প্রতিবেদন: বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে পারে। কারণ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইউনুস সরকারের জন্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কড়া সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লি। মোদি সরকারের নয়া সিদ্ধান্ত, কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করছে। ৮ এপ্রিল জারি করা নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৯ জুনের পুরনো নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য প্রবাহে বাংলাদেশ বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড জানিয়েছে, নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা অবিলম্বে বন্ধ হয়ে গেলেও পূর্ববর্তী ব্যবস্থার আওতায় ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করা পণ্যবাহী চালানগুলো প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।
আরও পড়ুন-ইগো নিয়ে ব্যাট করি না : বিরাট
যদিও দ্রুত তাদের ভারত ভূখণ্ড ছাড়ারও নির্দেশ রয়েছে। এই সিদ্ধান্তে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের পিছনে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত ২৬ থেকে ২৯ মার্চ চিনে চারদিনের সফরের সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুস মন্তব্য করেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য, যেগুলি ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত, একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে সরাসরি প্রবেশাধিকার নেই। আমরাই এই সমগ্র অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। ইউনুস আরও বলেন, এই অঞ্চলে চিনা অর্থনীতির সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানির এক নতুন হাবে পরিণত হতে পারে।অধ্যাপক ইউনুসের এই বক্তব্যকে ভারত স্পষ্ট প্ররোচনা হিসেবে দেখছে। অনেকের মতে, বাংলাদেশ চিনকে একটি নতুন কৌশলগত অংশীদার হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে, যা দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ককে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে। থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ-এর প্রধান ও ভারতের প্রাক্তন বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ভারত গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশকে একমুখী শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা দিয়ে এসেছে। মদ ও সিগারেট ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্য ভারতের বাজারে শুল্ক ছাড়াই প্রবেশ করতে পেরেছে। তাঁর মতে, ভারতের দীর্ঘদিনের সহযোগিতা সত্ত্বেও ঢাকা যদি বেজিংমুখী অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে তা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল কেবল অর্থনৈতিক প্রভাবই ফেলবে না, বরং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।