পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের আগের সভাধিপতি দেবব্রত দাসের অকালপ্রয়াণের পর, প্রথমবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের ভূমিপুত্র উত্তম বারিক (Uttam Barik)। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময় মেদিনীপুর সফরে এসে নিজের মুখেই তাঁর নাম ঘোষণা করেছিলেন। বর্তমানে তিনি পটাশপুর বিধানসভার বিধায়কও বটে। সুদক্ষভাবে জেলা পরিষদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারই পুরস্কার হিসেবে দ্বিতীয়বার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
রক্ষী লাগে না, মানুষই আমার শক্তি
গড়ে উঠেছে মানুষের পঞ্চায়েত। তাঁদের আশীর্বাদ নিয়ে ২০টি জেলা পরিষদেই তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। উঠে এসেছেন একঝাঁক নতুন মুখ। যার মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর নারীদের সামনের সারিতে রেখেছেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজ তাঁদের অনেকেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি। আছে অনেক পুরনো মুখও। আমরা কথা বলেছি তাঁদের সঙ্গে। বাংলার মানুষের জন্য জেলা পরিষদ কীভাবে উন্নয়নের কাজ করবে, সেই ভাবনা সদ্য দায়িত্ব নেওয়া সভাধিপতিরা ভাগ করে নিয়েছেন জাগোবাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে। আজ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা…
একাধারে পটাশপুরের বিধায়ক আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাধিপতি। সারাদিন ঠাসা কর্মসূচি ও চূড়ান্ত ব্যস্ততা। কীভাবে সব ম্যানেজ করেন?
উঃ দল আমাকে অনেক গুরুদায়িত্ব দিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরকে উন্নয়নের নিরিখে এক নম্বর করা, আমার ধ্যানজ্ঞান। দল ভরসা করেছে, ভাবলেই ক্লান্তি আসে না।
বিপদ বা কঠিন সময়েও মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন। মুখে সব সময় হাসি লেগে রয়েছে। ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং
ধোনির সঙ্গে তুলনা করা হয়। কেমন লাগে?
উঃ ক্রোধ বুদ্ধি বিনাশ করে। বাবা শিক্ষক ছিলেন। ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সামলাতেন। তাঁকে দেখেই শিখেছি।
এত বড় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কত সমস্যা, সামলান কী করে?
উঃ আগে দেশপ্রাণ ব্লক থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছিলাম। তারপর পটাশপুরের বিধায়ক। এবার খেজুরি থেকে জেলা পরিষদে জিতলাম। ১৯৯৩ থেকে জেলার রাজনৈতিক ময়দানে। গোটা জেলা হাতের তালুর মতো চেনা। তাই সমস্যা সমাধান করতে অনেকটা সুবিধা হয়।
জেলার উন্নয়নে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
উঃ নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নয়। সারা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ,পর্যটন, মৎস্যচাষ ইতাদি বিষয়ে সার্বিকভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রূপরেখা তৈরি করছি। এখনও বহু গ্রামীণ রাস্তার কাজ বাকি। ভাল রাস্তা অতি প্রয়োজনীয় পরিষেবা। নতুন জেলা পরিষদ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই বিষয়ে নজর দেবে।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের গ্রাম গোট সাউড়িতে যাত্রাপালায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করলেন। দর্শকেরা প্রচুর
প্রশংসা করেছেন? এত ব্যস্ততার মধ্যেও অভিনয়?
উঃ ছোট থেকেই নাটক ও যাত্রাপালায় অভিনয় করার শখ। আগে বেশ কয়েকটি অ্যামেচার যাত্রাপালায় অভিনয় করেছি। তারপর রাজনীতির চাপে স্টেজে ওঠা হয়নি। যাত্রাশিল্পটা হারিয়ে যাচ্ছে। এই যাত্রায় সামাজিক বার্তা রয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে ফের অভিনয়ে রাজি হয়েছি।
তমলুকের স্টিমারঘাট থেকে শুরু করে বহু ক্ষেত্রেই ফেরিঘাটে জেটি নেই। এই সমস্যা দ্রুত মেটাতে কী করবেন?
উঃ ২০১১ থেকে ময়না এবং পাঁশকুড়ার মধ্যে সংযোগকারী প্রজাবাড় ব্রিজের কাজ প্রায় শেষ। তবে দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ রোড সম্পন্ন হয়নি। দ্রুত করে ফেলা হবে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতিবাদ সভা
কৃষিপ্রধান জেলায় এখনও কোনও কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। উদ্যোগী হবেন?
উঃ পটাশপুরের কিসান মাণ্ডি সংলগ্ন সরকারি জমিতে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
জনপ্রিয় নেতারা দেহরক্ষী বা বাউন্সার পরিবেষ্টিত হয়ে থাকেন। আপনি রাখেন না কেন?
উঃ আমি মনে করি মানুষই আমার শক্তি। মানুষ মনে করেন আমি (Uttam Barik) তাঁদেরই লোক। তাই আমাকে এত ভালবাসেন।
জেলার সার্বিক উন্নয়নে কী কী করছেন?
উঃ কেলেঘাইয়ের পাড়ে বেআইনিভাবে ইটভাটা, মাছের ভেড়ির ব্যবসা ভাঙনের কারণ বটে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার লাগুলকাটায় জল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বন্যার প্রধান কারণ হয়ে উঠছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। রূপনারায়ণে দীর্ঘদিন ড্রেজিং হয়নি। ফলে নদীর বুকে গজিয়ে উঠছে বহু চর। উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এই সমস্যা নতুন কিছু নয়। আমরা চাই দ্রুত সমাধান। কাঁথির অরবিন্দ স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে তমলুকের রাখাল ময়দান স্টেডিয়ামের পরিকাঠামগত ও জেলার অন্যান্য জায়গায় ইনডোর স্পোর্টসের ব্যবস্থা করে সার্বিকভাবে জেলার ক্রীড়া উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কোলাঘাটের পানশিলায় নতুন একটি ফুলের মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। দিঘা-শংকরপুর-মন্দারমণি-সহ বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানীয় জল বিক্রি কিংবা মাছচাষের ক্ষেত্রে যত্রতত্র সাব-মার্সিবল পাম্প বসানোতে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশই নামছে। এর সমাধান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দফতরকে নজরদারি চালানোর বিষয়ে আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও জল জীবন মিশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।