প্রতিবেদন : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ততদূরই ভাল যতক্ষণ তা মানুষের জন্য কল্যাণকর। তা মাত্রা ছাড়ালে মানবসভ্যতার পক্ষে বিপজ্জনক। আর সেই ঝুঁকি বিচার করেই মানবসভ্যতাকে রক্ষার স্বার্থে ওপেনএআই সংস্থার সিইও স্যাম অল্টম্যানকে (Sam Altman) ছাঁটাই করেছিল সংস্থার পরিচালন পর্ষদ! সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাম অল্টম্যানকে ছাঁটাইয়ের আগে এক শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আবিষ্কারের বিষয়ে সতর্ক করে বোর্ড সদস্যদের চিঠি দিয়েছিলেন সংস্থার বেশ কয়েকজন গবেষক। তাঁদের মত ছিল, এই নতুন ও শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরো মানবসভ্যতাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে। সেই ঝুঁকি বিবেচনা করেই এরপর সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় অল্টম্যানকে। যদিও এরপর সংস্থার কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে চারদিনের মাথায় ফের তাঁকেই সিইও-র পদে ফিরিয়ে আনে ওপেনএআই।
ওপেনএআই-এর দুটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, আগেই বোর্ডের কাছে অল্টম্যানের (Sam Altman) বিরুদ্ধে অভিযোগের একটি দীর্ঘ তালিকা জমা পড়েছিল। তবে, একটি চিঠিই সম্ভবত অল্টম্যানকে বরখাস্ত করার বিষয়ে প্ররোচিত করেছিল বোর্ড সদস্যদের। বলা হয়, নয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি ব্যবহারের কী পরিণতি হতে পারে, তা বোঝার আগেই এর বাণিজ্যিকীকরণ করতে চেয়েছিলেন অল্টম্যান। এই বিষয়ে উদ্বেগ থেকেই বোর্ড তাঁকে বরখাস্ত করেছিল। সূত্রের খবর, কিউ স্টার নামে একটি নয়া প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ওপেনএআই। এটি একটি ‘আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স’। এই স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা, অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান বেশিরভাগ কাজগুলিতে মানুষকে পিছনে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। জানা যাচ্ছে, চ্যাটজিপিটির মতো সাধারণ এআই মডেলগুলি মূলত লেখালিখি, ভাষান্তর করা, সাধারণ জ্ঞানের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কাজগুলি ভালভাবে করতে পারলেও, অঙ্ক কষার ক্ষেত্রে তাদের উপর ভরসা করা যায় না। সাধারণ এআই মডেলগুলির আসলে যে কোনও সমস্যার একাধিক জবাব থাকে। অঙ্কের ক্ষেত্রে তা হলে চলবে না। কোনও গাণিতিক সমস্যার একটিই মাত্র উত্তর হয়। তাই গবেষকরা অঙ্ক কষাকেই জেনারেটিভ এআই বিকাশের শেষ সীমা বলে মনে করেন। কিন্তু এই সীমাও পার করে ফেলেছে কিউ স্টার।
সাধারণ ক্যালকুলেটরও হিসেব করতে পারে। তবে, তার কার্যক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। অন্যদিকে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স শুধু অঙ্ক কষা নয়, নিজে নিজেই সেই অঙ্ক করা শিখে নিতে এবং বুঝতে পারে।
অঙ্ক করার ক্ষমতা তৈরি হওয়া র অর্থ, মানুষের মতো এআই-এর আরও বেশি যুক্তি সাজানোর ক্ষমতা তৈরি হবে। ফলে, তাকে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রয়োগ করা যাবে। কিউ স্টারের ভবিষ্যত সাফল্য নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে এই কিউ স্টার নিয়েই গবেষকদের মনে জমেছে আশঙ্কার মেঘ। বোর্ডকে পাঠানো চিঠিতে বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগগুলি যাচাই না করেই কিউ স্টারের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর তা সার্বিকভাবে মানব সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক।
আরও পড়ুন-চিনা হস্তক্ষেপের বিরোধিতা, রাজতন্ত্র ফেরাতে বিক্ষোভ নেপালে