নয়াদিল্লি : কেন্দ্রের মোদি সরকার কেবল তাদেরই সঠিক বলে মনে করে যারা সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যারা সমালোচক তারাই ভুল, এমনই ভাবে এই সরকার। সব কাজে তোষামোদ পছন্দ এই সরকারের। কেন্দ্রের সমালোচনায় এমনই কড়া মন্তব্য করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ও খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন (Ex RBI Guv Raghuram Rajan)।
এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজন বলেন, ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতির তুলনায় শক্তিশালী। তবে কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাবে আগামী ১০ বছরে সমস্যা বাড়তে পারে। যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে তাতে সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের উন্নয়নে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।
আরও পড়ুন: ‘সেরা’ জালিয়াত মেহুল
দেশের প্রাক্তন গভর্নর (EX RBI Guv Raghuram Rajan) আরও বলেন, কোভিডের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের মতো গরিব দেশে জীবনযাত্রার মান্নোয়ন ও দেশের উন্নতির জন্য কর্মসংস্থানের প্রয়োজন বেড়েছে। কিন্তু যে তুলনায় চাকরির চাহিদা বেড়েছে সেই তুলনায় কর্মসংস্থান আদৌ বাড়েনি। কর্মসংস্থানের জন্য মানুষের দক্ষতা যেমন বাড়াতে হবে তেমন শিক্ষাখাতে গতি আনতে হবে। আগামী ১০ বছরে যারা স্নাতক হবে, তাদের দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা দিতে হবে। তবেই কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। রাজন মনে করেন, গণতন্ত্রে আলাপ-আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে নরেন্দ্র মোদি সরকার কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মধ্যে নোটবাতিল, তিন কৃষি আইন উল্লেখয়োগ্য। একতরফাভাবে নেওয়া মোদি সরকারের ওই সব সিদ্ধান্তের ফলে জনরোষ ও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রাজনের মতে, গণতন্ত্র সফল করতে হলে সবার আগে সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সকলের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট জানান, ১০ বছর আগেও ভারতে যে উদার গণতন্ত্র ছিল, এখন তা নেই। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি উল্লেখ করে রাজন বলেন, ভারতের উচিত দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও একতার দিকে নজর দেওয়া। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অখণ্ডতার জন্য সেটা অত্যন্ত জরুরি।
সাম্প্রদায়িক অশান্তি কীভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংকটের কারণ হতে পারে সেবিষয়ে বার্তা দিয়ে রাজন বলেন, মানুষের উদ্বেগ বাড়তে থাকে। প্রথমে তারা পরিণাম নিয়ে ভাবে। তারপর তাদের মাথায় এই প্রশ্নই আসে যে, আমার কি এমন দেশে ব্যবসা করা উচিত, যেখানে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে অন্যায় হয়? যার জেরে একসময় সফল অর্থনীতির দেশ থেকে আজ গুরুতর সংকটে পৌঁছেছে ভারতের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র। শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি এক্ষেত্রে চিনের প্রসঙ্গও তুলে আনেন রাজন। বলেন, উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চিনের নির্যাতনের ফলে আমেরিকা ও ইউরোপের চাপ ব্যাপক বেড়েছে সেদেশে। ফলে বহু ব্যবসায়ীর মনে সৃষ্টি হয়েছে দ্বন্দ্ব। বিশেষ করে উইঘুর অধ্যুষিত এলাকায় এই সমস্যা আরও গুরুতর। সংখ্যালঘু বিদ্বেষের কারণে সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে চিনে। ভারতের এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি।