প্রতিবেদন : চার রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলকে কংগ্রেসের ব্যর্থতা বলেই ব্যাখ্যা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (INDIA- Mamata Banerjee)। তাঁর কথায়, এটা কংগ্রেসের পরাজয়, মানুষের নয়। সোমবার বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক আগেই আসন রফার কথা বলেছিলাম। সেটা করলে এই ফলাফল হত না। এটা ভোট কাটাকাটির ফল। অন্য রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে যে তিনি কোনও ভাবেই ভাবিত নন তাও স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বেল পাকলে কাকের কী! এই ফলাফল ভোট-কাটাকাটির ফল। কংগ্রেসের একলা চলো নীতির কারণেই এই অবস্থা বলে মনে করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ভুল শুধরে নিয়ে আগামী দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে এগোতে হবে। ৪ রাজ্যের ভোটের ফল নিয়ে এদিন বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একটা ভোট জিতেই বাবুদের কী অবস্থা! কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, একটা হারিয়ে একটা পেয়েছে। আমরা বারবার বলেছিলাম, আসন রফা সেরে ফেলতে। তাহলে এই অবস্থা হত না। সেই জন্যে ৭০ আসনে হেরেছে। জিতেছে ভোট কেটে। এটা ভোট কাটার জয়। আঞ্চলিক দলগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে মমতা বলেন, আর কিছু ছোট ছোট দল, বিজেপির পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট কেটেছে। কৌশলের সঙ্গে আদর্শ মেশাতে হবে। শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে হয় না। কেন্দ্রীয় এজেন্সি ওদের হয়ে কাজ করেছে। আমি এখনও মনে করি আসন রফা হলে বিজেপি ২০২৪ সালে ক্ষমতায় আসবে না।
আরও পড়ুন- জনস্বার্থেই গঠনমূলক আলোচনায় জোর তৃণমূলের
একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (INDIA- Mamata Banerjee) স্পষ্ট করে দেন যে, অন্য রাজ্যের ভোট আর বাংলার ভোট এক নয়। কংগ্রেসের পরাজয়। মানুষ কিন্তু রায় দিয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। ভুলের সমালোচনা করলে শুধু হয় না। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয়। বিজেপি বলছে বাংলা থেকে ২৫ আসন পাবে। আগে ৫ আসন পেয়ে দেখাও। বড় বড় কথা। আমি নাকি চোর। আমি মানুষের ভোর। আমি মানুষের কাছে সকাল হয়ে থাকব।
এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও কার্শিয়াং রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে এবং উত্তরে পৌঁছে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের সামনে৷ তাঁর কথায়, কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। যে যেখানে শক্তিশালী, তাকে সেখানেই লড়তে দেওয়া হোক। সেটা করলে এই বিপর্যয় হত না। অন্যদের পাশে সরিয়ে রেখে চলার মানসিকতা, ৬ মাস-১ বছর আগে সংশোধন করে নিলে কংগ্রেসের এই হাল হত না। তৃণমূলের উদাহরণ টেনে অভিষেক বলেন ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ২০১৯-এ ভাল ফল হয়নি। ভুলত্রুটি শুধরে একুশে পদক্ষেপ নেওয়াতেই জয় এসেছে। এবার লোকসভার আগে হাতে সময় কম। তাই দ্রুত একজোট হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে। স্বার্থ উপেক্ষা করে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। বাংলার বঞ্চনা আদায়ের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাবে তৃণমূল। কথা দিয়ে কথা রেখেছেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে নয় বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো তাঁর কর্তব্য। ৫ রাজ্যের নির্বাচনের কোনও প্রভাব বাংলায় পড়বে না বলেই জানান অভিষেক। বিজেপিকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, ওদের ডাবল ইঞ্জিন মানে তো ইডি আর সিবিআই। যদি ইডি এবং সিবিআই-এর উপর নির্ভর করে লড়াই করতে চায়, তবে তারা বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ধর্মীয় মেরুকরণ করেও রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না।
অভিষেক মনে করেন, সমস্ত রাজনৈতিক ইগো সরিয়ে রেখে এক হয়ে স্বৈরাচারী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে৷ তাঁর কথায়, হাতে বেশি সময় নেই আমাদের৷ ব্যক্তিস্বার্থ সরিয়ে রেখে মানুষের স্বার্থে আমাদের মাঠে নামতে হবে৷ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা বলার আমি কেউ নই, মানুষ শেষ কথা বলবেন৷ কেউ যদি মনে করে, ইডি-সিবিআইয়ের উপর নির্ভর করে রাজনীতি করবে তাহলে তার ভরাডুবি নিশ্চিত৷ বিজেপি যখন ২০১৮-য় হেরেছিল তখন বলেছিল, বাংলায় এর প্রভাব পড়বে না৷ আমিও বলছি, এই ফলাফল বাংলায় কোনও প্রভাব ফেলবে না৷ বিজেপির কোনও কাজেই লাগবে না৷