ম্যাঞ্চেস্টার, ২৪ জুলাই : ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইংল্যান্ডের (India vs England) ব্যাটিং দেখে মনে হতে পারে ওরা বুমরা-ভীতি কাটিয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় দিন ১৩ ওভার বল করে তিনি উইকেট পাননি। সিরিজে যা আকল্পনীয়। কিন্তু আসল আলোচনা হোক উইকেট নিয়ে। বাইরে সবুজ। বল পড়লেই পাটা। এই ধোঁকাটাই খেলেন শুভমনরা। বল সিম করবে ভেবে শার্দূল ঠাকুর, অংশুল কাম্বোজ। ফল কার্যত শূন্য। এখন ইংল্যান্ডের ২২৫/২ দেখে কুলদীপের জন্য হা-হুতাশ করে লাভ নেই। অথচ এমন উইকেটে তাঁকেই দরকার ছিল।
ম্যাঞ্চেস্টারে একটা আসনও খালি যায়নি বৃহস্পতিবার। যে জন্য লোকজনের মাঠে আসা সেটা উসুল। ভাঙা পায়ে ঋষভের লড়াই। জোফ্রার নিখুঁত আউট স্যুইংয়ে স্ট্যাম্প উড়ে যাওয়া। তারপর ইংল্যান্ড (India vs England) ওপেনারদের বুমরা সামলে পাল্টা আক্রমণ। সিরিজে ইংল্যান্ড প্রথমবার ওপেনিংয়ে একশো দেখল। দুই ওপেনার হাফ সেঞ্চুরি করলেন। কিন্তু বেশি স্বস্তি দিল জ্যাক ক্রলিকে (৮৪)। তাঁকে রোজ পরীক্ষার সামনে পড়তে হচ্ছে। বয়কট, আথারটনরা বাদ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তবে ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমের অগাধ আস্থা ক্রলির উপর। বলা হয়নি তাঁকে আউট করেছেন জাদেজা। আর ডাকেট (৯৪) কম্বোজের প্রথম টেস্ট শিকার।
লাঞ্চের একটু আগে ঋষভ পন্থ যখন ব্যাট করতে নামেন, ওল্ড ট্রাফোর্ড উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাল। এমন নয় যে বাঁহাতি কিপার-ব্যাটার ফের গাব্বা জয়ের মতো কাণ্ড ঘটিয়েছেন। বড়জোর আগের দিনের ৩৭ রান নিয়ে খেলতে নামলেন। কিন্তু তাঁর রক্তঝরা পা নিয়ে গলফ কার্টে করে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়া সবাই দেখেছে। ঋষভ আর এই টেস্টে নেই বলে ভন-পন্টিংরা রায় পর্যন্ত দিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু সবাইকে আর একবার তিনি ভুল প্রমাণ করলেন।
এরপরও কাহিনি অসমাপ্ত থাকবে যদি বাকিটা না বলা হয়। বাঁ পা ফেলতে পারছেন না। ফুট মুভমেন্টের প্রশ্ন নেই। সিঙ্গলস দূরের ব্যাপার। এই অবস্থায় নামের পাশে আর একটা হাফ সেঞ্চুরি জুড়ে ফেললেন তিনি। খেললেন জায়গায় দাঁড়িয়ে। এর মধ্যে ঋষভ জোফ্রাকে মিড উইকেট গ্যালারিতে ফেলে দিলেন। কমেন্ট্রি বক্সে প্রাক্তনরা বলাবলি করছিলেন, আরে, যাকে নিয়ে বলছিলাম কবে আবার মাঠে দেখব, সে শুধু ব্যাট করতে এল না একটা হাফ সেঞ্চুরিও (৫৪) করে ফেলল!
আর এটা ঋষভ বলেই সম্ভব। গাড়ি দুর্ঘটনার পর দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন। তখন মনে হয়েছিল জীবন পেলেও ক্রিকেটকে ফিরে পাবেন না। সেটাও ভুল প্রমাণ হয়েছে। ঋষভ ফিরে এসেছেন দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে। এবার ইংল্যান্ড সফরে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন। শুভমনের পরেই তাঁর রান। তবে তিনশোর বেশি রান উঠে যাওয়ার পরও ঋষভকে ব্যাট করতে নামানো একটু বেশি ঝুঁকির হয়ে গেল কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। বিশেষ করে ক্রিকেট পণ্ডিতরা যখন এই টেস্টে তাঁকে আর দেখতেই পাচ্ছিলেন না! কিন্তু তাঁর এই লড়াই না থাকলে ভারত ৩৫৮ পর্যন্ত যেতে পারত না। স্টোকস ৭২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। ৩ উইকেট জোফ্রার।
লাঞ্চের আগে দুটো উইকেট পড়েছিল ভারতের। জাদেজা আগের দিনের রান বাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। তিনি জোফ্রার বলে ব্রুকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ২০ রানে। পরের উইকেট শার্দূলের (৪১)। তাঁর উইকেট নিয়েছেন স্টোকস। লোয়ার অর্ডারে রান করতে পারবে এমন ভাবনা থেকে নীতীশের জায়গায় নেওয়া হয়েছে শার্দূলকে। না হলে কুলদীপ দলে আসতেন। ব্যাট হাতে যে লড়াই শার্দূল করে গেলেন, তাতে টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনাই ঠিক বোঝা গেল। কিন্তু তিনি এক-আধটা উইকেট পেলে ভাল হত। পরের দিকে ভাঙা পা নিয়ে ঋষভ দাঁড়িয়ে থাকলেন। যাতে ওয়াশিংটন সুন্দর (২৭) স্কোর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
ইংল্যান্ড ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩৩ রানে পিছিয়ে। শুক্রবার সকালের দু-ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচে ফিরতে হলে বুমরা-ম্যাজিক চাই ভারতের। তা না হলে ইংল্যান্ড এগিয়ে যাবে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। ভুলে গেলে চলবে না সিরিজে ভারতই কিন্তু পিছিয়ে আছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গ সিপিএমকে পথে বসিয়ে তৃণমূলের ভাষা আন্দোলনকে সমর্থন মানিকের