তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য: আগত দিনগুলো বাংলার ইতিহাসে গর্বের দিনগুলোর তালিকায় অন্যতম হয়ে থাকতে চলেছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর পারদর্শী নেতৃত্বে ও রাজ্য সরকারের সক্রিয় প্রচেষ্টায় বাংলার মাটিতে নির্মিত হয়েছে মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের সুবিশাল ও জাঁকজমকপূর্ণ মন্দির। মন্দিরটি একেধারে যেমন ধর্মীয় অনুভূতির কেন্দ্র হিসেবে প্রধান ক্ষেত্র হতে চলেছে,পাশাপাশি এটি বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং ট্যুরিজম শিল্পের এক জীবন্ত নিদর্শন।
আরও পড়ুন-বড়বাজারে হোটেলে আগুন, উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে মেয়র
প্রায় ২৪ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দিরের উচ্চতা ৪৫ ফুট। মন্দিরটি গঠনের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা মাত্র ৩৬ মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ করা হয়েছে। নির্মাণকাজে ৩,০০০ জনেরও বেশি কর্মী প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বাংলার সাধারণ শ্রমিক থেকে দক্ষ স্থপতি,সবার সম্মিলিত পরিশ্রমের ফসল এই মন্দির।মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে গর্ভগৃহ, জগমোহন, নাটমন্দির এবং ভোগমণ্ডপ, যা প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই নির্মিত হয়েছে। মন্দির চত্বরে তৈরি হয়েছে ৪টি বিশাল প্রাঙ্গণ, যেখানে ভক্তরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে পারবেন। পুরো মন্দির চত্বর সুসজ্জিত হয়েছে পৌরাণিক ছন্দ,প্রাচীন নকশা এবং পাথরের কারুকার্য দ্বারা, যা বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে গোটা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে। বাংলা হয়ে উঠবে বিশ্বসেরা।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন ছিল, বাংলার মানুষ নিজ ভূমিতেই মহাপ্রভু জগন্নাথের দর্শন লাভ করবে এবং এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজ্য সরকার যে উদারতা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, তা বাংলার তথা বাঙালির কাছে গর্বের বিষয়। রাজ্য সরকারের বদান্যতায় এই মন্দির শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, বাংলার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশেরও এক নতুন মাইলস্টোন হয়ে উঠবে। এছাড়াও স্থানীয় পর্যটন শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান হোক বা হস্তশিল্প, হোটেল, পরিবহন-সহ সমগ্র স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করবে। মন্দিরকে কেন্দ্র করে বাংলায় জগন্নাথভক্তদের একটি আন্তর্জাতিক স্তরের মিলনস্থলের কেন্দ্র গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতে এখানে বার্ষিক রথযাত্রা, ধর্মীয় উৎসব, সাংস্কৃতিক র্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে মন্দিরটি বিশ্ব মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গন্তব্যে পরিণত হবে, প্রতিটি বাঙালির এটাই একমাত্র আশা এখন। এই মন্দির প্রমাণ করে, সংকল্প থাকলে বাংলার মাটি, বাংলার শ্রমিক, বাংলার সংস্কৃতি বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই মন্দির শুধু ইট-পাথরের স্থাপনা নয়, এটি বাংলার স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের ফসল।
এই মন্দির শুধু এক ধর্মীয় স্থাপত্য নয়, এটি বাংলার আত্মার কথা। এটি প্রমাণ করে, যদি নেতৃত্ব সঠিক হয়, যদি সংকল্প অটুট হয়, তবে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত আর বাংলার মানুষের পরিশ্রম আজ ইতিহাস রচনা করেছে। এই মন্দির বাংলাকে যেমন আধ্যাত্মিক গৌরবে ভাসিয়ে তুলবে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য থাকবে নতুন কিছু অনুপ্রেরণা। আকাশে তাই ধ্বনিত হচ্ছে, “আমরা পারি, বাংলা পারে, বাংলা জিতেছে!” মহাপ্রভুর আবির্ভাবে এক নতুন সূর্যোদয় ঘটেছে। এই মন্দির শুধু ধর্মের নয়, এটি বাংলার সাহস, শক্তি আর সংস্কৃতির গৌরবগাথা। এই পবিত্র ভূমি থেকে উঠে আসবে ঐক্যের আহ্বান, ভক্তির দীপ্তি এবং বাংলার নতুন জয়যাত্রার বার্তা। আসুন, সকলে এই ঐতিহাসিক অর্জনকে সম্মান জানাই এবং বাংলাকে আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।