গুয়াহাটি, ২ অক্টোবর : শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার (India vs South Africa) দরকার ছিল ৩৭ রান। ৬ বলে ৩৬ হয়ে গেলে টাই। এমনিতে কঠিন পরিস্থিতি। রানটা তোলা অসম্ভব। কিন্তু মিলার আর ডি’কক মিলে এতক্ষন যে ব্যাটিং করছিলেন তাতে অসম্ভবকেও অসম্ভব মনে হচ্ছিল না!
শেষপর্যন্ত অবশ্য জেতা হয়নি বাভুমাদের। ১৬ রানে ম্যাচ হেরে সিরিজ খোয়ালেন তাঁরা। ভারতের মাটিতে টি ২০ ক্রিকেটে এই প্রথম সিরিজ হার দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু মিলারের ৪৬ বলের সেঞ্চুরি মনে রাখবে গুয়াহাটি। আইপিএলের সুবাদে কিলার মিলারকে সবাই চেনে। কিন্তু ভারতের ২৩৭-কে যেভাবে তাড়া করে অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে আনার কাজ যেভাবে প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন, তাতে অস্ট্রেলিয়ায় টি ২০ বিশ্বকাপের আগে সব দলের কাছে ‘মিলার হইতে সাবধান’ বার্তা কিন্তু চলে গেল!
শেষপর্যন্ত ৪৭ বলে ১০৬ নট আউট (India vs South Africa) থাকলেন মিলার। ডি’কক নট আউট ৬৯ রানে। ২ রানে ২ উইকেট। তারপর ৪৭ রানে তৃতীয় উইকেট চলে যাওয়ার পর এই দু’জন মিলে অসমাপ্ত চতুর্থ উইকেটে তুলেছেন ১৭৪ রান। কিন্তু শেষ ওভারে অক্ষর তাঁদের থামিয়ে দিলেন। তাও গোটা দুয়েক ছক্কা এল। গুয়াহাটি ছুটির দিনে দেখল একটা বিশাল হাই স্কোরিং ম্যাচে। দুই ইনিংস মিলে এদিন উঠেছে ৪৫৮ রান।
আরও পড়ুন-ধর্ম যার যার, উৎসব সবার স্লোগানের জীবন্ত উদাহরণ এই তিলোত্তমার বুকে…
দশ ওভারে ৯৬/১, ভালই শুরু করেছিল ভারত। রোহিত-রাহুল উইকেটের দু’পাশে প্রচুর শট খেললেন। সেটা ৬৫ মিটার বাউন্ডারির জন্য। বোঝা গেল হোমওয়ার্ক করে ম্যাচে নেমেছে ভারত। আর এরই ফল মিলল ২০ ওভারে ২৩৭/৩ উঠে যাওয়ায়। টি ২০ ক্রিকেটে এটা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান। রোহিত টসের সময় বলে গেলেন, তাঁরা ভারতে টি ২০ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারেননি জানেন। তাই জিতলেই সিরিজ, হিটম্যানের এটা মাথায় ছিল।
রোহিত অবশ্য ৩৭ বলে ৪৩ রান করে বেরিয়ে গেলেন। কেশবকে স্কোয়ার লেগে ওড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন স্টাবসের হাতে। কিন্তু ততক্ষণে শক্ত জমির উপর দাড়িয়ে গিয়েছে ভারতের ইনিংস। একটু বাদেই ছক্কা মেরে ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেললেন রাহুল। ৫৭ করে মহারাজের বলেই ফিরে গেলেন তিনি। তারপর যেটা হল, সেটা পরিচিত দৃশ্য। ১৮ বলে পঞ্চাশ করে ফেললেন সূর্য কুমার যাদব। এতক্ষন যিনি স্ট্রাইক এগিয়ে দিচ্ছিলেন, সেই বিরাট এরপর নিজের খেলায় ফিরলেন। সূর্য অবশ্য ২২ বলে ৬২ রান করে রান আউট হয়ে গেলেন। পার্টনারশিপে উঠল ১০২ রান। বিরাট নট আউট থেকে গেলেন ৪৯ রানে। কার্তিক ৭ বলে ১৭ নট আউট থেকে আরও একবার ফিনিশারের ভূমিকা পালন করে গেলেন।
পিচ রিপোর্ট করতে এসে অজিত আগারকর বলে দিয়েছিলেন টস একটা বড় ভূমিকা নিতে চলেছে। রোহিত শর্মা টসে হেরে আগে ব্যাটিং পেলেন। তবে জিতলে তিনিও যে আগে তেম্বা বাভুমাকে ব্যাট করতে দিতেন, সেটা বলে গেলেন। কিন্তু আগে ব্যাট করেও সমস্যায় পড়েননি তাঁরা। পড়লেন পরে বল করে।
এখনকার পিচ উপরে শুকনো হলেও নিচে ভেজাভাব ছিল। ফলে রাবাডা, এনগিডিদের জন্য কিছু একটা ছিলই। তাই স্পিনার কমিয়ে এই পিচে এনগিডিকে বাড়তি সিমার হিসাবে খেলালো দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এতে কাজ হয়নি। এখানে বড় সমস্যা রাতের শিশির। যা অক্টোবর মাসে পড়বেই। এর সঙ্গে জোড়া যেতে পারে এই মাঠের স্কোয়ার বাউন্ডারি। উইকেটের দু’পাশে বড়জোর ৬৫ মিটার। এমন ছোট বাউন্ডারি দেখলে স্পিনার কমিয়ে সিমার বাড়াতে চাইবে সবাই। রোহিত আর রাহুল উইকেটের দু’পাশে বেশি করে শট খেলে গেলেন। পরে সেটাই করেছেন বিরাট আর থ্রি সিক্সটি ব্যাটার সূর্য। কিন্তু সেসবও ঢাকা পড়ে গিয়েছে বিধ্বংসী মিলারের ব্যাটে। শুধু জয় নিয়ে ফিরতে পারেননি, এই যা।