সুনীতা সিং, বর্ধমান: কেউ জেলা পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর, কেউ কনস্টেবল। তবে এঁদের সকলের এখানে পরিচয় একটাই, তাঁরা শিক্ষক, সমাজ গড়ার কারিগর। তাঁরাই এখানে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানের পাশাপাশি নাচ-গান-আবৃত্তির শিক্ষাগুরু। আবার আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর প্রশিক্ষকও। বর্ধমান পুলিশ লাইন অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারশোর বেশি পড়ুয়াকে পুঁথিগত শিক্ষার বাইরেও মনুষ্যত্বের পাঠ পড়াচ্ছেন এই স্কুলের পুলিশ শিক্ষকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যাঁরা কড়া মনোভাব নিয়ে ময়দানে নামেন, তাঁরাই এখানে কোমল মনের পরিচয় দিয়ে পড়ুয়াদের শিক্ষিত করে মহিরুহে পরিণত করার কাজে ব্রতী।
আরও পড়ুন-নারী-সুরক্ষায় রাজ্য বিধানসভায় কঠোর অপরাজিতা বিল পাশের পরই ধর্ষণে ২২ বছর কারাদণ্ড দিল আদালত
দ্বৈত ভূমিকায় সমস্যা থাকলেও হাসিমুখেই পুলিশ এখানে পড়ুয়াদের বন্ধু। গুরুগম্ভীর পরিবেশ নয়, মনের আনন্দে পড়ুয়ারা এখানে শিখছে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস থেকে জীবনশৈলী, নাচ-গান, কর্মশিক্ষা ও কম্পিউটার। শিখছে আত্মরক্ষার পাঠ ও অনুশাসনও। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বর্ধমান পুলিশলাইনস ফ্রি স্কুলে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৪০২। শিক্ষক-শিক্ষিকা ১২ জনই আদতে পুলিশকর্মী। পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলানোর পরেও এখানে পড়ুয়াদের পাঠ দেন সকলেই। স্কুলশিক্ষিকা লেডি কনস্টেবল সায়নী শীল ও মামণি বিশ্বাস এবং সাব ইনস্পেক্টর শক্তিসুধা দেবনাথরা জানান, একই সঙ্গে দুটো কাজ করতে পেরে ভালই লাগে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার অনুভূতিটাই আলাদা। তাছাড়া একেবারে ছোট থেকে কোনটা ভাল কোনটা মন্দ, কোনটা উচিত কোনটা অনুচিত, এইসব বাস্তবমুখী শিক্ষায় এদের শিক্ষিত করতে পারছি। ফলে ভবিষ্যতে এরা নিজেরা তো বটেই, এদের মাধ্যমে আরও অনেকে উপযুক্ত শিক্ষা অর্জন করবে। যে শিক্ষা অপরাধমূলক কাজ থেকে সরিয়ে রাখবে।একই সঙ্গে আত্মরক্ষার পাঠ নিজেদের রক্ষা করবে। অসুস্থ সমাজকে কিছুটা হলেও সুস্থতার পথে নিয়ে যেতে বিশল্যকরণীর ভূমিকা পালন করছে জেলার এই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তার শিক্ষক তথা পুলিশকর্মীরা। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানান, প্রায় ৩২ বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে চলে আসছে এই স্কুল। এখানে ১০ কিমি দূরের পড়ুয়ারাও আসে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, একজন পড়ুয়াকে সার্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার উপরই বেশি নজর দেওয়া হয়। নিয়ম করে শেখানো হয় অনুশাসন ও আত্মরক্ষার পাঠ। দেশবিদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে তাদের যতটা সম্ভব অবগত করা হয় ও সেই বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করারও সুযোগ দেওয়া হয়।