প্রতিবেদন : উত্তর কলকাতার সিকদারবাগানের পুজো এবার ১১১তম বর্ষে পা দিল। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য ক’টা দিন পাড়ার সবাই একটা পরিবার হয়ে ওঠে। ১৯১৩ সালে রাজেন দত্ত, কেষ্ট বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ দাস, খোকা মণ্ডল প্রমুখের উদ্যোগে দুর্গোৎসবের সূচনা হয় লালমোহন মিত্রের প্রাঙ্গণে। পরে ঠাঁইবদল হতে থাকে। ১৯৩৩-য় সান্যালবাড়ির সামনের জমিতে, ৫০-এ ৫৫ সিকদারবাগানের সামনের রাস্তায়, ৯৬-এ ৭৮ নম্বর বাড়ির সামনে।
আরও পড়ুন-আজ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার রোনাল্ডিনহো
সেই পঞ্চাশের দশক থেকে পল্লির যেসব মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এই পুজো আজ সবার নজর কাড়ছে তাঁরা হলেন বলাই সান্যাল, শম্ভুনাথ বাগচী, মদন বসু, সুনীল পালেরা। এই পুজো সাবেকি ঘরানাতেই হত। শততম বর্ষে থিম পুজোর প্রচলন। আগে ঠাকুর তৈরি হত পাড়াতেই। একচালার সাবেকি ডাকের সাজের মূর্তি। চন্দননগর থেকে আসতেন মৃৎশিল্পী, কৃষ্ণনগরের থেকে ডাকের সাজ। বিসর্জনের পর কাঠামো চলে আসত পাড়াতে, পরের বছর আবার প্রতিমা তৈরি হত ওই কাঠামোয়।
আরও পড়ুন-গুজরাতে পিটিয়ে খুন বাংলার দুই শ্রমিককে, গ্রেফতার শূন্য
এই পুজো বরাবর শাস্ত্রীয় রীতি ও আচার মেনে হয়। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেবীর বোধন ও অস্ত্রদান, সপ্তমীর ভোরে নবপত্রিকা স্নান ও দেবীঘট প্রতিস্থাপন, অষ্টমীতে সন্ধিপুজো কুমারীপুজো, নবমীতে মহাভোগ, দশমীতে দেবীবরণ ও সিঁদুরখেলা। এই যাবতীয় আচার পালন করেন পল্লির মহিলারা। বিসর্জনেও পল্লিবাসীরা প্রতিমার সঙ্গে পাড়া প্রদক্ষিণ করেন। আগে পুজোয় নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জীবন চক্রবর্তী ও বংশী সিংহ। ওঁদের ছিল অপেশাদার নাট্যসংস্থা। আরেক সংস্থা ‘বান্ধবসমাজ’ করেছিল ‘নদীয়াবিনোদ’ পালা। যাতে অভিনয় করেন বিখ্যাত অভিনেতা ছবি বিশ্বাস (১৯৩২-১৯৩৬)। ছিল পালাগানের দল। শিবনাথ সান্যালের তত্ত্বাবধানে ‘ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ’ পালায় নামভূমিকায় মন জয় করেন। এবারের ভাবনা ‘শুদ্ধ সূচি’। রূপকার পাপাই সাঁতরা। প্রতিমাশিল্পী সনাতন পাল। শুদ্ধ সূচির অর্থ হল শুদ্ধতার তালিকা। তার লক্ষ্যেই এই ভাবনা পুজোয় আনা হয়েছে।