প্রতিবেদন: এবছরের ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যায় প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ চলাকালীন পদদলিত হয়ে ‘‘কমপক্ষে ৮২ জনের মৃত্যু’’ হয়েছে বলে বিবিসি হিন্দির একটি তদন্তে উঠে এসেছে। বিস্ফোরক এই তথ্য যোগীরাজ্যে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড় যোগ করল। প্রাথমিকভাবে তথ্যের গোপনীয়তার নাম করে টানা একদিনেরও বেশি সময় ধরে কোনও বিবৃতি না দেওয়ার পর উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছিল মহাকুম্ভে পদদলিত হয়ে ৩০ জন মারা গেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে এই সংখ্যাটি পরে আর কখনও আপডেট করা হয়নি এবং রাজ্য সরকার এখনও কুম্ভে মৃতদের মোট সংখ্যাও প্রকাশ করেনি, যদিও মৃতদের পরিবারের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন-দারিদ্র দূরীকরণে গোটা দেশকে পথ দেখাচ্ছে বাংলার সরকার
সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্ট কুম্ভে মৃতদের সঠিক মোট সংখ্যা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে যে তারা আরও ২৬টি পরিবারের সাথে দেখা করেছে যাঁরা নগদ ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে নিহতদের নাম মৃতদের তালিকায় যুক্ত করা হয়নি। এই তদন্ত উত্তরপ্রদেশের ৫০টি জেলা জুড়ে এবং ১০০টি পরিবারের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, এবং তারপর ‘‘কমপক্ষে ৮২ জনের মৃত্যু’’ হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং যোগী আদিত্যনাথ সরকার দাবি করেছে যে ‘‘৬৬ কোটি মানুষ ৪৫ দিনের কুম্ভে অংশ নিয়েছিল এবং এটি একটি বিশাল সাফল্য ছিল।’’ এই ইভেন্টে ৭০০০ কোটি টাকা জনসাধারণের অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল বলে খবরে প্রকাশ। ১৯ ফেব্রুয়ারি, মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ রাজ্য বিধানসভায় পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে একটি বিবৃতি দেন, যেখানে তিনি ৩০ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেন এবং ২৯টি মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছিল বলে জানান। বিবিসি তাদের তদন্তে দেখেছে মহাকুম্ভে চারটি স্থানে মৃত্যু হয়েছে। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বিবিসির প্রতিবেদন ক্ষতিগ্রস্তদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। প্রথম শ্রেণিতে যাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে যাঁরা নগদ ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছেন এবং তৃতীয় শ্রেণিতে সেইসব ক্ষতিগ্রস্তরা রয়েছেন যাঁরা কিছুই পাননি। এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনায় সরকারের নগদ ক্ষতিপূরণ বিতরণের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ টাকা হস্তান্তরে জড়িত ছিল। কমপক্ষে ১৯টি পরিবার পদদলনে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পায়নি। বিবিসির তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনাস্থলের ছবি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের সাথে কথোপকথনের অসংখ্য বিবরণ রয়েছে। প্রতিবেদনের স্পষ্ট উপসংহার, মহাকুম্ভের পদদলনে নিহতের সংখ্যা ৮২। দৃঢ় প্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত বলে তাদের দাবি।