প্রতিবেদন : রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের আগে শহিদ হওয়ার চেষ্টা জারি রাখলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। রবিবার সংসদে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হবেন ইমরান খান। তার আগে শনিবার দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে গরু-ছাগলের মতো রাজনীতিকদের কেনা হচ্ছে। আস্থা ভোটের আগে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য পাক টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান।
আরও পড়ুন-বিক্ষোভ, জরুরি অবস্থা, বিপন্ন শ্রীলঙ্কা, ত্রাণ পাঠাল ভারত, ডিজেল-চাল-ওষুধ নিয়ে কলম্বো পৌঁছল জাহাজ
সেখানেই পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে গরু-ছাগলের মতো রাজনীতিকদের কিনে নেওয়া হচ্ছে। এই চক্রান্ত চলছে বিদেশ থেকে। দেশের কিছু রাজনীতিবিদ এই চক্রান্তকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইতিহাস কিছুই ভোলে না। পাকিস্তানের ইতিহাসও এই বিশ্বাসঘাতকদের কোনও দিন ভুলবে না, তাদের ক্ষমা করবে না। ইমরান আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্ত যে আমার মুখের কথা নয় ইতিমধ্যেই সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। জাতীয় সংসদে আমি ওই চক্রান্তকারীদের চিঠি তুলে ধরেছি।
আরও পড়ুন-রেকর্ড গরম
সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ইমরান খানকে সরিয়ে দিলেই আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নত হবে। দেশবাসীর উদ্দেশে ইমরান আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকলে চক্রান্তকারীদের সমর্থন করা হবে। আমি চাই, গোটা দেশের মানুষ এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক। আমার জন্য নয়, দেশ ও নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রতিবাদ করুক মানুষ। এই মুহূর্তে দেশ এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই যুদ্ধ দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার যুদ্ধ। এখন দেশের সামনে দুটি রাস্তা খোলা আছে। আমাদের স্থির করতে হবে আমরা কি ধ্বংসের পথে যাব, নাকি উন্নয়নের রাস্তায় হাঁটব। উন্নয়নের পথেই একদিন দেশে বিপ্লব এসেছিল। পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি তাঁর সংকল্প থেকে কোনওভাবেই সরে আসবেন না। স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক পাকিস্তান তিনি অবশ্যই গঠন করবেন।
আরও পড়ুন-আজব দাবি
তবে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ইমরান যাই বলুন না কেন, তিনি আর সেই সুযোগ পাবেন না। আগামিকাল সংসদে আস্থা ভোট নেওয়া হলে তাঁর পরাজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। পাকিস্তানের চলতি রাজনৈতিক ডামাডোল নিয়ে ভারত কোনও মন্তব্য না করায় নিজের অসন্তোষ চেপে রাখেননি ইমরান। পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পড়শি দেশে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, অথচ ভারত নীরব দর্শক হয়ে বসে রয়েছে। এটা ঠিক না। একদিকে ভারতকে তিনি যেমন কটাক্ষ করেছেন, তেমনই দেশের পূর্ববর্তী শাসকদের দিকেও আঙুল তুলেছেন। ইমরানের দাবি, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনুন্নয়নের জন্য পূর্ববর্তী শাসকরাই দায়ী। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সেনাবাহিনীও তাঁর উপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাঁকে তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-সুর নরম!
সেই তিনটি প্রস্তাব হল, হয় তাঁকে আস্থা ভোট নিয়ে জিতে আসতে হবে। নয়তো দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, বা তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এরপরই ইমরান বলেন, আমি কোনও চাপের কাছে মাথা নোয়ানোর কথা ভাবতেই পারি না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংসদেই সবকিছু স্পষ্ট করব। অর্থাৎ আস্থা ভোটে যদি আমি হেরে যাই তবেই আমি সরে দাঁড়াব। আর যদি আস্থা ভোটে জিতে আসি তাহলে এই বিশ্বাসঘাতকদের দল থেকে বের করে দেব। সরকার ভেঙে দিয়ে দ্রুত নির্বাচনে যাব। দেশবাসীর কাছে আমার আর্জি, এবার ভোট হলে তেহরিক-ই ইনসাফকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিন। ইমরান সরকারের জোটসঙ্গী এমকিউএম ও পিটিআই বিরোধী জোটে শামিল হয়েছে। যে কারণে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে ইমরান সরকার।
আরও পড়ুন-প্রাক্তন স্বামীকে খোরপোশ, নির্দেশ শিক্ষিকাকে, বেনজির রায় হাইকোর্টের
পাকিস্তানের নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা ৩৪২। সরকার গড়তে গেলে তাই প্রয়োজন ১৭২ জনের সমর্থন। ইমরানের নিজের দলের সাংসদ সংখ্যা ১৫৫। তাই দুই শরিককে নিয়েই তিনি চার বছর সরকার চালাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শরিকরা সরে যাওয়ায় পাটিগণিতের হিসেবে ইমরানের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, চলতি পরিস্থিতিতে ইমরান আস্থা ভোটে না গিয়ে সরে দাঁড়ালেই সম্মান ধরে রাখতে পারতেন।