দেবব্রত বাগ, ঝাড়গ্রাম: যত কাণ্ড বেলপাহাড়িতে। শুক্রবার সন্ধে না নামতেই বাসিন্দারা যে-যার ঘরে খিল দিয়েছে। রাস্তাঘাট শুনশান। যারা শহরে গিয়েছিল তাদের ফিরতে মানা করা হয়েছে। যারা জঙ্গলে পাতা কুড়াতে, কাঠ কাটতে গিয়েছিল তারাও দুদ্দাড় করে ফিরে এসেছে। কারণ মাঝেমধ্যে যে হুঙ্কার কানে আসছে তাতে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়। এ তো আর যে-সে হুঙ্কার নয়। যমুনা এসেছে যে গ্রামে! সেই সুদূর ওড়িশা থেকে। সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের বাসিন্দা যমুনার মন টেকেনি সেখানে। তাই এই শীতের বিকেলে হাজির ঝাড়গ্রামের অদূরে বেলপাহাড়িতে। আর তাতেই বেলপাহাড়ি বিভাগ বোবা হয়ে গিয়েছে। শীত-বিকেলে ওরকম একটা আস্ত বাঘের ডাক শুনলে কেউ কি ঠিক থাকতে পারে! অগত্যা খবর গিয়েছে বন দফতরে। মাইকিং করে বন দফতরের সতর্কতামূলক প্রচার চলছে।
আরও পড়ুন-জয়ী তৃণমূল
ঘটনাস্থলে ঘাঁটি গেড়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। এর আগে এসেছিল বাঘিনি জিনাত। এবার বাঘিনি যমুনা। সে এই মুহূর্তে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত শিমুলপল গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা চিন্তায় ফেলেছে বনকর্তাদের। আসলে বাঘিনি জিনাত এবং বাঘিনি যমুনা উভয়কেই আনা হয়েছে মহারাষ্ট্রের তাডবা অন্ধেরি টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে। বাঘিনি যমুনা ওড়িশার সিমলিপালের থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কুলডিহা ওয়াইল্ড সেঞ্চুরির দিকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে বেরিয়ে যায়। বাঘিনি যমুনাকে আনা হয়েছিল ৯ নভেম্বর। ছাড়া হয় জনাবিলের কোর এরিয়ায়। ওড়িশার সিমলিপাল বাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের ডিরেক্টর প্রকাশ চাঁদ গোগিনানি ব্যাঘ্রপ্রকল্প থেকে বাঘিনি যমুনা বেরোনোর কথা স্বীকার করলেও তার গতিবিধির কথা বলতে নারাজ। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী চাকুলিয়া বনবিভাগের রাজাবাসার জঙ্গলে বাঘিনি জিনাতকে এখনও ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বন বিভাগের আধিকারিকরা ধরতে পারেনি। এবার বাংলায় ফের বাঘ। তবে এটি বাঘিনি জিনাত নয়, এই বাঘিনি যমুনা। ওড়িশার সিমলিপালের টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে এবার বাংলার বেলপাহাড়ি থানার শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি থানার বাংলা, ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী গোটাশিলা পাহাড় লাগোয়া কাটাচুয়া জঙ্গলে এই মুহূর্তে অবস্থান করছে বাঘিনি যমুনা, যা লোকালয় থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। বেলপাহাড়ি থানার শিমুলপাল অঞ্চলের কাটাচুয়া, জোড়মা, বিরমাদল, শাখাভাঙা, জাম্বনি, মাছকাঁদনা এলাকার বাসিন্দাদের শুক্রবার সতর্ক করা হয়েছে। বন দফতর এবং পুলিশের তরফ থেকে গ্রামবাসীদের সতর্ক করে শুক্রবার দুপুরে মাইকিং করে প্রচার করা হয়। গ্রামবাসীদের জঙ্গলে যেতে যেমন নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি বাড়ির বাইরে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ঘাঘরা, পাকুড়িয়া এলাকার বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামবাসীদের শুক্রবার জঙ্গলে শুকনো কাঠ, পাতা কুড়াতে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনদফতর। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের পক্ষ থেকে বাঘিনি যমুনাকে ধরার জন্য এলালয় খাঁচা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ড্রোন উড়িয়ে বাঘিনি যমুনার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে বন দফতর। ওই বাঘিনিকে ধরার জন্য সুন্দরবন থেকে এক্সপার্ট নিয়ে আসা হয়েছে। ওড়িশা রিজার্ভ ফরেস্টের এসটিআর টিমও পৌঁছেছে এলাকায়। বাংলা ও ওড়িশার বনদফতরের পক্ষ থেকে যৌথভাবে নজরদারি শুরু করা হয়েছে। তবে বাঘিনি যমুনা বেলপাহাড়ি থানার শিমুলপাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রবেশ করায় ওই এলাকার গ্রামবাসীরা বাঘিনি যামুনার আতঙ্কে যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ঘটনাস্থলে ওড়িশা ও বাংলার বন বিভাগের আধিকারিকদের পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের আধিকারিকরা উপস্থিত রয়েছেন। পুলিশ ওই এলাকা থেকে ঘিরে রেখেছে। পর্যটকদের ওই এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পর্যটনের ভরা মরশুমে বেলপাহাড়ি থানা এলাকায় বাঘিনি যমুনা চলে আসায় রীতিমতো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন-যুব তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড
যমুনাকে ধরার জন্য শুক্রবার সারা রাত ধরে বন দফতরের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানো হবে। তাই বাঘিনিকে টোপ দিয়ে খাঁচাবন্দি করার জন্য একটি খাঁচা নিয়ে আসা হয়েছে, সেই সঙ্গে আনা হয়েছে দুটি মোষশাবক ও একটি ছাগল। বাঘিনিকে ধরার জন্য ঘুমপাড়ানি বন্দুক হাতে মোতায়েন রয়েছে বনদফতরের কর্মীরা। ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের ডিএফও উমর ইমাম জানান, বেলপাহাড়ি থানার ওই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের জঙ্গল এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গ্রামবাসীদের যে কোনও প্রয়োজন হলে রেঞ্জার ও বিট অফিসারকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় ওড়িশা ও বাংলার বন বিভাগের আধিকারিকরা রয়েছেন, রয়েছেন ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা, শুক্রবার সারারাত নজরদারি চালানো হবে বলে তিনি জানান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন বাঘ ধরার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিছুই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।