পার্ল: পার্ল মাঠের চতুর্দিকে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। রুখু পাহাড়ের দিকে চোখ রাখলে বঙ্গ পাঠকের চাঁদের পাহাড় মনে পড়তে পারে! কত বছর আগে শঙ্করের আফ্রিকা জয়ের কথা লিখে গিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার আরও এক আফ্রিকা (India vs South Africa) জয় লিপিবদ্ধ হল ইতিহাসের পাতায়। আফ্রিকায় একদিনের সিরিজ জয়। অধিনায়ক কে এল রাহুল জানতেও পারলেন না এক বঙ্গ যুবার পাশে তিনি কেমন ভক্তদের মননে চিরকালীন হিরো হয়ে গেলেন!
৭৮ রানে জিতল ভারত। সিরিজ ২-১। অথচ, ২০ ওভারে একশো রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা ভালই শুরু করেছিল। মোটামুটি এরকমই রান ছিল ভারতের (India vs South Africa)। এই জায়গায় রাহুলদের তিন উইকেট পড়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই। রিজা হেনড্রিক্স (১৯) আর রসি ভ্যান ডার ডুসেনকে (২) ৭৬ রানের মধ্যে হারিয়েছিলেন মার্করামরা। সেখান থেকে ২৬তম ওভারে ১৪১ রান উঠে আসার পর মার্করাম (৩৬) ওয়াশিংটন সুন্দরকে রিভার্স সূইপ মারতে গিয়ে উইকেটের পিছনে রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান।
এরপরও দক্ষিণ আফ্রিকা এগোচ্ছিল। টনি ডি জর্জি আরও একটা অসাধারণ ইনিংস খেললেন। তবে যখন মনে হচ্ছিল আরও একটা সেঞ্চুরি আসছে, তখনই অর্শদীপের বলে এলবি হয়ে গেলেন ৮১ রানে। ৮৭ বলে ছ’টি চার ও তিন ছক্কায় এই রান করেছেন তিনি। তবে ক্লাসেন (২১) আর মুল্ডার (১) ফিরে যাওয়ার পর স্থানীয়রা যখন ১৭৭/৬ হয়ে গেল, দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে যায়। এরপর অর্শদীপ সিং ৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তাদের ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দেন। সিরিজে দশ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার।
সঞ্জু স্যামসন আর তিলক ভার্মা যখন ভারতীয় ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন সঞ্জয় মঞ্জরেকর বললেন, রাহুল দ্রাবিড় দলের সঙ্গে এই মুহূর্তে না থাকলেও নিশ্চিতভাবে এদের দেখে খুশি হচ্ছেন। দ্রাবিড় বর্তমানে টেস্ট দলের প্রস্তুতিতে রয়েছেন। আর এখানে যে দু’জন ভারতীয় ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন তাঁরা আইপিএল প্রোডাক্ট। সঞ্জু কেন এত সুযোগ পেয়েও জাতীয় দলে জায়গা করতে পারেননি, সেটা প্রশ্ন। কিন্তু বৃহস্পতিবার তাঁর ১১৪ বলের ইনিংস (১০৮) অনেকদূর এগিয়ে দিল।
১০১ রানে রাহুল ফিরে যাওয়ার পর সঞ্জু স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নেন। তার আগে সঞ্জু রাহুলকেই এগিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিলককে পাশে নিয়ে স্কোর এগিয়ে নিয়ে যান। এরমধ্যে তিলকও একদিনের ক্রিকেটে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি (৫২) তুলে নেন। দুজনের জুটিতে উঠেছে ১১৬ রান। সঞ্জুর এটা প্রথম সেঞ্চুরি। ছ’টি চার ও তিনটি ছয়। আইপিএলে যে মেজাজে তাঁকে দেখে অভ্যস্ত সবাই, এদিন ততটা মার-মার করে খেলেননি। কিন্তু তিলককে নিয়ে তিনি এই ইনিংস খেলছেন বলেই ভারত ৫০ ওভারে ২৯৬/৮ পর্যন্ত যেতে পেরেছে।
চমৎকার রোদ্দুরের মধ্যে ব্যাট করল ভারত। কিন্তু মার্করাম কেন আগে ভারতকে ব্যাট করতে দিলেন সেটা বোঝা গেল একটু পরেই। এমনিতে এখানে আগে যে পাঁচটি একদিনের ম্যাচ হয়েছে তাতে প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছে তিনবার। পরে ব্যাট করা দল দু’বার। প্রথমে ব্যাট করে গড় রান উঠেছে ২৯০-এর মতো। তবু দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ভারতকে আগে ব্যাট করতে দিলেন, কারণ তিনি জানেন উইকেটে কিছু আছে। আর সেটা এই যে, বল এল ভীষণ ধীরে। স্লো ও পাটা উইকেট এটা।
রজত পাতিদার আর ওয়াশিংটন সুন্দরকে (১৪) প্রথম এগারোয় এনে ম্যাচে নেমেছিল ভারত। কিন্তু পাতিদার (২২) উইকেটে সেট হয়ে ফিরে গেলেন বাঁহাতি নান্দ্রে বার্গারের বলে বোল্ড হয়ে। ৩৪ রানে পাতিদার আউট হওয়ার ১৫ রান পরেই ফিরলেন আগের দুই ম্যাচের নায়ক সাই সুদর্শন। তিনি হেনড্রিক্সের বলে এলবি হয়ে গেলেন ১০ রানে। এরপর সঞ্জু স্যামসন আর রাহুল মিলে জুটিতে ৫২ রান তুলে ফেলার পর মনে হচ্ছিল পায়ের তলায় জমি পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। আর ঠিক তখনই রাহুল (২১) মুল্ডারের বলে ক্যাচ দিয়ে গেলেন ক্লাসেনের হাতে।
সঞ্জু আউট হয়ে যাওয়ার পর আর একটা রিঙ্কু শো দেখল দক্ষিণ আফ্রিকা। আগের ম্যাচে রান পাননি। এখানে ২৭ বলে ৩৮ রান করে গেলেন মিস্টার ফিনিশার। খুব যে মার-মার করে ব্যাট করলেন, এমন নয়। তবু শেষদিকে ভারতের ইনিংসকে টেনে নিয়ে গেলেন রিঙ্কু। শুধু বার্গারের লো ফুলটসকে বাউন্ডারির ওপারে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়লেন হেনড্রিক্সের হাতে।
আরও পড়ুন- টেট পরীক্ষার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পৃথক প্রশ্নপত্রের সেট