ব্রিজটাউন, বার্বাডোজ, ২০ জুন : ম্যাচে সামান্য যেটুকু চমক ছিল, সেটা শুরুতে। যখন রশিদ খানের ঘূর্ণিতে টুকটুক করে উইকেট যাচ্ছিল ভারতের (India vs Afghanistan)। কিন্তু সূর্যকুমার যাদব ২২ গজে নেমে পড়ার পর আফগানিস্তান সেই যে ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল, আর তাদের ফেরা হল না। শেষ বলে ১৩৪ রানে থেমে গেল আফগান ইনিংস। ফলে সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে ভারত জিতল ৪৭ রানে। এদিন ৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এই বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবথেকে বেশি উইকেট হল বুমরার। ৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন অর্শদীপ সিংও। আরও জরুরি তথ্য, এবারের বিশ্বকাপে এখনও অপরাজিত ভারত।
পাওয়ার প্লে-র মধ্যে আফগানিস্তান ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরই এই ম্যাচের ভবিতব্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ১৮২ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নামলে সবথেকে বড় শর্ত থাকে শুরুতে উইকেট না হারানো। কিন্তু ৬ ওভারের শেষে আফগানিস্তানের স্কোর ছিল ৩৫/৩। ততক্ষণে বুমরা দুটো, অক্ষর একটা উইকেট নিয়ে ফেলেছেন। টপ অর্ডার এভাবে ধাক্কা খাওয়ার পর আফগানদের আমেরিকার মতো বড় মাপের কোনও অঘটন ঘটানো সম্ভবই ছিল না।
বুমরা কেন নতুন বল পাচ্ছে না, এটা নিয়ে প্রাক্তনদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন। এখানে সেই বুমরাই অর্শদীপের সঙ্গে শুরু করলেন। কেন শুরু করলেন তার একটা ব্যাখ্যা আছে। সিরাজকে বসিয়ে কুলদীপকে এই ম্যাচে দলে রেখেছিল ভারত। তাই সিরাজের জায়গায় নতুন বল শেয়ার করতেই হত বুমরাকে। সেটাই হয়েছে। আর তিনি প্রথম স্পেলে দুই ওভারে ৫ রান দিয়ে গুরবাজ (১১) আর জাজাইকে (২) ফিরিয়ে দেওয়ার পর আর ম্যাচে ফেরার সুযোগ হয়নি আফগানিস্তানের (India vs Afghanistan)।
গুলবদিন (১৭) আর ওমরজাই (২৬) অবশ্য একটা চাপের ব্যাপার তৈরি করেছিলেন। তবে অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু জারদানকে (৮) অক্ষর ফেরত পাঠানোর পর খুব তাড়াতাড়ি কুলদীপ আর জাদেজাও কাজে নেমে পড়লেন। গুলবদিনকে কুলদীপ ও ওমরজাইকে জাদেজা ফিরিয়ে দেন। ১১.১ ওভারের মধ্যে ৭৫ রানে অর্ধেক ব্যাটিং খুইয়ে বসার পর ম্যাচ তখনই প্রায় নিয়মরক্ষায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কুলদীপ নিয়েছেন ২টি উইকেট।
বিশ্বকাপে রশিদ খানকে যাঁরা অফ ফর্মে দেখছিলেন, তাঁদের জন্য বার্বাডোজের এই ম্যাচকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ৪-০-২৬- ৩, এর থেকে ভাল আর কী করতে পারতেন আফগান রিস্ট স্পিনার। সঙ্গে আরও কিছু তথ্য যোগ করে ফেলা যাক। কাদের উইকেট নিয়েছেন তিনি? বিরাট কোহলি (২৪), ঋষভ পন্থ (২০) ও শিবম দুবে (১০)। বুঝতে অসুবিধা হয় না ব্যাটাররা মোটামুটি সেট হয়ে যাওয়ার পর রশিদ তাদের তুলে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন- নিট-নেট কেলেঙ্কারি ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনা: ধর্মেন্দ্র-অশ্বিনীকে বরখাস্তের দাবি তৃণমূলের
রোহিত টসে জিতে আগে ব্যাট নেন এই জন্য যে, পরের দিকে কেনসিংটন ওভালের উইকেট স্লো হয়ে যায়। কিন্তু তিন ওভারের মধ্যে তিনিই (৮) যে ফারুকিকে উইকেট দিয়ে যাবেন, কে ভেবেছিল। এবারের টুর্নামেন্টে ভারতীয় টপ অর্ডার ব্যাটিং একদম জমেনি। রোহিত, বিরাটের ইনিংস শুরুটাও তাই। যশস্বী জয়সওয়াল বাইরে আছেন এটা ভুললে চলবে না। বিরাটকে সামান্য পিছনে পাঠিয়ে যশস্বীকে এগারোয় আনা যায় কি না ভাবা যায়।
কপাল ভাল যে, সূর্য ওরকম একটা ইনিংস খেলে গেলেন। আমেরিকা ম্যাচেও থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে রক্ষা করেছিলেন। ঋষভ (২০) আউট হয়ে যাওয়ার পর রশিদের ঘূর্ণিতে চাপে পড়েছিল ভারত। সূর্য ঠিক এখন থেকেই খেলাটা ধরেন। তাঁর সঙ্গে হার্দিকের জুটিতে যে ৬০ রান উঠে এল, সেটাই শেষমেশ ভারতকে ১৮১/৮-এ পৌঁছে দিল। তবে ২৪ বলে ৩২ রান করা হার্দিক প্রথমদিকে আর একটু রানের খোঁজ করলে স্কোরবোর্ড একটু স্বাস্থ্যবান হত। সূর্য ম্যাচের সেরা হয়েছেন।
সূর্য ২৮ বলে ৫৩ রান করেছেন। অসাধারণ ইনিংস। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা। তিনি পরে বলছিলেন, ৭-১৫ ওভারের মধ্যেই যে তাঁকে খেলতে হবে, সেটা বুঝে গিয়েছেন। সেইমতো পরিকল্পনাও সেরে নেন। এদিন যখন নামেন, টপ অর্ডারে কয়েকজন ফিরে গিয়েছেন। সূর্য বললেন, আমি এভাবে আগেও খেলেছি। বলতে পারেন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। অধিনায়ক রোহিত ম্যাচের আগে তাঁর সম্পর্কে ভাল ভাল কথা বলেছেন। যা নিয়ে সূর্য বললেন, আমি ওর নেতৃত্বে প্রচুর খেলেছি। রোহিত ভাই জানে আমি কী পারি। তাই ব্যাটে রান না থাকলেও ভরসা হারায় না।
একটা সময় মনে হচ্ছিল ভারত এতটা আসতে পারবে না। কিন্তু এল লোয়ার অর্ডার কমবেশি রান করে দেওয়ায়। অক্ষর ৬ বলে ১২ রান করে গেলেন। জাদেজা ৫ বলে ৭ রান। রশিদ ছাড়া আফগান বোলারদের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়েছেন ফাজলহক ফারুকি। তবে দিনের শেষে ভারতের ১৮১ রানটাই বড্ড বেশি হয়ে গিয়েছিল।