লন্ডন, ১৩ জুলাই : শেষবেলায় করুণ আর শুভমনের উইকেট দামি হয়ে গেল। করুণ এমন বল ছাড়লেন যে সেটা স্ট্যাম্পের ঠিক সামনে পায়ে লাগল। ১৪ করে ফিরে গেলেন। পরের ধাক্কা আরও জোরালো। সেই কার্স। শুভমন (৬) ফুটওয়ার্ক ছাড়াই ডিফেন্স করলেন। বল প্যাডে। এরপর নাইট ওয়াচম্যান আকাশ (১)। তার আগে শুরুতেই যশস্বীকে (০) হারিয়েছিল ভারত (India vs England)। দিনের শেষে ৫৮/৪। দরকার ১৩৫ রান। হাতে ৬ উইকেট।
শুভমনদের টার্গেট ছিল ১৯৩। সেটা এখনও দূরে। একটা আস্ত দিন পড়ে। পরিস্থিতি বলছে লর্ডসে যদি কেউ এগিয়ে থাকে সেটা ইংল্যান্ড। পঞ্চম দিন বল নতুন থাকবে। ডিউক বলে পালিশ বেশি থাকে। রাহুল ৩৩ রানে ব্যাট করছেন। তিনিই ভরসা। তবে ঋষভ, জাদেজা, নীতীশ, ওয়াশিংটনরা আছেন। ফলে জয়ের আশা নেই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু জয় কাদের কপালে আছে সেটা সময় বলবে। শুধু শেষদিনে রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেটের অপেক্ষায় এখন লর্ডস।
সকালের দুটো ঘণ্টা কেন, তার পরেও অনেকটা সময় শুভমন সিমারদের উপর আস্থা রেখেছেন। হাতে বুমরা থাকলে তিনি সেটাই করবেন। কিন্তু ইংল্যান্ড যে ৬২.১ ওভারে ১৯২ রানে গুটিয়ে গেল, সেটা বুমরার জন্য নয়। তিনি ৩৮ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। সিরাজেরও দুই উইকেট। কিন্তু চায়ের আগে ইংল্যান্ড ইনিংসে ধস নামিয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ২২ রানে শুধু চার উইকেট নেননি, রুট থেকে শুরু করে স্টোকস, স্মিথ, আর্চার সবাইকে বোল্ড করেছেন। আরও তথ্য, ইংল্যান্ড ইনিংসে সাতজন ব্যাটার বোল্ড হয়ে ফিরে গিয়েছেন।
হ্যারি ব্রুক আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ড তবু ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। রুট (৪০) আর স্টোকস (৩৩) মিলে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এই দু’জন ফিরে যাওয়ার পর ইনিংস আর দাঁড়াতে পারেনি। জেমি স্মিথ (৮) এই সিরিজে রানের মধ্যে আছেন। ফলে তাঁর দিকে তাকিয়েছিল দল। কিন্তু স্মিথ ওয়াশিংটনকে সামলাতে পারেননি। পরের দিকে একমাত্র ওকস (১০) দুই অঙ্কে পা রেখেছেন। বাকিরা এতদূরও আসতে পারেননি।
আরও পড়ুন-প্রথম উইম্বলডন ট্রফি সিনারের
ইংল্যান্ড শেষ ৬ উইকেট ৩৮ রানে হারিয়েছে। ওয়াশিংটন তখন স্টোকসদের ঘাড়ে চেপে বসেছেন। এই উইকেটে বল বেশি মুভ করেনি। ওয়াশিংটন খুব বেশি যে বল ঘোরাতে পেরেছেন তাও নয়। কিন্তু তিনি যেহেতু বেশ লম্বা, তাই উপর থেকে মাটিতে বল ফেলার পর একটা স্বাভাবিক গ্রিপ পেয়েছেন। অনেক সময় বল ঘোরেনি। কিন্তু ব্যাটাররা স্পিন করবে ভেবে খেলে ঠকেছেন। বশির সবথেকে বড় উদাহরণ। বল তাঁর স্ট্যাম্প ফেলে দিয়েছে।
তার আগে ব্রুককে বোল্ড করে আকাশ দীপ যেভাবে মুষ্টিবদ্ধ হাত মাটিতে ছুঁড়ছিলেন, তাঁর যথেষ্ট কারণ আছে। একটু আগে পরপর দু’বলে আকাশকে স্কুপ মেরে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছিলেন ব্রুক। তারপর এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে ছক্কা। ফাস্ট বোলাররা এই শাসন ভালভাবে নেয় না। আবার সুইপ মারতে গিয়েছিলেন আকাশকে। ব্রুককে আউট করে ভিতরে পুষে রাখা ক্ষোভ উগরে দেন বঙ্গ পেসার। ইংল্যান্ড তখন ৮৭/৪।
মাইক আথারটনরা ব্রুকের উইকেটকে গিফট উইকেট বলছেন। কিন্তু তার আগে সকালে যে তিনটে উইকেট চলে গেল, সেগুলো কিন্তু গিফটেড উইকেট নয়। সিরাজ ডাকেট (১২) আর পোপকে (৪) ফিরিয়েছেন। ক্রলিকে (২২) নিয়েছেন নীতীশ। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এটাই, এই চার উইকেটের একটাও বুমরার নয়। কিন্তু তারপরও দু’ঘণ্টায় ইংল্যান্ড (India vs England) ৯৬ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়েছে। ফলে শুভমনদের জন্য সকালটা ভালই কেটেছে।
নাসের হুসেন বলছিলেন অন্তত এই টেস্টে বোলাররা ছড়ি ঘোরাল। প্রথম দুই টেস্টে উল্টো ছবি ছিল। বিলক্ষণ। খেয়াল রাখতে হবে এখানে কেউ চারশো করেনি। বরং দুটো দল প্রথম ইনিংস শেষ করেছে সমান স্কোরে, ৩৮৭। এরপরও বলার, বুমরাকে ছাড়াই ইংল্যান্ড ইনিংসে ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে। সিরাজ বুমরার ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন। বেরিয়ে এসেছেন। আকাশ বার্মিংহামে দশ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন। তাঁর ভিতরে আসা বল সমস্যায় ফেলছে। এদিন ওয়াশিংটনও সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন।