সীমাহীন নির্লজ্জতা বিজেপি (BJP India) এবং তার নেতাদের অঙ্গের ভূষণ। বিজেপি এবং দুর্নীতি সমার্থক। পশ্চিমবাংলার বিজেপি আবার এককাঠি উপরে। তাদের লজ্জার বালাই নেই। এক বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে দলটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তারপর হতাশ কর্মীরা পালাবার পথ পাচ্ছে না। সাংসদ-বিধায়কেরা দল পাল্টাবার সুযোগ খুঁজছে। ইতিমধ্যে অনেকে তা করেও ফেলেছে। বিপথগামী হয়েছিলেন, এখন ‘ঘর ওয়াপসি’ পর্ব। অনুশোচনায় ভুল শুধরে নেওয়ার স্বাভাবিক প্রয়াস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন, দরজা খুলে দিলে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে।
বিরোধী দলনেতার কীর্তি আরও চমৎকার! তিনি বিধানসভার মধ্যে না বসে বাইরের সিঁড়িতে বসতে পটু। কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য না রেখে অশ্লীল খিস্তি-খেউড় করাকে নিজের কাজ বলে মনে করেছেন। আর আমাদের সবার দুর্ভাগ্য এ-রাজ্যের রাজ্যপাল তাঁর আবাসটিকে দলীয় অফিস তথা বাড়ির বৈঠকখানাতে পরিণত করেছেন। রাজ্যপাল মহোদয় এই বিরোধী নেতার দুষ্কর্মে সম্যক সম্মতি দিচ্ছেন। দিয়েই চলেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের বদান্যতায় বিরোধী দলনেতা আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি হয়েও পার পেয়ে যাচ্ছেন। বৈদ্যুতিন প্রচারমাধ্যমে সরাসরি উৎকোচ গ্রহণ করার দৃশ্য বঙ্গবাসী আজও ভোলেননি। কিন্তু তাঁকে কেন্দ্রীয় সংস্থায় ডাকছে না। কারণ তিনি বিজেপির নেতা। অন্য কেউ হলে, পান থেকে চুন খসতে দিচ্ছে না সিবিআই বা ইডি। কোনও নেতা যদি বিজেপির বিরুদ্ধে জোরদার বক্তব্য রাখে ও আন্দোলন করে তাহলে তার পরিবার নিয়ে টানাটানি করছে সিবিআই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। তিনি যখন ত্রিপুরায় ভোটপ্রচারে ব্যস্ত তখন সামান্য সময়ের নোটিশে তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিবিআই ডেকেছে। মাথা নত করেননি তিনি। সারা দেশ দেখেছে আড়াই বছরের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে মাথা উঁচু করে শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই-এর সামনে গেছেন এবং মাথা উঁচু করেই বেরিয়ে এসেছেন।
সুদীপ্ত সেন, সারদা গোষ্ঠীর কর্মকর্তা (এখন জেলে আছেন) কোর্ট চত্বরে ক্যামেরার সামনে বলেছেন শুভেন্দু অধিকারীকে তিনি টাকা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন সময়ে ব্ল্যাকমেল করে ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে।
এতবড় অভিযোগ করার পরও না সিবিআই, না ইডি— কেউ টুঁ শব্দ করেনি। কারণ, পেগাস্যাস অধিকারী এখন বিজেপির নেতা। বিজেপির নিধিরাম সর্দার। কিছু প্রচারমাধ্যমের দৌলতে দেশবাসীকে মুখ দেখিয়ে নেতাগিরি করছেন। তাঁর নাকি সাতখুন মাফ!
আরও পড়ুন: দেবী কালী নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য
আদালতের বিচারে নিয়োগ-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা। সেখানেও মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ বা মালদহ বা উত্তর দিনাজপুর জেলার বেশ কিছুজনের নাম আছে। মেদিনীপুরের সাংসদদের বহু আত্মীয়স্বজন ও তাঁদের দেহরক্ষীদের নাম আছে। আদালতের রায়ে বাতিল হয়নি এমন তালিকাতেও এই সব এলাকার বহুজনের নাম আছে। এঁদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে কোন দেবতাকে ফুল দিয়ে তাঁরা এই চাকরি পেয়েছেন। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, প্রায় প্রত্যেকে একটি নামই করবেন— তিনি এ-রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
দুর্নীতির পাহাড়ে অবস্থান করলেও তাঁকে ছেড়ে রাখছে সিবিআই। ইডি তার শান্তিকুঞ্জের কড়া নাড়েনি। শান্তি যাতে ভঙ্গ না হয় সে-কারণে বিজেপির (BJP India) বর্ম গায়ে দিয়ে আছেন। কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর আশীর্বাদ নিয়ে তিনি সিবিআই বা ইডিকে ঠেকিয়ে রেখেছেন। আজ সবাই বুঝতে পেরেছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বহু কজের দায়িত্ব ও সুযোগ দেবার পরেও তিনি কেন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি জানতেন তাঁর দুর্নীতি-সহ সমস্ত অপকর্ম একদিন ফাঁস হয়ে যাবে। নিজের অপকর্ম ঢাকতে, শাস্তির খাঁড়া থেকে বাঁচতে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজকে পাহারা দিচ্ছে। বিজেপির প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্লেদাক্ত মুখটি বেরিয়ে পড়েছে। অবিলম্বে তাঁকে সিবিআই-এর হেফাজতে নেওয়া দরকার। বাংলার মানুষের এটাই দাবি যে, অবিলম্বে শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করা হোক।
প্রায় শুভেন্দু অধিকারীর দোসর হেমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি এখন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেবার সংকল্প করে, সবাইকে পিছনে ফেলে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সাম্প্রদায়িক তাস খেলতে ওস্তাদ। হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করে রাজ্য চালাচ্ছেন। দুর্নীতি নিয়ে যত কম বলা যায় তত ভাল। সারা আসামে প্রবল বন্যা। শিলচর একেবারে ডুবে গেছে। ৫ দিন পর মুখ্যমন্ত্রী অবাক হয়েছেন। কোথাও একফোঁটা ত্রাণ নেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে কর্তব্য সেরেছেন।
ক’দিন আগেও তিনি ব্যস্ত ছিলেন মহারাষ্ট্রের কতিপয় বিধায়কদের খেদমতগারিতে। বিজেপির (BJP India) উসকানিতে সেখানে উদ্ধব ঠাকরের সরকার ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছিল। সেখানকার বিধায়কেরা আসামে এসে পাঁচতারা হোটেলে থেকেছেন। নিরাপত্তার জন্য রাজ্য পুলিশ নামানো হয়েছে। কিন্তু বন্যার্তদের উদ্ধারে কোনও হেলদোল নেই হেমন্ত বিশ্বশর্মার।
আসলে এঁরা নিজেদের স্বার্থে যা খুশি তাই করতে পারেন। দুর্নীতি করে অর্থোপার্জন এঁদের কাছে ছেলেখেলা। কারণ তাঁরা জানেন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি তাঁদের বিরক্ত করবে না। কারণ কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর লম্বা হাত তাঁদের মাথার উপর আছে। কিন্তু মানুষ জাগছে। কড়ায়-গন্ডায় তারা বুঝে নেবে সব হিসাব।
২০২৪ সেই হিসাব বুঝে নেওয়ার ক্রান্তিকাল।