প্রতিবেদন : নরেন্দ্র মোদির আক্ষেপ, তাঁর সরকারের সব কাজকেই নাকি বিরোধীরা রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে! যদিও দেশের মানুষ দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে উঠতে পারছে না, মোদি সরকার ঠিক কোন ভাল কাজটা করেছে। নোট বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশ কালোটাকা মুক্ত হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানই বলছে, কালোটাকা মুক্ত হওয়া দূরের কথা, বরং তা বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। পাশাপাশি দেশের আর্থিক পরিকাঠামোর উপর চরম আঘাত হেনেছে নোটবন্দি। একইভাবে কৃষকদের ভাল করার নমুনাও দেশবাসী দেখেছে। এমন তিন কৃষি আইন তৈরি করেছিলেন মোদি যে, কৃষকদের প্রবল আন্দোলনের চাপেই তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। তথাকথিত ভাল করার গিমিক দেখাতে মোদি সরকারের সর্বশেষ সংযোজন অগ্নিপথ প্রকল্প। যা শুরু থেকেই রাজ্যে রাজ্যে প্রবল সমালোচনার মুখে। মোদি সরকারের এই প্রকল্পকে আদৌ ভাল বলে মনে করছে না দেশের যুব সম্প্রদায়। যে কারণে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের চাপে মোদি সরকার এখন ঘোষণা করেছে, অগ্নিবীরদের (Agniveer Recruitment) ১০ শতাংশকে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু যুব সম্প্রদায় বুঝে গিয়েছে মোদি সরকার ফের এক নতুন ভাঁওতা দিচ্ছে। কারণ ইতিপূর্বে দেওয়া সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিগুলির বাস্তবে কী হাল হয়েছে, তা দেখা যাচ্ছে সরকারি পরিসংখ্যানেই।
মোদি সরকার যে এভাবেই ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিতে সিদ্ধহস্ত তা কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যেই স্পষ্ট। দেশের সেনাবাহিনীর তিন শাখার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য ইতিমধ্যেই ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগে গ্রুপ সি-তে ১০ শতাংশ এবং গ্রুপ ডি-তে ২০ শতাংশ আসন প্রাক্তন সেনাদের জন্য সংরক্ষিত। কেন্দ্রীয় সরকারের ৭৭টি বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ৩৪টি ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণ মেলে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই ৩৪টি বিভাগে ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৭০৫ জন কর্মীর মধ্যে প্রাক্তন সেনা রয়েছেন মাত্র ১৩৯৭৬ জন। অর্থাৎ মোট নিযুক্ত কর্মীর মধ্যে প্রাক্তন সেনার সংখ্যা মাত্র ১.২৯ শতাংশ। গ্রুপ ডি- তে প্রাক্তন সেনা কর্মীর সংখ্যা মাত্র ৮৬৪২ জন। যা মোট কর্মীর ২.৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীতে সহকারী কমান্ড্যান্ট স্তর পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে প্রাক্তন সেনাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা আছে। তবে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রুপ সি-তে প্রাক্তন সেনার সংখ্যা ছিল মাত্র ০.৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রুপ এ ও বি-তে যথাক্রমে ২.২০ শতাংশ ও ০.৮৭ শতাংশ প্রাক্তন সেনা কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানই বলছে, ১৭০টি সরকারি সংস্থার মধ্যে ৯৪টি ক্ষেত্রে গ্রুপ সি-তে মাত্র ১.৫ শতাংশ প্রাক্তন সেনা। অন্যদিকে গ্রুপ ডি-তে অবসরপ্রাপ্ত সেনার সংখ্যা মাত্র ০.৩ শতাংশ। তথ্যই দেখিয়ে দিচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি চালু থাকলেও বাস্তবে তার কী হাল! কোনও কোনও ক্ষেত্রে ০.৫০ শতাংশেরও কম অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী কাজ করছেন। একইভাবে অগ্নিবীরদের (Agniveer Recruitment) জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতি অচিরেই ধাপ্পাবাজিতে পরিণত হবে।
আরও পড়ুন: মোদির অস্বস্তি বাড়ালেন সত্যপাল, অগ্নিপথ প্রত্যাহারের দাবি মেঘালয় রাজ্যপালের