দুবাই, ২ মার্চ : যতক্ষণ কেন উইলিয়ামসন উইকেটে ছিলেন, ভারতের জয়-পরাজয়ের মাঝখানে ছিল রবিবাসরীয় ম্যাচ। তিনি কী পারেন, সেটা ক্রিকেট দুনিয়া জানে। আর যেভাবে একটা দিক আগলে পড়ে ছিলেন, তাতে বার্তাও স্পষ্ট ছিল যে, সহজে লড়াই থেকে সরছি না।
তবে অক্ষর প্যাটেল ফ্লাইটের জাদুতে উইলিয়ামসনকে ঠকিয়ে দিতেই ম্যাচের দরজা খুলে গেল। নাকি আরও আগেই খুলে গিয়েছিল বরুণ চক্রবর্তীর ম্যাজিকে। ৪২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক তিনিই। দুই মিস্ট্রি স্পিনার নিয়ে ভারত খেলবে কি না, তা নিয়ে টানাপোড়েন ছিল। কিন্তু কথায় বলে ভাগ্য সাহসীদেরই সঙ্গ দেয়। গম্ভীর কুলদীপের সঙ্গে বরুণকেও দলে রেখে ঝুঁকি নিয়েছিলেন। আর বরুণ ভারতকে ৪৪ রানে জিতিয়ে তাঁকে গুরুদক্ষিণা দিলেন।
আরও পড়ুন-বিরাট ৩০০, বার্তা সতীর্থদের, আউট হতেই মাথায় হাত দিলেন অনুষ্কা
ভারতের মতো নিউজিল্যান্ডও খুব তাড়াতাড়ি প্রথম উইকেট হারায়। ৪ ওভারে রাচিন রবীন্দ্রকে (৬) হারিয়ে তাদের রান দাঁড়িয়েছিল ১৭। হর্ষিতকে বাইরে রেখে এই ম্যাচে নেমেছিলেন রোহিতরা। এর ফলে হার্দিককে নতুন বল শেয়ার করতে হয়েছে শামির সঙ্গে। প্রথম উইকেট হার্দিকেরই। রাচিন তাঁর বলে সহজ ক্যাচ দেন অক্ষরকে।
ওভার পিছু ৬ রানের টার্গেট নিয়ে নেমে নিউজিল্যান্ড ৯৩ রানের মধ্যে উইল ইয়ং (২২) ও ডারিল মিচেলকে (১৭) হারিয়ে বসেছিল। কুলদীপ ফেরান মিচেলকে। তবে আসল নাটক শুরু হয় বরুণ বল করতে আসার পর। তাঁকে নিউজিল্যান্ড ব্যাটাররা ধরতেই পারেননি। তিনি বল করতে এসে পরপর ফিরিয়ে দেন ইয়ং, গ্লেন ফিলিপস (১২) ও মাইকেল ব্রেসওয়েলকে (২)। এর মাঝে লাথামকে (১৪) ফিরিয়েছেন জাদেজা। একটা সময় ১৫৯ রানে আধ ডজন উইকেট হারিয়ে বসেছিল নিউজিল্যান্ড।
এই ম্যাচে চার স্পিনার নিয়ে নেমেছিল ভারত। দুবাইয়ের উইকেট রাত যত বাড়ে তত স্লো হয়। এই স্লো উইকেটের সুবিধা নিয়ে গেলেন বরুণ। তাঁর বেশিরভাগ বল হয় উল্টো হয়েছে কিংবা সোজা। নিউজিল্যান্ড ব্যাটাররা একসময় কিছু না বুঝে কার্যত আন্দাজে খেলেছেন। রবিবারের ম্যাচে ঋষভও খেলবেন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট একটিই পরিবর্তন করেছে। দলে আসেন বরুণ। আর এসেই ভেলকি দেখিয়েছেন। টি-২০ ক্রিকেটে বরুণকে যেভাবে দাপট দেখাতে দেখা যায়, একদম সেভাবেই বল করেছেন। শুধু ভারতের সামনে কাঁটা ছিলেন কেন উইলিয়ামসন (৮১)। তিনি অক্ষরের বলে স্ট্যাম্পড হয়ে যাওয়ার পর জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। এই জয়ের ফলে গ্রুপ শীর্ষে থাকল ভারত। মঙ্গলবার দুবাইয়ে প্রথম সেমিফাইনালে রোহিতরা খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
