বাঘের মুখে ইচ্ছে করে পড়তে চায় এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। তাই প্রথম থেকেই শোনা যাচ্ছিল, ভবানীপুর উপনির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না বিজেপি। কে আর ইচ্ছে করে নিশ্চিত পরাজয়কে সঙ্গী করতে চায়! কিন্তু প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রার্থী না দিলে আবার দলের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। তাই তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনজীবী যুবনেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালকে ঠেলে দিয়েছে পদ্ম শিবির। ভবানীপুরে মুখরক্ষায় অবাঙালি ভোটের যদি কিছুটা টানা যায়, তাই প্রিয়াঙ্কাকে দাঁড় করানো।
আরও পড়ুন- মন্ত্রী-বিধায়কদের নামে চার্জশিট দেওয়ায় “আইনি গলদ”, এবার স্পিকারের সম্মুখীন সিবিআই-ইডি
প্রিয়াঙ্কার অতীত রেকর্ড কী?
আগে একবার কলকাতা পুরভোটে দাঁড়িয়ে হেরে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এন্টালি কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রতীকে ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন।। নিজের বিধানসভা এলাকায় একটি অভিজাত আবাসনের বিরাট ফ্ল্যাটে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রীতিমতো কর্পোরেট ধাঁচে “ওয়ার রুম” খুলেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। পেশাদার লোকেদের দিয়ে আইটি সেল বানিয়ে ছিলেন শুধুমাত্র এন্টালি বিধানসভার জন্য। ভোটের অনেক আগে থেকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ক্যাডারদের সর্বক্ষণ থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন তৃণমূলের স্বর্ণকমল সাহা। ২০১১ থেকে টানা তিনবার তৃণমূলের প্রতীকে জিতে আসা বিধায়ক। তাঁকে হারানোর জন্য সর্বশক্তি লাগিয়ে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর দল। কিন্তু ২ মে গণনার শেষে এন্টালির ছবিটা ছিল এরকম। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করেও ৫৮ হাজার ২৫৭ ভোটে হেরে ছিলেন। যা কে বলে “গো-হারা”!
স্বর্ণকমল সাহার প্রাপ্ত ভোট ছিল- ১,০১,৭০৯ (৬৫%)
প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের প্রাপ্ত ভোট ছিল- ৪৩,৪৫২ (২৮%)
এই অবস্থায় প্রিয়াঙ্কা এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী। তৃণমূল চাইছে ৩ অক্টোবরে ফলাফল ঘোষণার পর ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান যাতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। রাজনৈতিক মহল বলছে, এন্টালির পরাজিত বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কার ভবানীপুর উপনির্বাচনে হারের ব্যবধান বিধানসভায় হারের অঙ্কের চেয়ে বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন- এজেন্সি নামিয়ে জননেত্রীকে আটকানো যায়নি, যাবে না
এমন প্রার্থীকে নিয়ে বিজেপির নিচুতলায় বেশ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার একাধিক পদাধিকারীর বক্তব্য, জেলার যোগ্য বাঙালি প্রার্থী ছিল। এভাবে বাইরে থেকে অবাঙালি প্রার্থী ও পর্যবেক্ষক চাপিয়ে দেওয়া হল, যা যুক্তিহীন। শুধু প্রার্থী নন, ভবানীপুর উপনির্বাচনে বিজেপির পক্ষে পর্যবেক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পেয়েছেন আরেক অবাঙালি। তিনি বারাকপুরের বাহুবলী সাংসদ অর্জুন সিং। এই বিষয়টি নিয়েও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ভবানীপুর তথা দক্ষিণ কলকাতার নিচু তোলার কর্মীরা।