জগাই মাধাই গদাই, সবাইকে গোটাতে হল লাটাই

হাত হাতুড়ি ধরল। পদ্মে কাস্তেতে হল গোপন আঁতাঁত। দিকে দিকে শুরু হয় নিন্দাবাদের বৃন্দগান। গোদি মিডিয়া খুল্লম খুল্লা জোড়া ফুলের বিরুদ্ধে মিথ্যে কুৎসা ছড়ানো শুরু করে দিল। তাতেও কিছু হওয়ার নেই বুঝে আসরে নামানো হল এক্সিট পোল নামক এক বিচিত্র মিথ্যাচার। তাতেও কি উদ্দেশ্য পূরণ হল? সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. শিবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

Must read

এক্সিট পোলকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং কিছু স্বার্থান্বেষী ও ধান্দাবাজ সংবাদমাধ্যমের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে। অবশ্য বুথ-ফেরত সমীক্ষা অধিকাংশ সময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। একটি ধান্দাবাজ চ্যানেল তো ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটকে প্রায় ক্ষমতায় এনে দিয়েছিল। ওই একই ‘আনন্দময়’ চ্যানেলটি ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে ফেলেছিল। অথচ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টি আসন পেতে পারে, সেটা বুঝতে পারেনি। হয়ত সেই সময় দক্ষিণা কম এসেছিল (মার্জনা করবেন। এটা এই কলমচির কষ্টকল্পিত অনুমান মাত্র)। ১ জুন লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফা শেষ হওয়ার পর পরই সন্ধ্যাবেলা ওই ‘আনন্দময়’ চ্যানেলটির কী উল্লাস! আনন্দ আর ধরে রাখতে পারছে না। সব সমীক্ষায় দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস পিছিয়ে, বিজেপি অনেক এগিয়ে এবং সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি কম করে ৩৫০টি আসন পাবে পাবেই। আর ওই চ্যানেলটি পোষিত বুদ্ধিজীবীরা (তাঁদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুলীন ব্রাহ্মণ চক্রবর্তীবাবু আছেন, দু’জন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা আছেন) তৃণমূল কংগ্রেসের এই রাজ্যে বিপর্যয় হচ্ছেই ধরে নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। অধ্যাপক সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সামান্য কিছু বুদ্ধিজীবী অন্য মত বলিষ্ঠভাবে প্রকাশের চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাঁরা বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ। উদ্দেশ্য হল, জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা এবং দলীয় কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করা, যাতে গণনার দিন কর্মীরা ভগ্নহৃদয়ে গণনাকেন্দ্রে উপস্থিত হন। এই ধরনের নির্লজ্জ চ্যানেল দেখিনি।

আরও পড়ুন-মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর বাংলোর কাছে সরকারি ভবনে আগুন

রাজ্য সরকারের বিবিধ সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রতিক্রিয়া বিরোধী দলগুলি বুঝতে পারেনি। বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। গ্রামাঞ্চলে গৃহবধূ মা বোনদের (যাঁরা চাকরি করেন না) উপর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের প্রভাবের গভীরতা উপলব্ধি করার ক্ষমতা কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি প্রমুখ কোনও দলের ছিল না। পরন্তু বিজেপি নেতা-নেত্রীদের অপরিণত ও পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা গ্রামাঞ্চলের মা-বোনদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। একজন বিজেপি নেত্রী সদর্পে ঘোষণা করলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই মন্তব্যের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আশঙ্কা করে শুভেন্দু অধিকারী তাড়াতাড়ি ঘোষণা করলেন, বিজেপি ক্ষমতাসীন হলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দ্বিগুণ করা হবে। এই প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। রাজ্য বিজেপি নেতারা সাধারণ মানুষের অনুভূতি অনুভব করতে পারেননি। তাঁরা বারবার দম্ভের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, এনআরসি হবেই হবে। অনিবার্য ফলস্বরূপ অসমের তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নয়, সংখ্যাগুরু হিন্দুরাও ভীত ও চিন্তিত হয়ে পড়ল। রাজ্য নেতৃত্ব বোঝাতে সক্ষম হননি, যাঁরা ভোট দিচ্ছেন এবং যাদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাঁরা কেন নতুন করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন! অপরদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট কথা, তিনি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করতে দেবেন না এবং তাঁর সতর্কবাণী, যাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন, তাঁরা নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেলবেন— জনসাধারণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে।
(এরপর আগামীকাল)

Latest article