১০ ওভারের মধ্যে ৩০ রানে ৩ উইকেট চলে যাওয়ার পর ভারতীয় ব্যাটিংকে কিছুটা স্বস্তি দেন শ্রেয়স আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। দু’জনে মিলে ৯৮ রান জুড়ে বোর্ডে একটা ভদ্রস্থ স্কোর তুলে দেন। জেমিসেন ও হেনরি বেশ চেপে ফেলে দিয়েছিলেন ভারতকে। জেমিসন অনেক লম্বা। তাঁর বল পিচ খেয়ে উপরে উঠে আসবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা না হয়ে বল একটু নিচে থাকল। এই ধাঁধায় আটকে যান ব্যাটাররা। হেনরির বল বরং অনেকটা উঠে এসেছে। শেষমেশ তিনি ৪২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন।
রোহিত (১৫) জেমিসেনের বল উঠে আসবে বলে পুল করেছিলেন। কিন্তু বল ততটা ওঠেনি। ফলে বল দেরিতে এল। ব্যাট আগে চলে গেল। তাতে টাইমিং জমেনি। উইল ইয়ং মাথার উপর থেকে দু’হাতে ক্যাচটি নেন। তার আগে শুভমন (২) হেনরির বলে লাইন মিস করেছেন। অফ স্ট্যাম্পের উপর উঠে স্কোয়ার লেগে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবি হয়ে যান। রোহিতের মতো বিরাটও স্টেপ আউট করে খেলছিলেন। হেনরিকে এভাবেই খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন ১১ রানে। খেলার বয়স ৬.৪ ওভার।
আরও পড়ুন-চোটের আগাম খবর দিক এআই
এক সময় আগ্রাসী ব্যাটিং করতেন শ্রেয়স। এখন তাঁকে বলা হচ্ছে মিস্টার ক্রাইসিস। দল যখনই চাপে পড়ছে, তখনই তিনি নির্ভরতা দিচ্ছেন। এদিন যেমন তাঁর আর অক্ষরের জুটিতে রান না উঠলে চাপ বাড়ত। শ্রেয়স ৯৮ বলে ৭৯ রান করে গেলেন। চারটি ৪ ও দুটি ছক্কা। অক্ষর পাঁচে এসেছিলেন ডান-বা কম্বিনেশনের জন্য। তাঁর ৪২ রান ৬১ বল খেলে। তিনটি ৪, একটি ছয়। অক্ষর আউট হয়ে পর শ্রেয়স ও হার্দিক মিলে ৪৪ রান তুলে ফেলেছিলেন। অতঃপর রাহুল (২৩) ফিরে যান স্যান্টনারের বলে। ভারত তখন ১৮২/৬।
নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক স্যান্টনার টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে দিয়েছিলেন। দল নিয়ে প্রচুর জল্পনা থাকলেও শেষপর্যন্ত শুধু বরুণ এলেন হর্ষিত রানার জায়গায়। যার অর্থ, রবিবারের ম্যাচে চার স্পিনার নিয়ে নেমেছিল ভারত। টপ অর্ডার খুব তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়ার পর ভারত যে ২৪৯/৯ পর্যন্ত যাবে, সেটা মনে হয়নি।। কিন্তু গেল হার্দিকের (৪৫) জন্য। ৪৫ বল খেলেছেন। কিন্তু তখন হার্দিক দাঁড়িয়ে না গেলে ভারতের ইনিংস ৫০ ওভার পর্যন্ত যেত না। জাদেজা করেন ১৬ রান।