মুম্বই, ১৫ নভেম্বর : গ্লেন ফিলিপস যখন বুমরাকে বাউন্ডারি পার করতে গিয়ে জাদেজার হাতে ধরা পড়লেন, অনেকক্ষণ বাদে নড়েচড়ে বসল গ্যালারি। মিচেলের সঙ্গে ফিলিপসের (৪১) জুটিতে শুধু ৭৫ রান ওঠেনি, ফাইনালের দরজায় একটা একটা করে তালা পড়তে শুরু করেছিল। পরের ওভারে কুলদীপ ফেরালেন চ্যাপম্যানকে (২)। কিউয়িদের রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চারে তখন দাড়ি, কমা, ফুলস্টপ পড়ছে!
তখনও ড্যারেল মিচেল (১৩৪) লড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা বুমরা-শামি-কুলদীপের চক্রব্যূহে অভিমন্যুর মতো! বল কমছে, আস্কিং রেট বাড়ছে। শেষমেশ সেই চাপেই শামিতে বিদ্ধ মিচেল। শামির এটা ছিল পঞ্চম উইকেট। এই বিশ্বকাপে তিনবার ৫ উইকেট নিলেন বঙ্গ পেসার। অতঃপর আরও দুটি উইকেট নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৯.৫ ওভারে ৫৭ রানে ৭ উইকেট। বিশ্বকাপে এটাই ভারতীয়দের মধ্যে সবথেকে বেশি। নিউজিল্যান্ড ৪৮.৫ ওভারে অলআউট হয়ে গেল ৩২৭ রানে। এরফলে মুম্বইয়ের সেমিফাইনাল ৭০ রানে জিতে রোহিতরা (India- New Zealand) পৌঁছলেন ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনালে।
এই ম্যাচের আগে প্রাক্তনদের কয়েকজন রোহিতকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ড্যারেল মিচেল হইতে সাবধান! এঁদের মধ্যে অ্যারন ফিঞ্চও ছিলেন। মিচেল যখন সত্যিই কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে লম্বা পার্টনারশিপ খেলছেন, মনে হচ্ছিল কী বিচক্ষণ পর্যবেক্ষণ। এই মিচেলের হাতে বড় শট আছে। সেটা ফের টের পাওয়ালেন। অধিনায়ক উইলিয়ামসন শুধু মঞ্চে সাপোর্টিং ব্যাটারের ভূমিকা পালন করে গেলেন।
নিউজিল্যান্ড কিন্তু ৩৯ রানে দু’জনকে হারিয়ে বসেছিল। কনওয়েকে (১৩) যখন শামি ফেরালেন, বোর্ডে রান ৩০। ৯ রান হতে না হতেই রাচিন রবীন্দ্রও (১৩) শামির শিকার হলেন। অদ্ভুতভাবে উইলিয়ামসন ও মিচেলের মধ্যে ১৮১ রানের পার্টনারশিপের পর শামিই আবার ম্যাচে ফেরালেন ভারতকে (India- New Zealand)। তিনি পরপর তুলে নিলেন উইলিয়ামসন (৬৯) ও লাথামকে (০)। নিউজিল্যান্ড ২২০/২ থেকে দুই বলের মধ্যে ২৩০/৪।
এই ধাক্কাটাই আর নিতে পারল না নিউজিল্যান্ড। বুমরা ১০ ওভারে ৬৪ রানে একটি উইকেট নিয়েছেন। কুলদীপ ও জাদেজার ১০ ওভারে রান যথাক্রমে ৫০ ও ৬৩। জাদেজা উইকেট না পেলেও কুলদীপ চ্যাপম্যানকে ফিরিয়েছেন। শামি বেশি উইকেট নিলেও নিউজিল্যান্ডকে চাপে রেখেছিলেন বুমরা ও কুলদীপ। তবে দ্বিতীয় স্পেলে এসে শামি যেভাবে কিউয়ি ব্যাটিংকে খতম করেছেন, তা অনবদ্য। রাতের দিকে মুম্বইয়ের উইকেট শিশিরে স্লো হয়ে যায়। শামি সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
৫০তম সেঞ্চুরির পর বিরাট যে লাফটা দিলেন, সেটাই বুধবারের সেরা মুহূর্ত। একশো হয়ে গেল সেটা দৌড়ানোর মধ্যে বুঝেছিলেন। তখনই ব্যাট আকাশের দিকে। অতঃপর মাথা নোয়ালেন নির্দিষ্ট একজনকে লক্ষ্য করে। শচীন রমেশ তেন্ডুলকর তখন হাসিমুখে হাততালি দিচ্ছেন। বক্সে থাকা অনুষ্কার দিকেও ব্যাট দেখালেন কিং কোহলি। তিনিও হাসি ছড়ালেন। এই ম্যাচের অতিথি ডেভিড বেকহ্যাম অবশ্য বিরতিতে মাঠেই জড়িয়ে ধরলেন ১১৩ বলে ১১৭ রান করা বিরাটকে।
ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে শচীনের ৪৯তম সেঞ্চুরিকে ছুঁয়েছিলেন বিরাট। দশদিনের মধ্যে আইডলকে টপকে গেলেন। বিরাট পরে যেটা বললেন, সেটাই ঠিক। তিনি নিজেকে অনেক গুটিয়ে রেখেছিলেন যাতে পরের দিকের ব্যাটারদের ভরসা জোগাতে পারেন। এদিন তাঁর পাশে ৭০ বলে ১০৫ রান করে গিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার। দু’জনের জুটিতে উঠেছে ১৫৬ রান। পরের দিকে কে এল রাহুল নট আউট থেকে যান ৩৯ রানে। এঁদের জন্যই ৫০ ওভারে ৩৯৭/৪ উঠে এসেছে।
আইসিসি ইভেন্টে নিউজিল্যান্ড চিরকালীন কাঁটা ভারতের। ইংল্যান্ডে ২০১৯-এর সেমিফাইনালে এই দলের কাছে ভারত হেরেছিল ১৮ রানে। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে বুধবার রোহিত আর শুভমন যে মেজাজে শুরু করেছিলেন, তাতে উইলিয়ামসনদের কেমন যেন গুটিয়ে থাকতে দেখা গেল। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক অবশ্য টসের পর বলছিলেন, আমরা আগে ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। রোহিত ২৯ বলে ৪৭ রান করে ফিরে গেলেন। গাভসকর বলেছেন, রোহিত নিঃস্বার্থ ক্রিকেটার। হিটম্যানের সংক্ষিপ্ত ইনিংস সেটাই বোঝাল। তিনি শুরু করেছিলেন বোল্ট, সাউদিদের উড়িয়ে। শেষও করলেন নিজের মেজাজে।
আরও পড়ুন- দেশে ফিরেই ইস্তফা বাবরের