শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও, আগামী দিনে কর্মসংস্থান এবং কর্মসময়ের উপর বিশ্ব উষ্ণায়ন খুব খারাপ প্রভাব ফেলতে চলেছে, যার অনেকটাই আবার ভারতের মতো দেশের উপর। সম্প্রতি, রাষ্ট্রপুঞ্জের লেবার এজেন্সি এরকমই একটি আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে। ইউএন লেবার এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের মোট ওয়ার্কিং আওয়ার অর্থাৎ কর্ম সময়ের থেকে প্রায় ৫.৮% সময় কমে যাবে। যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে অতিরিক্ত হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন।
‘Working on a Warmer Planet: The Impact of Heat Stress on Labour Productivity and Decent Work’ নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক লেবার এজেন্সি জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আউটফিল্ডে বা আউটডোর কাজের ক্ষেত্রে বিপদের মুখে পড়তে হবে কর্মীদের। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়বে কৃষি ও নির্মাণ শিল্পে। তার কারণ এই দুটি ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ সময়ে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। কাজের গতি ও স্বতঃস্ফূর্ততা কমবে শ্রমজীবীদের। ভারতে মোট কর্মসময়ের ৫.৮% কমে যাওয়া মানে প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ফুল টাইম কাজ হারানোর সমান। এই দুটি সেক্টরের পাশাপাশি জরুরি পরিষেবা, পরিবহণ, বিপণনে ঘোরাঘুরির কাজ, পর্যটন, ক্রীড়া, অন্যান্য ঘোরাঘুরিভিত্তিক কাজ— এরকম একাধিক ক্ষেত্রে কাজের উপর উষ্ণায়নের (Weather) যথেষ্ট প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন – অসম থেকে আসা কয়লা পাচার বন্ধ করল পুলিশ
ভারতের মতো বাংলাদেশ, নেপাল, কলম্বিয়া-সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রায় ৯০% কর্মীই অসংগঠিত শ্রমজীবী। প্রতিকূল উষ্ণ (Weather) পরিবেশে শ্রমজীবীদের হিটস্ট্রোক তাপাহত হওয়া থেকে শুরু করে বিবিধ স্বাস্থ্য সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কর্মসংকটও এবার ভাবনা বাড়িয়েছে পরিবেশমহলে। ভাবতে হবে রক্ষামূলক ও বিকল্প ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতির কথা।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং শুধুমাত্র পৃথিবীর জলবায়ুর ক্ষতি করে না, কর্মসংস্থানেও ক্ষতি করে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘উষ্ণ গ্রহে কাজ করা : উৎপাদনশীলতা এবং কাজের উপর তাপের চাপের প্রভাব’ নামক রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপীয় চাপ সৃষ্টি হবে যার ফলে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮ কোটি মানুষ কর্মহারা হতে পারে।
এই অনুমানগুলি তাও ১.৫ ডিগ্রির বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে। এর সঙ্গে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী মোট কাজের ঘণ্টার ২.২% উচ্চতাপমাত্রার কারণে নষ্ট হয়ে যাবে। তবে, বিভিন্ন দেশগুলির মধ্যে তা অসমভাবে ছড়িয়ে পড়বে। যেসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কর্মঘণ্টার ক্ষতি হবে সেগুলি হবে দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকা। যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৪৩.৯ মিলিয়ন চাকরি হারাতে চলেছে। তাই তাপ-চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতিগুলি এই দেশগুলিতে ইতিমধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক অসুবিধাগুলির সঙ্গে মিলিত হবে, বিশেষ করে দরিদ্র্য, শ্রমিকদের উচ্চহার, জীবিকা নির্বাহের কৃষি এবং সামাজিক সুরক্ষার অনুপস্থিতি।
যাইহোক, তাপমাত্রা বৃদ্ধির (Weather) তীব্রতা দেশগুলির মধ্যেও পরিবর্তিত হতে পারে এবং বিশেষ করে শহরগুলিতে বেশি হবে৷ শহুরে অঞ্চলে এমনিতেই কর্মের সংস্থানের সুযোগ সবথেকে বেশি, স্বাভাবিকভাবেই উন্নততর শহরগুলির উপর গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও সব থেকে বেশি। যা কর্মসংস্থান হ্রাসের অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। শুধু তা-ই নয়, বড় বড় শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে এই উষ্ণায়ন। উন্নত দেশগুলো এখন থেকেই সতর্ক না হলে বিরাট কর্মসংকটের মুখে পড়তে পারে গোটা পৃথিবী। এমনিতেই সাম্প্রতিক মহামারী প্রচুর ক্ষতি করে দিয়েছে নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে। এর পাশাপাশি উষ্ণায়নের জোড়া আঘাত ভয়ঙ্কর হতে পারে সচেতনতা না তৈরি হলে।