হাঁপানির চিকিৎসায়

দিনে দিনে বাড়ছে বায়ুদূষণ আর সেই সঙ্গে বাড়ছে হাঁপানিও। ভুক্তভোগীরাই বোঝেন এর কষ্ট। তাই হাঁপানি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিবছর মে মাসে দ্বিতীয় মঙ্গলবারটি পালিত হয় ‘বিশ্ব হাঁপানি দিবস’ হিসেবে। গতকাল ছিল সেই দিনটি। লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে হাঁপানি বা অ্যাজমা। বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষিত দেশের তালিকায় ভারতের স্থান তিন নম্বরে। প্রথমেই রয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে উঠে এসেছে ভারতের রাজধানী শহর দিল্লির নাম। ভারতে দিল্লির পরেই রয়েছে ছত্তিশগড়ের রায়পুরের নাম। তাই হাঁপানি রুখতে প্রতিবছর মে মাসে দ্বিতীয় মঙ্গলবার পালিত হয় ‘বিশ্ব হাঁপানি দিবস’ বা ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাজমা ডে’।
‘বিশ্ব হাঁপানি দিবস’ প্রথম পালিত হয় ১৯৯৮ সালে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভারতে প্রায় ২০ মিলিয়ন হাঁপানি-রোগী রয়েছেন। এটি একটি ফুসফুসের রোগ। একে ব্রঙ্কিয়ল হাঁপানিও বলে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা অ্যাটাক কী
যখন আমরা স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিই তখন আমাদের শ্বাসনালির পেশিগুলো শিথিল থাকে। ফলে বাতাস খুব সহজে, শান্তভাবে চলাচল করতে পারে। ফুসফুসে বাতাস বহনকারী অজস্র সরু সরু টিউবের মতো নালি আছে সেগুলো কোনও কারণে সংকুচিত হলে ওর মধ্যে দিয়ে হাওয়া চলাচল করতে পারে না ফলে মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়।

হাঁপানির অ্যাটাক
ব্রঙ্কোস্পাজম
শ্বাসনালির চারপাশের পেশিগুলো সংকুচিত হয়ে শক্ত হয়ে যায় তখন শ্বাসনালিও সংকুচিত হয়। ওই সংকুচিত শ্বাসনালি দিয়ে বাতাস অবাধে প্রবাহিত হতে পারে না।
প্রদাহ
শ্বাসনালির আস্তরণ ফুলে যায়। ফোলা শ্বাসনালি ফুসফুস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস প্রবেশ বা বের হতে দেয় না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই শ্বাসকষ্টই পরে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
শ্লেষ্মা
হাঁপানিতে আক্রান্ত হবার সময় থেকেই শ্লেষ্মা বা মিউকাস তৈরি হতে থাকে। এই ঘন শ্লেষ্মা বা কফ বা মিউকাস শ্বাসনালি বন্ধ করে দেয়।

হাঁপানির কারণ
অ্যালার্জি অর্থাৎ ধুলো, ধোঁয়া, বাতাসে ভেসে থাকা ফুলের রেণু, পোষা পশুপাখির লোম, রান্নাঘর ও বিছানার ধুলো, তুলোর আঁশ ইত্যাদি শ্বাসনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর থেকে অ্যাজমার অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
পরিবেশগত উপাদান ধোঁয়া, গ্যাস, বা দূষণও হাঁপানির কারণ হতে পারে।
হাঁপানি কিন্তু জিনগত কারণেও হতে পারে। যদি পরিবারের কারও থাকে তবে পরবর্তী প্রজন্মের হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শৈশবে ভাইরাল সংক্রমণ হলেও পরে হাঁপানি হতে পারে।
মানসিক চাপ কিছু ক্ষেত্রে হাঁপানি বাড়ায়।
কিছু ক্ষেত্রে, গ্যাস্ট্রোসোফাজাল রিফ্লক্স রোগ (জিইআরডি) বা অন্যান্য রোগের কারণেও হাঁপানি হতে পারে।
অ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক ওষুধ, হাঁপানির কারণ হতে পারে।
তামাকের ধোঁয়া হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ায়।
কাজের জায়গায় রাসায়নিকের ধোঁয়া, ধুলো, গ্যাস ইত্যাদির প্রকোপে হাঁপানি শুরু হয়, একে অকুপেশনাল অ্যাজমা বলে।
ঋতুপরিবর্তনের সময় সর্দি-জ্বর হলে হাঁপানির প্রবণতা বাড়ে।
বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা হাঁপানির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড খাওয়া ও বাসস্থানের পরিবর্তনের ফলে হাঁপানি বাড়ছে।
হবু-মা ধূমপান করলে শিশুর হাঁপানির প্রবণতা থাকে।
ধূমপান এই রোগের ঝুঁকি অনেকটা বাড়ায়। প্যাসিভ ও সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়েও অ্যাজমার অ্যাটাক হতে পারে।

