পায়ে পায়ে গভীর অরণ্যে

আমাদের দেশে আছে কয়েকটি জাতীয় উদ্যান। গভীর বনাঞ্চলে কোথাও দাপিয়ে বেড়ায় বাঘ, কোথাও সিংহ, কোথাও গন্ডার। আছে জঙ্গল সাফারির সুযোগ। ঘুরে আসতে পারেন। পেতে পারেন বন্যপ্রাণীর দেখা। দেশের কয়েকটি বিখ্যাত জাতীয় উদ্যানের সন্ধান দিলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

জিম করবেট জাতীয় উদ্যান, উত্তরাখণ্ড : উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট জাতীয় উদ্যান দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং এশিয়া মহাদেশেরও প্রথম অভয়ারণ্য। নৈনিতাল এবং পৌড়ি গাড়োয়ালে অবস্থিত। ১৯৩৬ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপন্ন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা। উদ্দেশ্য সফল বলাই যায়। প্রথমে শুরু হয়েছিল ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসেবে। পরে জাতীয় উদ্যানে পরিণত হয়। নামকরণ করা হয় বিখ্যাত শিকারি এবং প্রকৃতিপ্রেমী জিম করবেটের নামে। এখানে প্রায় ৫০০ প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী আছে। দেশের ইকোট্যুরিজমের অন্তর্গত। এই অরণ্যে পর্যটকদের জন্য যাবতীয় সুব্যবস্থা রয়েছে। তাই বছর বছর পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় ৫২০.৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। রয়েছে পাহাড়, নদী, জলাভূমি, তৃণভূমি এবং একটি বিশাল হ্রদ। সমুদ্রতল থেকে গড় উচ্চতা ১,৩০০ থেকে ৪,০০০ ফিট। শীতকালে এই জাতীয় উদ্যান ঘোরার আনন্দই আলাদা। রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা আর দিনের উজ্জ্বল রোদ গায়ে মেখে জঙ্গল ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতাই আলাদা। এখানে বিভিন্ন প্যাকেজের জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থা আছে। অন্যতম আকর্ষণ সাদা কুমির। এছাড়াও বাঘ, হাতি ইত্যাদির দেখা মেলে। ভ্রমণের সেরা সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে ভুয়ো মার্কশিট দেখিয়ে শিক্ষকের চাকরি

রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান, রাজস্থান : উত্তর ভারতের বৃহত্তম জাতীয় উদ্যানগুলির মধ্যে অন্যতম রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যান। দক্ষিণ-পূর্ব রাজস্থানে সওয়াই মাধোপুর জেলায় বিন্ধ্য এবং আরাবল্লি পাহাড়ে ঘেরা ১৩৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। একটা সময় জয়পুরের মহারাজাদের শিকারভূমি ছিল রণথম্ভোর। ১৯৮০ সালে এই অরণ্য জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঘ রয়েছে এই অরণ্যেই। তাই উদ্যানে ঘুরে বেড়ালে বাঘের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে সেটা মূলত শীতকালে। কারণ সেই সময় সূর্যের আলো গায়ে মাখার জন্য বাঘ বাইরে বেরোয়। অবাধে বিচরণ করে। দেখা যায় একেবারে সামনে থেকে। তবে তাদের বিরক্ত করলে বিপদ। বাঘ ছাড়াও আছে চিতা, নীলগাই, বুনো শূকর, সম্বর, চিতল হরিণ, লেজযুক্ত খরগোশ, বনবিড়াল, শ্লথ ভল্লুক, কুমির, ময়ূর ও পাখি। অরণ্যের ভিতরে রয়েছে কয়েকটি সুন্দর জলাশয়। বন্যপ্রাণীরা জল খেতে আসে। রয়েছে পাহাড়ি জৈন মন্দির, কালা গৌর মন্দির এবং অমরেশ্বর মহাদেবের মতো অনেক প্রাচীন মন্দির। এছাড়াও প্রাচীন বটগাছ, রণথম্ভোর দুর্গ, রাজবাগ যোগী মহল। ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফির জন্য এই উদ্যান আদর্শ জায়গা।

আরও পড়ুন-৪২ কোটি টাকায় নতুন বাইপাস উলুবেড়িয়ায়

তাডোবা জাতীয় উদ্যান, মহারাষ্ট্র : মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো জাতীয় উদ্যান তাডোবা। জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পশু এবং পাখি। রয়েছে বাঘও। এই অরণ্যকে বলা হয় দেশের বাঘের রাজধানী। দেশের বৃহত্তম ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে এটি অন্যতম। অরণ্যে পা রাখলেই শুনতে পাওয়া যায় গর্জন। জঙ্গলের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য মুগ্ধ করে সকলকে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। আমাদের দেশের অনেক জঙ্গলই বর্ষাকালে বন্ধ থাকে। তবে তাডোবার ক্ষেত্রে তা হয় না। বর্ষায় পায়ে হেঁটে জঙ্গলে ঘুরতে দারুণ লাগে। এই সময় জঙ্গলের পরিবেশ থাকে অতি মনোরম। ছড়িয়ে পড়ে ভেজা মাটির গন্ধ, গাছের গন্ধ। মন মাতাল করে দেয়। তুলনায় গ্রীষ্মে জঙ্গল সফর খানিকটা অস্বস্তিকর। তবে শীতের দিনে বেড়াতে দারুণ লাগে।

