যদি চান বাংলাকে বাঁচাতে, ছুঁড়ে ফেলুন বাম-বিজেপিকে

সাড়ে তিন দশক ধরে বামেদের অপশাসনে বাংলা ও বাঙালির চরম সর্বনাশ হয়েছে। এবার সর্বনাশের ষোলো কলা পূরণ করার দায়িত্ব নিয়েছে বিজেপি। ওরা কাড়ছে গরিবের ভাত, লুটছে তাদের ভোটাধিকার। বাংলা ও বাঙালির আজ ও আগামীর একমাত্র আশ্রয় জননেত্রী। লিখছেন তানিয়া রায়

Must read

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, leaving no stone unturned। অর্থাৎ, কোনও পাথর আর ওল্টাতে বাকি নেই। সারার্থ, সবরকম চেষ্টাই করা হয়েছে।
বাংলাকে বঞ্চিত রাখার জন্য মোদি সরকারের তরফে কোনও কসুর করেনি। কোনও পাথরই আর ওল্টাতে বাকি রাখছে না তারা। তার নমুনা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলা। বাংলায় ১০০ দিনের কাজ শুরু করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ। তাতে বলা হয়েছিল, অগাস্ট মাস থেকে কাজ শুরু করতে হবে। সেই পথে হাঁটল না মোদি সরকার। সময়সীমার ১৮ দিন পর আইনি পথেই গেল শিবরাজ সিং চৌহানের কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর।

আরও পড়ুন-ঘুরপথে ক্ষমতা দখল করতে কেন্দ্রের স্বৈরাচারী বিল মানবে না ইন্ডিয়া, গর্জন অভিষেকের

বাংলায় ১০০ দিনের কাজ রুখতে হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে কেন্দ্র।
আমরা জানতাম, ১০০ দিনের কাজে বাংলাকে বঞ্চিত করছে কেন্দ্র। বকেয়া পাওনা মেটাতে হবে—এটাই ছিল বাংলার দাবি। এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পরও ১ অগাস্ট থেকে ১০০ দিনের কাজ চালু না করে কেন্দ্র সোজা চলে গেল সুপ্রিম কোর্টে! আইনি জটে পুরো বিষয়টি ঘেঁটে দিতে।
এতেই প্রমাণ হয়, মোদি সরকারের লক্ষ্য, মোদি সরকারের চরিত্র। ওদের একটাই টার্গেট, বাংলার মানুষকে বঞ্চিত রেখে দেওয়া। এই কারণে বিজেপিকে জনবিরোধী, বাংলাবিরোধী, গরিববিরোধী, সংবিধান- বিরোধী বলা হয়। জনগণের ন্যায্য পাওনা পূরণে এই অনীহা বুঝিয়ে দিচ্ছে দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে।
কোনও ব্যাপারে এই কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্টভাবে কোনও জবাব দিতে অক্ষম। একটা সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যাক। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের ব-দ্বীপ ইস্যুতে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে জলশক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজভূষণ চৌধুরী লিখিতভাবে জানিয়েছেন, খড়্গপুর আইআইটি’কে দিয়ে সমীক্ষার কাজ করানো হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ভাঙন এবং চর সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক এলাকাজুড়ে। নদীর স্বাভাবিক ধর্মেই এটি ঘটে। এত জ্ঞানের কথা আমরা শুনলাম। কিন্তু কীভাবে সুন্দরবনের এই ব-দ্বীপকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে মন্ত্রীর কোনও স্পষ্ট জবাব নেই।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন। রাজ্যের বকেয়া ইস্যুতে মুখ বুজে সব কিছু মেনে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে দেখা করে ফের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মেটানোর দাবি তুলবে তৃণমূল কংগ্রেস।
আর শুধু নরেগা বা ১০০ দিনের কাজের টাকাই নয়, বিজেপি সরকার রাজ্যের প্রাপ্য জল জীবন মিশনের টাকাও আটকে দিয়েছে। ওই খাতে ২ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা পাবে রাজ্য।
এ-ব্যাপারে সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার। ওই দিন পাওনা মেটানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাতিলের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল দেখাও করেছে। মন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে চার পৃষ্ঠার এক স্মারকলিপি। সেখানে জল জীবন মিশন তো বটেই, ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মতো প্রকল্পেও যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে না, তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে মুম্বইয়ে ঝুলে রইল মনোরেল, আতঙ্কে শতাধিক

ইতিমধ্যে বকেয়া কোটি কোটি টাকা চেয়ে বারবার দরবার করলেও, ‘বিরোধী’ বাংলাকে ‘ল্যাজে খেলাচ্ছে’ দিল্লি। উল্টে একের পর এক অজুহাত খাড়া করে বন্ধ করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় অনুদান। বিস্তর শর্ত চাপিয়ে, একের পর এক কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েও ‘কুপোকাত’ করা যাচ্ছে না পূর্ব ভারতের এই রাজ্যকে। অনমনীয় মনোভাবে নিজস্ব রাজস্ব ভাণ্ডার থেকেই রাজ্যের মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষার যাবতীয় প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্বেই এক্স হ্যান্ডেলে জননেত্রীর ঘোষণা—‘‘রাজ্যের আরও ১৬ লক্ষ যোগ্য গরিব পরিবারকে আমরা বাড়ি করে দেব। তাঁরা তাঁদের প্রথম কিস্তির টাকা চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ২০২৬ সালের মে মাসে পেয়ে যাবেন। তাঁদেরও আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখলাম।’’
এর আবহেই চেষ্টা চলছে বাংলায় ভোট চুরির নতুন অস্ত্র প্রয়োগ করার ব্যবস্থা চালু করার। ভোট চুরির নতুন অস্ত্র এখন এসআইআর। গত রবিবারই সংসদে বিরোধী নেতা বিহারের সাসারামে ভোটার তালিকায় নাম না-থাকা অনেকের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা ভোট দিয়েছিলেন। এসআইআরের পর কমিশনের এবারের তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ পড়েছে। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক ভারত থেকে এঁদের পরিচয়, অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম না-থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় জানলে যে কেউ চমকে উঠবেন। এঁদের একজন প্রাক্তন সেনানী, একজন দলিত শ্রমজীবী, একজন একজন ওবিসি শ্রমজীবী, একশো দিনের কাজের একজন মহিলা কর্মী এবং একজন সংখ্যালঘু শ্রমজীবী। সামাজিক বৈষম্য এবং আর্থিক অবস্থার কারণে এঁরা ভোটিং সিস্টেমের সঙ্গে লড়তে পারবেন না। বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বোঝাপড়ার খেসারত দিচ্ছেন বহুজন এবং গরিব মানুষরা। এমনকী সেনাকর্মীরাও বাদ যাচ্ছেন না। এই তো অবস্থা!
অর্থাৎ, ভাতে মারার চেষ্টা তো অব্যাহত। এখন চালু হতে চলেছে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের। বাংলাভাষী মানুষকে অনাগরিক বানিয়ে তাদের পেটে লাথি মারার ব্যবস্থা সুগঠিত করার আয়োজন অব্যাহত।
এদের জবাব দিতেই হবে ইভিএম-এ।
লালেরা এই রাজ্যের সর্বনাশ করেছে সাড়ে তিন দশক ধরে। আর গেরুয়া পার্টি এখন চেষ্টা করছে সর্বনাশের চরম সীমায় রাজ্যকে নিয়ে যাওয়ার। লালেরা শূন্যে পৌঁছেছে। গেরুয়াকেও সেখানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। আগামী নির্বাচনে।

Latest article