মইনুল হাসান: সীমান্তরক্ষায় রত আছে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী। আমরা যাদের বি এস এফ বলতে অভ্যস্ত। দেশে এব্যাপারে একটা আইন আছে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (এ্যামেণ্ডমেন্ট) আইন। বহু পুরাতন আইন। সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, শান্তিরক্ষা ইত্যাদি ব্যাপারে বাহিনীকে অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুরত্ব একটা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার। প্রথমে ছিল সীমান্ত থেকে ৮ কিমি ভিতরে বি এস এফ এই সব বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে। পরে সংশোধন করে ঠিক হয় ১৫ কিমি। কয়েকটি রাজ্যে বেশি। যেমন গুজরাটের ক্ষেত্রে ৮০ কিমি। পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, আসামের ক্ষেত্রে ১৫ কিমি।
আরও পড়ুন-Mamata Bandopadhyay: রাজ্যে চালু হতে চলেছে মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ড, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
২০১০ সালে ডঃ মনমোহন সিং এর সরকার আইনটি পরিবর্তন করে দৈর্ঘ্যগুলি বাড়াতে চেয়েছিলেন। তখন অনেক মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করেছিলেন। সবচাইতে বেশি চেল্লামেল্লি করেছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী। বি এস এফের নজরদারির সীমানা বাড়ানোর তিনি ঘোরতোর বিরুদ্ধে ছিলেন। আইনটি এসব কারনে আর সংশোধিত হতে পারেনি।
আরও পড়ুন-বাসভাড়া বাড়বে না
গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এখন প্রধানমন্ত্রী। মন পাল্টে ফেলেছেন। এবার বি এস এফের নজরদারির সীমানা পাল্টে ফেলেছেন। আদেশ জারি হয়ে গেছে। পশ্চিমবাংলা, আসাম, পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে সীমান্ত থেকে ১৫ কিমি’র বদলে ৫০ কিমিতে বি এস এফের নজরদারি চলবে। আর গুজরাটের ক্ষেত্রে ৮০ কিমি কমে ৫০ কিমি হয়েছে। এই নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে বি এস এফ কারও কোন অনুমতি ছাড়া যে কারও বাড়ি তল্লাশি করতে পারবে, কোন দ্রব্য বাজেয়াপ্ত করতে পারবে, যে কোন সময় টহল দিতে পারবে, কাউকে গ্রপ্তার করতে পারবে। স্থানীয় রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের কোন অনুমতি অথবা সঙ্গ দরকার পড়বে না।
আরও পড়ুন-Walt Disney: অ্যানিমেশন জগতের রূপকার ওয়াল্ট ডিজনি
আমাদের সকলের জানা দরকার বি এস এফের হাতে এমন ক্ষমতা সীমান্ত এলাকায় দেওয়ার ফলাফল কি হতে পারে। আইনশৃংখলা রাজ্যের হাতে। কিন্তু এমন নিয়মের ফলে সীমান্ত এলাকা থেকে ৫০ কিমি এলাকা যৌথ শাসনের আওতায় পড়ে গেল। ফলে রাজ্যের অধিকার খর্ব হল। বি এস এফের কোন কাজে স্থানীয় মানুষ তো দুরের কথা রাজ্য প্রশাসন কোন কথা বলতে পারেনা।
আরও পড়ুন-Maithon: উড়ু-উড়ু মন? যান মাইথন
সীমান্ত এলাকার কর্মকান্ডে সাধারন জনজীবন ব্যতিব্যস্ত। ফসল আবাদ খুবই ক্ষতিগ্রস্থ। মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদীয়া, উত্তর দক্ষিন দিনাজপুর, কোচবিহার জেলা জুড়ে সীমান্ত গেছে। কাঁটাতারের বেড়া আছে। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ( বাংলাদেশের দিকে) আমাদের চাষের জমি আছে লক্ষ লক্ষ হেক্টর। কৃষকদের সেখানে চাষ করতে যেতে হয়। যাবার সময় ক্যাম্পে আধার কার্ড জমা রাখতে হয়। তারপর অনুমতি। সেটা পেতে পেতে চাষের সময় পেরিয়ে যায় বহু জায়গায়। সময়মত গেট খোলে না। যখন গেট খোলে তখন গিয়ে চাষ হয়না। এমন কি সব ফসল করার অনুমতি নেই। যেমন পাট লম্বা বলে বি এস এফের অত্যাচার সেটার চাষ করা যাচ্ছেনা। ফসল কাটার সময় আরও সমস্যা। পাকা ফসল পড়ে থাকে মাঠে। দিনের পর দিন মাঠে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়না।