আরও পড়ুন-ভাতে মারতে চাইছে বিজেপি

কানহা জাতীয় উদ্যান, মধ্যপ্রদেশ : ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অরণ্য মধ্যপ্রদেশের কানহা জাতীয় উদ্যান। একে বলা হয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসা। এই অরণ্যে বেড়ালে বাংলার বাঘের দেখা মিলবেই। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে রয়েছে অন্তত হাজার প্রজাতির গাছ। বাঘ ছাড়াও নানা প্রজাতির হরিণ, শ্লথ ভাল্লুক, বুনো কুকুর, লেপার্ড, গৌড়, সম্বর, শেয়াল ইত্যাদি আছে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সারাদিন চলে কিচিরমিচির। ভেঙে দেয় জঙ্গলের নিস্তব্ধতা। এই জঙ্গলে ট্রেকিং, সাফারি ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে। অভয়ারণ্যের ভিতরে আছে সানসেট পয়েন্ট। নাম বামনি দাদর। সেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। সবুজ অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় সারাদিন ধরে। জব্বলপুর বিমানবন্দর বা রেলস্টেশন থেকে কানহার দূরত্ব প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার। হলিউড চিত্র পরিচালক রুডইয়ার্ড কিপলিং তাঁর ছবি জঙ্গলবুকের শ্যুটিং করেছিলেন এখানে। তারপর থেকে নতুন প্রজন্ম এই অরণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুন-সরকারি কর্মীদের আরও সুবিধা

গির জাতীয় উদ্যান, গুজরাত : গুজরাতের গির জাতীয় উদ্যান পৃথিবীর অন্যতম সেরা অভয়ারণ্য। সিংহের জন্য বিখ্যাত। স্থাপিত হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। মোট আয়তন প্রায় ১৪১২ বর্গ কিলোমিটার। বিখ্যাত এশিয়াটিক সিংহের দেখা মেলে একমাত্র এখানেই। এছাড়াও আছে চিতা বাঘ, হরিণ সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং পাখি। এই অরণ্যে বেড়ানোর আদর্শ সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ। সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।

কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান, অসম : অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের পলি গঠিত সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান। এখানে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ করা হয়। জঙ্গল সাফারির সময় দেখা মেলে তাদের। বিশ্বের মোট গন্ডারের দুই-তৃতীয়াংশ আছে কাজিরাঙা জাতীয় পার্কে। এছাড়াও আছে বাঘ, হাতি ইত্যাদি। উড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির পাখি। শীতকাল বেড়ানোর আদর্শ সময়। প্রতি বছর বহু মানুষ জঙ্গল সাফারি করেন।

আরও পড়ুন-বিপাকে গদ্দার, সারদা কর্তার চিঠিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ, কাঁথি পুরসভায় ৫০ লাখের ড্রাফ্ট

নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান, পশ্চিমবঙ্গ : নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলায় অবস্থিত। ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকারিভাবে ঘোষিত হয়। আয়তন ৮৮ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের এই বনাঞ্চল অনেকটাই দুর্গম। এখনও কিছু কিছু জায়গায় পৌঁছয় না দিনের আলো। আছে খয়ের, শিশু, শিরীষ প্রভৃতি গাছ। বন্যপ্রাণীর মধ্যে দেখা যায় বাঘ, চিতাবাঘ, বনবিড়াল, কালো ভল্লুক, কাঠবিড়ালি, লাল পান্ডা, দেশি বনরুই, সম্বর হরিণ, গোরাল, বন ছাগল ইত্যাদি। কপাল ভাল থাকলে দেখা পাওয়া যায়। উড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির পাখি। গভীর অরণ্যে পায়ে পায়ে বেড়াতে হয়। পদে পদে রোমাঞ্চ। দূর থেকে উঁকি দেয় তুষার ধবল পর্বত শৃঙ্গ। ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝরনা। চলার পথের কিছু জায়গা স্যাঁতসেঁতে, পিচ্ছিল। পাহাড়ি পথ ট্রেকিংয়ের পক্ষে আদর্শ জায়গা। সবুজের সমারোহে একটি দিন কাটালে মন ভাল হয়ে যাবে।

Latest article