ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে মনীষীদের পথিকৃৎ হিসাবে দেখা হয়, তার প্রথম সারিতে নাম থাকে বাংলার রাজা রামমোহন রায়ের। এবার সেই রামমোহন রায়ের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য ডবল ইঞ্জিন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীর। বাংলা তথা বাংলার মনীষীদের অপমান করতে যে বিজেপির নেতারা এক মুহূর্তও ভাবেন না, তা আগেই স্পষ্ট হয়েছে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন রাজা রামমোহন রায়। সেই বিজেপির মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এখনও কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিজেপিকে তোপ বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকেও নাম বাংলার মনীষীদের নাম উচ্চারণের আগে লজ্জা পাওয়ার দাবি তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের। বাংলা জুড়ে কঠোর সমালোচনার পরে নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী ইন্দর সিং পার্মার।
আরও পড়ুন-৩৩ বছর পর পরমাণু বোমার ‘টেস্ট’ আমেরিকার
মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ইন্দর সিং পার্মার বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকীতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে দাবি করেন, বাংলা থেকে এগিয়ে গেলে অনেক সাঁওতাল পরগণা দেখা যেত। আজ দেখা যায় না। বিহারে সরে গেছে সব। ওখানে ইংরাজী শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে দেশের মানুষের বিশ্বাসকে বদলে ফেলার প্রক্রিয়া চলছিল। যার মধ্যে এই দেশের বহু মানুষকে ভারতীয় সমাজকে বদলানোর কাজে লাগিয়ে ছিল ব্রিটিশরা। তার মধ্যে একজন ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি ইংরেজদের দালাল হিসাবে ভারতে কাজ করছিলেন।
আরও পড়ুন-মারাত্মক! AI দিয়ে দিল্লি AIIMS-এর এক্সরে রিপোর্ট
আর তাতেই একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ শুরু বাংলার রাজনীতিকদের। তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজেপির ভূমিকা তুলে ধরে দাবি করেন, মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে রাজা রামমোহন রায়, বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ, সমাজ সংস্কারক – তাঁকে যেভাবে ব্রিটিশের দালাল বলেছেন, আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই, বাংলার নবজাগরণ, ভারতবর্ষের জেগে ওঠা – এগুলোর সঙ্গে বিজেপি ঘরানার লোকেদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তাই তারা এধরনের কথাবার্তা বলতে পারেন।
আদতে বিজেপি কোন মানসিকতা বহন করে তা বিজেপির মন্ত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট। তা তুলে ধরে কুণাল ঘোষ দাবি করেন, রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা রোধ করেছিলেন। তাহলে কী বিজেপি সতীদাহ প্রথা সমর্থন করে? যদি কারো স্বামী মারা যায়, তাহলে তাঁকে জীবন্ত চিতায় তোলা হবে, বিজেপি তার সমর্থক। নাহলে তারা রাজা রামমোহন রায়কে আক্রমণ করে না। বিজেপি মধ্যযুগীয় সমস্ত খারাপ জিনিসগুলির প্রতীক। নাহলে তাঁরা আক্রমণ করতেন না। রামমোহন রায়ের যে দৃষ্টিভঙ্গি, প্রগতিশীলতার জন্য তা কাজে লাগিয়েছেন। ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গার কোথাও প্রগতি, কোথাও মানবতার জন্য অত্যাচার। যেখানকার যেটা ভালো, প্রগতিশীলতার জন্য সেটা কাজে লাগিয়েছেন। যেটা বর্জন করার সেটা বর্জন করেছেন। নতুন ভারতবর্ষের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়। সেই রামমোহন রায়কে অপমান করেছেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিজেপির উচিত ক্ষমা চাওয়া।
আরও পড়ুন-গাড়িচালকদের নিখরচায় চক্ষুপরীক্ষা পুলিশের
সেই সঙ্গে এরপরেও যেন বিজেপির নেতারা বাংলার মনীষীদের নিয়ে কোনও নাটক করতে না আসেন, তা নিয়ে সতর্ক করেন কুণাল। তাঁর স্পষ্ট কথা, ওরা কখনও রামমোহন রায়কে আপত্তিকরভাবে অপমান করছে। কখনও ইংরেজের দালাল বলছেন। কখনও বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছেন। কখনও রবীন্দ্রনাথকে অপমান করছেন। তাঁর লেখা উত্তরপ্রদেশের পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিচ্ছেন। বিজেপির উচিত ক্ষমা চাওয়া। এরপর যদি নরেন্দ্র মোদি নাটক করে টেলিপ্রম্পটারে বাংলার মনীষীদের নাম উচ্চারণ করতে আসেন, ওনার লজ্জা হওয়া উচিত।
বিজেপির এই বাংলা বিরোধী রূপকে তুলে ধরে স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ বাংলার তৃণমূল নেতৃত্বের। সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির দৈন্যের দিকটি তুলে ধরে স্পষ্ট করেন, যে রাজা রামমোহন রায় সতীদাহের মতো জঘন্য প্রথা বন্ধ করেছিলেন, আজ তাঁকে বলা হচ্ছে ব্রিটিশ এজেন্ট, ভণ্ড সংস্কারক। হাস্যকরভাবে সেই উক্তি আসছে মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর থেকে। বাংলার মন্ত্রী শশী পাঁজা বিজেপির বাংলা বিরোধিতার পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেন, বিজেপি এক নাগাড়ে এবং এক ভাবে বাংলার আইকনদের অপমান করছে, যাঁরা বাংলার তথা ও ভারতের গর্ব। বাংলার মানুষ সব দেখছে। বাংলার গণতান্ত্রিক উপায়ে এর উত্তর দেবে।