আরও পড়ুন-চিংড়িঘাটায় বন্ধ হোক দুর্ঘটনা ,মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ পুলিশকে
গ্রামীন এলাকায় হাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানেই মানুষ সপ্তাহে ২ দিন বা ১ দিন তাদের কেনাকাটা করে। সন্ধ্যার পর হাট বসতে গেলে বি এস এফের অনুমতি দরকার। এবং সে অনুমতি পাওয়া যায়না। গরু/ছাগলের হাট হলে তো কথাই নেই। বি এস এফের অত্যাচারে গ্রামীন জনজীবন তথা আর্থিক চলাচল পশ্চিমবাংলার বিস্তীর্ন এলাকায় দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ৫০ কিমি’র মধ্যে তাদের কাজ বাড়ার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
আরও পড়ুন-Maithon: উড়ু-উড়ু মন? যান মাইথন
পশ্চিমবাংলায় চাষের কাজে গরুর ব্যবহার এখনও ব্যাপক। যদিও যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। গরু মহিষ কৃষক কেনা কাটা করে। হাট থেকে তার বৈধ কাগজ পত্র পাওয়া যায়। নতুন গরু মহিষ বাড়িতে দেখলেই প্রায় বিনা বাক্যে বি এস এফ তা খুলে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পে জমা করে। কোন কাগজই তাদের পছন্দ হয়না। শেষ পর্যন্ত কৃষককে উচ্চ জরিমানা দিয়ে ছাড়াতে হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বি এস এফ তাদের নির্দিষ্ট করা কারবারিদের কাছে সেটা বিক্রি করে দেয়। কৃষি অর্থনীতিতে এতবড় হামলা আর কেউ করে না। দেখা গেছে চাষের গরু মহিষ শুধু নয়, দুধের গরুও বি এস এফ নিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় এই সমস্ত অযৌক্তিক কার্যকলাপের ফলে পশ্চিমবাংলার জনজীবনে বড়রকম ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। গ্রাম্য সালিশীতে বি এস এফ অংশগ্রহন করে। অনেক সময়ই স্থানীয় রাজ্য পুলিশকে গৌন করে দেয়।
আরও পড়ুন-আবারও বিস্ফোরক প্রবীর ঘোষাল
সীমান্ত এলাকার গরিব চাষীদের উপর যেকোন সময় গুলি চালিয়ে খুন করে বি এস এফ। তারপরেই মৃতদের চোরাচালানকারি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের সময় শীতলকুচিতে বি এস এফ গুলিয়ে চালিয়ে নিরীহ মানুষদের, যারা ভোটার, তাদের মেরে ফেলেছিল। পশ্চিমবাংলায় সমস্ত সীমান্তে নিরীহ চাষীদের এমনভাবে অঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন-স্বাধীকারভঙ্গের নোটিশ
এবারও বি এস এফের কিছু কিছু জওয়ান ও আধিকারিককে কেন্দ্রের বি জি পি’র হয়ে ভোটের কথা বলতে শোনা গেছে। সেনা বাহিনী, রক্ষী বাহিনীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। তারা দেশ রক্ষা করছেন। তা করতে গিয়ে অনেকে প্রাণও দিচ্ছেন। তাদের প্রতি আমাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অসীম। কিন্তু কেন্দ্রের বি জে পি সরকার এই রক্ষী বাহিনীর মধ্যে রাজনীতি, ঘৃণ্য অপকৌশল ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টায় সতত নিয়োজিত।
সীমান্ত এলাকা থেকে ৫০ কিমি ভিতরে যদি হিসাব করা যায় তাহলে মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদীয়া, ২৪ পরগনায় জেলা শহরগুলি সেই সীমানার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কি করা হবে সেটার কোন উল্লেখ নেই দিল্লির নির্দেশে। আসলে পশ্চিমবাংলায় নির্বাচনে ঘোরতর পরাজয়, বহু আগে থেকে পাঞ্জাব হাতছাড়া, আসামে সাধের এন আর সি লাগু করতে না পারা – এসব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার দলবল অবসাদে ভুগছে। সেখান থেকে উত্থানের জন্য পিছন দিয়ে কেন্দ্রের অধিকার কায়েম করতে চায় রাজ্যে। কিন্তু তা আমরা তা হতে দেবোনা। রাস্তায় নেমে সেটাকে আটকাবো।