড রোডের এই রঙিন পুজো কার্নিভালও বিশ্বজোড়া আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।