গাফিলতি থাকলে ফৌজদারি অপরাধ, ক্ষোভপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

বৃহস্পতিবার, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে সিনিয়র চিকিৎসকদের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

Must read

বৃহস্পতিবার, নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে সিনিয়র চিকিৎসকদের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই ঘটনায় সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, এঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ও একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন-আজব যুক্তি জেলা প্রশাসনের, ছাত্রীদের পোশাক খোলানোয় নির্দোষ প্রিন্সিপাল

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিনিয়ন ডাক্তাররা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ওই মা এবং সদ্যোজাতকে বাঁচানো যেত। তাঁর কথায়, “যাঁদের কাছে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, যাঁদের হাতে সন্তান জন্মায়, তাঁরা দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করলে মাকে এবং সন্তানকে বাঁচানো যেত। আজকে সবকিছু থাকার পরেও দেখার দায়িত্ব কাদের। সিনিয়র ডাক্তারদের ৮ ঘণ্টা করে হাসপাতালে ডিউটি দেোওয়ার কথা। মানুষের জীবনের থেকে বড় তো কিছু নয়। সেবা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা মানুষের দরকার। রোগ কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সিজারিয়ান করেন সিনিয়র ডাক্তাররা। সাধারণ মানুষকে বলব এটা অন্যায় হয়েছে। ওই প্রসূতিদের পরিবারের কাছে কোনও সান্ত্বনাই আসলে সান্ত্বনা নয়। তারা চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলতেই পারে। ওই পরিবারগুলি কিছু বললে শুনতে হবে। অনেক প্রাইভেট হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেওয়া হচ্ছে। আমাদের কমিশন আছে এটা দেখার। কোনও অভিযোগ থাকতে তা জানাতে পারেন। তা সত্ত্বেও কখনও কখনও ছুটির দিন থাকবে , তা বলে দায়িত্ব পালন করবেন না। এটা কি জাস্টিফাই করতে পারে? অপারেশন থিয়েটাররে গেটে সিসিটিভ লাগাতে দেওয়া হয় না। কেন হয় না? সিসিটিভ ওটি-র ভেতরেও থাকা উচিত বলে মনে করি। অবহেলার কেস, অপরাধের মামলা ভেরিফাই করা উচিত। সিস্টেম থাকা উচিত। অনেক সময় রোগীরাও চান না। তাঁরা চাইলে আমরা ভিডিও দেখাব না। কারা ওটিতে যাচ্ছে, কারা আসছে তা জানা দরকার।”

আরও পড়ুন-‘প্রোমোটারের গাফিলতিতে বিল্ডিং বিপর্যয়’ ক্ষুব্ধ ফিরহাদ হাকিম

মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ওটির ভিতরে সিসি ক্যামেরা থাকলে অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরা যেত। অপারেশন থিয়েটারের গেট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দেন মমতা। ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে উপস্থিত চিকিৎসক এবং আরএমও, আরএসভিপিকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন। তালিকায় রয়েছেন হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত, মাতৃমা বিভাগে ইউনিট ১সি-র বেড ইনচার্জ দিলীপ পাল, সিনিয়র চিকিৎসক হিমাদ্রি নায়েক, আরএমও সৌমেন দাস, পিজিটি প্রথম বর্ষের চিকিৎসক মৌমিতা মণ্ডল, পূজা সাহা, অ্যানাস্থেশিস্ট পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্টার্ন চিকিৎসক সুশান্ত মণ্ডল, পিজিটি তৃতীয় বর্ষের চিকিৎসক জাগৃতি ঘোষ, ভাগ্যশ্রী কুন্ডু, পিজিটি প্রথম বর্ষের অ্যানাস্থেশিস্ট মণীশ কুমার, বিভাগীয় প্রধান মহম্মদ আলাউদ্দিন। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ নিগমকে তাঁর নির্দেশ, “কোনও জুনিয়র ডাক্তার যেন একা রোগীর কাছে না যান। সিনিয়র ডাক্তাররাই যেন সঙ্গে করে নিয়ে যান তাঁদের। নইলে তাঁরা দুম করে ঢুকে কী বলে দেবেন, তার খারাপ প্রভাব হতে পারে। সব কেসেই সিনিয়ররা সঙ্গে থাকবেন জুনিয়রদের। সিস্টাররা তো থাকবেনই।“

আরও পড়ুন-ভোটের প্রচারে প্রযুক্তির অপব্যবহার রুখতে তৎপর কমিশন

স্বাস্থ্য দফতর গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটি এবং সিআইডি তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে দু’ক্ষেত্রেই এই ঘটনার জন্য চিকিৎসায় গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেছেন, অস্ত্রোপচারের সময় স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিভ প্রসিডিওর মানতে হয়, তা মানা হয়নি। প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় মেদিনীপুরে গাফিলতি রয়েছে। তিনি এও বলেন যে, অপারেশনের সময় সিনিয়র চিকিৎসক ছিলেন না। অপারেশন করেন জুনিয়র ট্রেনিরা। এমনকী অ্যানাস্থেশিয়াও দিয়েছিলেন জুনিয়র ট্রেনিরা। নবান্নে এই সংক্রান্ত যে রিপোর্ট জমা পড়েছে, তা থেকেই এই তথ্য জানা গিয়েছে বলে জানান মুখ্যসচিব। এদিন মুখ্যসচিব বক্তব্য রাখার পর মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, যাঁদের হাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, যাঁদের হাত দিয়ে সন্তানের জন্ম হয়, তাঁরা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এই মাকে এবং সন্তানকে বাঁচানো যেত। সেই সঙ্গে ঘটনায় ‘অন্য কাহিনির’ ইঙ্গিতও দেখছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

 

Latest article