আরও পড়ুন- সিপিএমে নেই মানুষের আস্থা, হিন্দুদের বাঁচাতে পারছে না বিজেপি

হাঁপানির উপসর্গ
অল্পেই হাঁপ ধরে যাওয়া
বুকে চাপ-ভাব বা ব্যথার অনুভব
একটা অস্বস্তিজনক শ্বাসকষ্ট যা চলতেই থাকে সারাদিন-রাত।
খাবার খেতে অসুবিধে হয়, বমি হতে পারে।
শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার সময় সাঁই সাঁই শব্দ।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাশি বেড়ে যাওয়া।
ভাইরাল ফিভারের সঙ্গে সংক্রমণ হলে সমস্যা বাড়ে।

ইনহেলার
হাঁপানির চিকিৎসায় ইনহেলারের ভূমিকা অপরিসীম। একটা সময় ইনহেলার নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছিল না। কিন্তু এখন সেই ট্যাবু অনেকটাই কেটেছে। নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ডিভাইসের সাহায্যে ইনহেলার দিলে দ্রুত রোগের উপশম হয়। অনেকে ইনহেলার ব্যবহার করতে চান না বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু ওষুধের চেয়ে ইনহেলার অনেক বেশি কার্যকর। কেননা ইনহেলারের সাহায্যে ওষুধ নিলে তা সরাসরি শ্বাসনালিতে পৌঁছে যায়। রোগী দ্রুত আরাম পায়।

ইনহেলারের রকমফের
দু-রকম ইনহেলার ব্যবহার করা হয়। রিলিভার অর্থাৎ কাশি ও শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমানোর জন্যে একটা ইনহেলার। অ্যাজমার অ্যাটাক চলে যাবার পর আপাতদৃষ্টিতে অসুখটা আর নেই মনে হলেও আবার যে কোনও সময়েই ফিরে আসতে পারে। পুনরায় যাতে অ্যাটাক না হয়, তার জন্যেই প্রিভেন্টিভ ইনহেলার নেওয়া দরকার। একই সঙ্গে ট্রিগার ফ্যাক্টর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তবে কিছু জিনিস আমরা ইচ্ছে হলেও প্রতিরোধ করতে পারি না। যেমন ঋতু পরিবর্তনের সময় জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত বা পরিবেশ দূষণ। এই কারণে প্রিভেন্টিভ ইনহেলার ব্যবহার করে যাওয়া দরকার। স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেকে ভয় পান। জেনে রাখুন, অ্যাজমার চিকিৎসায় কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এগুলি আমাদের শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া মোটাসোটা চেহারা হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই ওজন ঠিক রাখতে সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
হাঁপানি কমাতে ঘরোয়া টোটকা
ত্রিফলা দেওয়া চা বা কফি খেতে পারেন। তাতে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়। যদি ত্রিফলার স্বাদ পছন্দ না হয়, তবে ত্রিফলা ট্যাবলেটও খেতে পারেন।
কাঁচা হলুদ খেলে খানিকটা কমে হাঁপানির কষ্টও। হলুদের প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা হাঁপানিতেও আরাম দেয়।

Latest article