দেশে বকেয়া করের ৯৭.৩৫% আর আদায় করা সম্ভব নয়!

Must read

প্রতিবেদন: আয়কর দফতরের ব্যর্থতার নমুনা উঠে এল সিএজি রিপোর্টে। জানা গিয়েছে, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে প্রত্যক্ষ করদাতাদের থেকে দাবি করা বকেয়া করের ৯৭.৩৫ (TAX) শতাংশ আদায় করা আর সম্ভব নয় বলে চিহ্নিত করেছে আয়কর দফতর। তবে এটি শুধু একটি বছরেই নয়, বকেয়া কর আদায়ের এই চরম ব্যর্থতা চলছে বছরের পর বছর ধরে। সংসদে পেশ করা ২০২৪ সালের ১৪তম সিএজি প্রতিবেদনে এই ব্যর্থতার বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের (সিএজি)-র ১৪তম প্রতিবেদন পেশ করেছিলেন। ২৩০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে কর আদায়ের ব্যর্থতার নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। নভেম্বর ২০২০ থেকে জানুয়ারি ২০২৩ এর মধ্যে, সিএজি দুই ধাপে আয়কর বিভাগের কার্যকারিতা সংক্রান্ত একটি নিরীক্ষা পরিচালনা করে। এতে মূলত ব্যক্তি ও কর্পোরেট করদাতাদের থেকে আয়কর দাবি আদায়, রেকর্ড সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের বিষয়গুলি পরীক্ষা করা হয় এবং সংবিধানের ১৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন- কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী, বানারহাট হাসপাতাল উন্নয়নে ৩০ কোটি বরাদ্দ

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে আয়কর বিভাগের কার্যকারিতা নিরীক্ষার সময় সিএজি দেখেছিল, সেসময় মোট বকেয়া করের (TAX) ৮৪.৩% অনাদায়ী বলে চিহ্নিত হয়েছিল। ২০২৪ সালের সিএজি প্রতিবেদনের সারণি ৩.১ অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয়কর ও কর্পোরেট কর বাবদ মোট প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ ছিল ৮.৫ লাখ কোটি টাকা, কিন্তু মোট বকেয়া করের পরিমাণ ১০.৪৪ লাখ কোটি টাকা বলে দাবি করা হয়। এর মধ্যে ‘আদায় করা কঠিন’ বলে চিহ্নিত করের পরিমাণ ১০.৩ লাখ কোটি টাকা, অর্থ্যাৎ ৯৮.৫৭% বকেয়া আদায় করা যায়নি। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ ছিল ১০,০২,৭৩৮ কোটি টাকা। বকেয়া কর দাবি ছিল ১১,১৪,১৮২ কোটি টাকা, এর মধ্যে ‘আদায় করা কঠিন’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল ১০,৯৪,০২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ৯৮.১৯ শতাংশ দাবিকৃত কর আদায় করা সম্ভব হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.১২ লাখ কোটি টাকা হলেও বকেয়া করের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়ে ১৯.৩৫ লাখ কোটি টাকা হয়। ২০১৬-১৭ সালে ‘আদায় করা কঠিন’ বলে চিহ্নিত কর ছিল ১০.৩ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ সালে ৮৩% বৃদ্ধি পেয়ে ১৮.৮৪ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। সিএজি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আয়কর বিভাগ বকেয়া কর দাবি করা ৯৭%- এর বেশি অংশকেই পুনরুদ্ধার করা কঠিন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। বকেয়া অনাদায়ের অন্যতম একটি কারণ হল করদাতা শনাক্ত করতে না পারা। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিকল্পনায় শনাক্ত করা যায় না এমন করদাতাদের ক্ষেত্রে কর পুনরুদ্ধারের জন্য প্রতি বছর ৫% লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। তবে সিএজি বলেছে, এই বিভাগে বকেয়া করের দাবি ২০১৭-১৮ সালে ৮৫,৩৩৭ কোটি টাকা থেকে ২০১৯-২০ সালে দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ১.৭৮ লাখ কোটি টাকা হয়েছে এবং ২০২১-২২ সালে প্রায় তিনগুণ বেড়ে ২.২৬ লাখ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। কর ব্যবস্থাপনায় আয়কর বিভাগের কার্যকারিতা ও দুর্বলতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে সিএজি। রিপোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, আয়কর বিভাগের কাছে কি আদৌ যথাযথ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা বকেয়া কর আদায়ের পর কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করতে পারে?

Latest article